যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর নামে বীমা, এরপর দাবির টাকা পেতে হত্যা

হত্যাকাণ্ডের শিকার শালিনী যাদব- ফাইল ছবিআবদুর রহমান আবির: শালিনী যাদব। বয়স সবেমাত্র একুশ বছর। বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক। শ্বশুর বাড়ির নতুন সংসারে ভালোই কাটছিল দিনকাল। ট্রাকচালক স্বামীর অল্প উপার্জনেও অভাব ছিল না তেমন। কিন্তু সুসময়ের দিনগুলো যেন খুব দ্রুতই ফুরিয়ে যায়।

শালিনীর জীবনেও হয়তো তেমনটাই হয়েছিল। হঠাৎ করেই তার সুখের সংসারে বাসা বাধে যৌতুক নামের এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন শালিনী। অল্প সময়ের ব্যবধাণেই যেন শালিনীকে তার জীবন সায়াহ্নে নিয়ে যায় এই ব্যাধি। যার শেষ পরিণতি মৃত্যু।

সব মৃত্যুই মর্মান্তিক। কিন্তু এই মৃত্যুর পেছনে যদি থাকে কারো নিষ্ঠুরতার ভয়াল থাবা। তাহলে সেটা হয়ে ওঠে আরো মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক। শালিনীর মৃত্যুও তেমনি মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক। কারণ, তার এই মৃত্যুর পেছনে ছিল এক পাষণ্ডের নিষ্ঠুরতার ভয়াল থাবা।

বলছিলাম, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সুরাত শহরের একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা। যেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শালিনী যাদব নামের এক তরুণী। যার স্বামী অনুজ ওরফে মনু যাদব এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। ট্রাকচাপায় নিহত বলে প্রচার করা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৮ জানুয়ারি, ২০২১।

ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৭ সালে বিয়ের পর থেকেই শালিনী যাদবের ওপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে আসছিল তার ট্রাকচালক স্বামী অনুজ। বিষয়টি নিয়ে গত বছর অনুজ এবং তার শ্বশুর (শালিনীর বাবা ধনিরাম যাদব) এর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

এরপর শ্বশুর বাড়ি থেকে ফিরে যৌতুকের টাকা আদায় করতে ভিন্ন পন্থা বেছে নেয় অনুজ। সিদ্ধান্ত অনুসারে শালিনীর নামে লাইফ বীমা কোম্পানিতে একটি পলিসি গ্রহণ করে। ৬৩ লাখ রুপি বীমা অংকের এই পলিসির নমিনি হয় অনুজ। পলিসি চালু হওয়ার কিছু দিন পরই শুরু হয় বীমার টাকা পাওয়ার চেষ্টা।

অনুজ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বলেন যে, গত ৮ জানুয়ারি ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে তিনি ও তার স্ত্রী ব্যায়ামের জন্য হাঁটতে বের হলে একটি গাড়ি তার স্ত্রীকে পিষ্ট করে হত্যা করে। কিন্তু শালিনী কিছুটা পথ এগিয়ে থাকায় যে গাড়ি তাকে পিষেছিল তা তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না বলে যুক্তি উত্থাপন করেন।

পুলিশ জানায়, অনুজের যুক্তি বিশ্বাস করার মতো ছিল। কারণ সে সময় গুজরাটে সূর্যোদয় দেখা যেতো কেবল সকাল ৭.০৫ টার দিকে। তাই পুলিশ ‘দুর্ঘটনা’ তত্ত্বটি প্রায় গ্রহণ করেছিল। কিন্তু শালিনীর বাবা ধনীরাম যাদব তাদের যৌতুক সম্পর্কিত হাতাহাতি এবং পরবর্তীকালে ৬৩ লাখ রুপির বীমা পলিসি গ্রাহণের কথা জানায়, যা অনুজের পক্ষে দুর্ভাগ্য প্রমাণিত হয়।

আরো তদন্ত এবং অনুজকে তীব্র জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে শালিনীকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার দেহটি সুরতের একটি রাস্তার সার্ভিস লেনে একটি ট্রাকের নিচে পিষ্ট করা হয়েছিল। শালিনীর হত্যাকাণ্ড একটি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য এটা করা হয়েছিল, যাতে করে অনুজ বীমার টাকা দাবি করতে পারে।

‘আমার মেয়ের স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ীর লোকজন সম্প্রতি আমার মেয়ের জন্য ৬৩ লাখ টাকায় লাইফ বীমা কিনেছিল। আমি সন্দেহ করি যে, তারা বীমা দাবি পাওয়ার জন্য আমার মেয়েকে হত্যা করেছে,’ টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে আলাপকালে এমন অভিযোগ করেন ধনীরাম যাদব।