পুনর্বীমা ভবিষ্যতে প্রস্তুত হতে পারে যেভাবে

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ‘পুনর্বীমার ভবিষ্যৎ: প্রতিবদ্ধকতা, সুযোগ ও প্রযুক্তির প্রভাব’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া । গবেষণাটিতে বিশ্বজুড়ে পুনর্বীমাকরণ বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে পুনর্বীমা শিল্পের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।

গবেষণা প্রবন্ধটি এ বছর (ভলিউম নং ৬, ইস্যু নং ৩) (জানুয়ারি-মার্চ ২০১৯) প্রকাশিত হয়েছে। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডির পাঠকদের জন্য সেটি ভাষান্তর করেছেন পাপলু রহমান। এর আগে প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব-

পুনর্বীমা ভবিষ্যতে প্রস্তুত হতে পারে যেভাবে

পুনর্বীমাকারীদের নীতিমালার আন্ডাররাইটিংয়ের মান, মূল্য পলিসি সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যৌথভাবে কাজ করতে হবে। আগামী বাজারে ভারতীয় বীমা কেমন বৃদ্ধি পাবে তা নিশ্চিত করার জন্য স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পুনর্বীমাকারীরা মেকার হিসেবে কাজ করতে পারে। তারা প্রযুক্তিগত অবকাঠামো স্থাপন, নতুন পণ্য তৈরি, বাজার বণ্টন করতে পারে, যেন নতুন কোম্পানিগুলো কোনো বাধা বা ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়।

পুনর্বীমাকারীদের আন্ডাররাইটিংয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। বিশ্ব বাজারে পুনর্বীমাকারী আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

পুনর্বীমাকারীরা তাদের নিজস্ব ঝুঁকি বিশ্লেষণ ক্ষমতার মাধ্যমে প্রাথমিক বীমাকারীদের সহায়তা করতে পারে। পুনর্বীমা একটি প্রতিভাসম্পন্ন ব্যবসা। মধ্যমানের বীমা কোম্পানগুলো স্বচ্ছল এবং ব্যয়ে দক্ষ। খরচ সঞ্চয়ে দক্ষতা ও আন্ডাররাইটিং ক্ষমতা সাফল্য নিয়ে আসে। নৈতিক আইন, প্রযুক্তির কার্যকারিতা, ডিজিটালভাবে সক্রিয় ও বিশ্লেষণমূলক অপারেটিং প্লাটফর্ম সত্যিকার অর্থে পুনর্বীমাখাতে আবশ্যক।

একবার যদি পুনর্বীমা কোম্পানি বাজারে প্রবেশ করে তাহলে কোম্পানিটির উচিত গ্রাহকের চাহিদা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বীমা ঝুঁকির হার কম (বিশেষ করে ভারতে)। বৈদেশিক কোম্পানিগুলো বাজারে প্রবেশ করলে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলা ও বীমা কাভারেজ বৃদ্ধি পাবে। ২০১৮ সালে কেরালা ও কোদাগু বন্যা বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য অনুস্মরণীয়। প্রাকৃতিক সেই বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় ছিল না।
দায় বীমা আগামী বাজারের গতিশীল ব্যবসা। টাটা, আইসিআইসিআই ব্যাংক ও ইনফোসিসের মতো কর্পোরেট বিনিয়োগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দায় বীমার প্রতিফলন। দায় বীমা কোনো কোম্পানির পরিচালক ও সিনিয়র অফিসারের তৈরি করা কোনও ত্রুটি বা ভুলের জন্য, পণ্য ও জনসাধারণের দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারে। বিতর্কিত ম্যাগি নুডলসের ঘটনা এখনও মানুষের মনে রয়েছে। এই ধরনের ব্যবসায়িক সমস্যার ক্ষেত্রে নতুন পণ্য বিকাশে বীমা ও পুনর্বীমা কোম্পানির জন্য বড় সুযোগ।

পুনর্বীমাকারীরা কেবল মূল্যের প্রতিযোগিতা করবে না, তাদের ক্লায়েন্টের কাছাকাছি থাকতে হবে এবং তাদের চাহিদা বুঝতে হবে। ঝুঁকি সম্পর্কে তাদের অন্তর্দৃষ্টি বিকশিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য, ফসল এবং মাইক্রো বীমা এমন এলাকায় চালু করতে হবে যা পুনর্বীমা কোম্পানির স্বার্থকে উদ্দীপিত করবে। নতুন কিছু উদ্ভাবন ও নতুন পণ্য উন্নয়নে বীমা অফার প্রদান করবে। পুনর্বীমাকারীরা উদ্ভাবনী ঝুঁকি স্থানান্তরের সমাধানের মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনতে পারে।

পুনর্বীমাকারীদের তাদের পণ্যগুলো অর্থনীতি ও জনসংখ্যার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার কারস, অটোনোমাস অটোমোবাইলস, ইন্টারনেট অব থিংস, রোবোটিকস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কভারগুলো বীমাকারীদের লিখতে হবে। পুনর্বীমাকারীদের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে হবে।
ডেটা চালিত, প্রযুক্তিভিত্তিক আন্ডাররাইটিং কর্মক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে। এটি পুনর্বীমাকারীদের কৌশলগত প্রযুক্তি সরবরাহ করার সুযোগ করে দেয়। প্রাথমিক বীমাকারীদের চলমান বৃদ্ধি পুনর্বীমাকারীদের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে।

উন্নত বাজারে বিপর্যয়মূলক ঘটনা ঘটলেও পুনর্বীমাকারী এবং সরকারের যৌথ সহযোগিতা ও কাঠামো উদ্ভাবনী সমাধান দিয়ে থাকে। যুক্তরাজ্য তেমনি ফ্লাড রি প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিশ্বজুড়ে সরকার দুর্যোগ অর্থায়নে পুনর্বীমাকারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে। সন্ত্রাসবাদ ও বন্যার ঝুঁকি পুনর্বীমা কোম্পানিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে। যার ফলে প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে।

পর্যাপ্ত ও নমনীয় মূল্য এখন অপরিহার্য হয়ে গেছে। পুনর্বীমাকারীদের আরও বীমাযোগ্য ঝুঁকি এবং বাজার অনুপ্রবেশের সুযোগ প্রসারিত করতে হবে। অতীতের অনিশ্চিত ঘটনাগুলো থেকে নতুন পণ্য ডিজাইন করা আবশ্যক। উদাহরণ- মহামারি কিংবা আবহাওয়া সম্পর্কিত ঝুঁকি বা সাইবার অপরাধের মতো নতুন হুমকি।
পুনর্বীমার যুথসই ব্যবসায়িক মডেল বাজার পরিবর্তন করা আবশ্যক। গ্রাহক ও ইনস্যুরটেকের ব্যাপারে পুনর্বীমাকারীদের অভ্যন্তরীণ জ্ঞান, সহযোগিতাপূর্ণ অংশিদারিত্ব থাকতে হবে। পুনর্বীমাকারীদের একত্রীকরণ ভবিষ্যতে একটি স্বতন্ত্র সম্ভাবনা। বীমাকারীরা অতিরিক্ত মূলধন অর্জন করতে পারে এবং লুকায়িত পুনর্বীমা কোম্পানিগুলোকে গঠন করতে পারে।

সম্প্রতি পুনর্বীমাখাতের উন্নয়ন

পুনর্বীমাকারীরা লাভযোগ্যতার চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। ৮০ শতাংশ পুনর্বীমা পলিসি নতুন। বীমার চাহিদা বাড়ায় পুনর্বীমা কোম্পানির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। বীমাখাত প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় বর্তমানে এ খাতে মেধাবী ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন। পুনর্বীমাকারীদের মান বাড়াতে শৃঙ্খলা ও বৈচিত্র আনতে হবে। তাই কিছু সংযোগের প্রয়োজন আছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ছে; ঝুঁকি মূল্যায়ন / অনুমানের জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন।

ব্লক চেইনের মতো নতুন প্রযুক্তি পুনর্বীমা ব্যবসার মডেলের গতি বাড়াবে। ব্লক চেইনের মাধ্যমে কোম্পানির লেনদেন প্রক্রিয়া গতিশীল হয়। নতুন প্লাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। ভবিষ্যত ঝুঁকি কভারের ক্ষেত্রে আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তন বড় নির্ধারক হবে।

পুনর্বীমা এখন এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দূরবর্তী কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। পুনর্বীমার গতিশীলতা ও গ্রাহক নাগালে যাওয়ার উন্নতি হয়েছে। এজন্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য দক্ষতা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।

বীমা পণ্য ও সেবা প্রয়োজন-বান্ধব করতে হবে। পুনর্বীমা কম সময়ের প্রতিবন্ধকতা ও কম বিনিয়োগ রিটার্নের দিকে নজর দেয়। তবে বাজারের সীমাবদ্ধ প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করে তাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যতে পুনর্বীমার ভবিষ্যত কি হবে।

বীমা ও পুনর্বীমা মধ্যে লাইনগুলো অস্পষ্ট। পুনর্বীমাকারীদের গ্রাহকদের কাছাকাছি থাকতে হবে, তাদের চাহিদা বুঝতে হবে। এটি নিশ্চিত করলে গ্রাহকদের ব্যবসা সুরক্ষিত থাকবে এবং লাভের পরিমাণ বাড়বে। (ক্রমশ...)