ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সলভেন্সি মার্জিনই যথেষ্ট: একেএম আজিজুল হক চৌধুরী

বিশ্বব্যাপী বীমা কোম্পানিসহ সকল ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সলভেন্সি মার্জিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই সলভেন্সি মার্জিন নীতিমালা হয়ে যাবে। সলভেন্সি মার্জিনের ভিতরেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়, সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সকল দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। বীমা কোম্পানিগুলো সলভেন্সি মার্জিন বজায় রাখতে না পারলে কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার এখতয়িার রাখবে। এমন অবস্থায় পৃথকভাবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পৃথক প্রবিধানামালার প্রয়োজন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংক্রান্ত প্রবিধানমালার গুরুত্ব কতটা। সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংক্রান্ত প্রবিধানমালা গেজেট প্রকাশ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিয়ে আলাপকালে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অ্যাডভাইজার ও বিশিষ্ট বীমা ব্যক্তিত্ব এ কে এম আজিজুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, সলভেন্সি মার্জিনেই সব কিছু বলা হয়ে যাচ্ছে। সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি কোম্পানি কতটা প্রতিষ্ঠিত বা কোম্পানির আর্থিক ভিত কতটা শক্তিশালী তা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে গ্রাহকের স্বার্থও সুরক্ষিত থাকবে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত শক্তিশালী করতে তাদের যে পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে তার নির্দেশনা থাকছে সলভেন্সি মার্জিনে। আর এটা করতে গেলে কোম্পানিগুলো যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে না। তাদের ব্যবসা বাড়াতে হবে খরচ কমাতে হবে। এর মধ্যদিয়েই তারা আবার দাবি পরিশোধেও সক্ষম হয়ে উঠবে। ফলে সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালার মধ্য দিয়েই একটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসছে।

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে যতদিন সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধাণমালা না হচ্ছে ততদিন কি করা হবে। মাঝের এই সময়টুকুর জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রবিধানমালা যদি করা হয় তাহলে তা হতে হবে যৌক্তিক। তা কখনোই অযৌক্তি অবাস্তব হতে পারে না।

ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের প্রবিধানমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়নি এটা বাস্তবসম্মত কোনো প্রবিধান হয়েছে। ব্যয়ের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুবই অস্বাভাবিক। প্রবিধানমালাটিতে একটি স্ল্যাব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্ল্যাবের ব্যবধান ৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ স্ল্যাবটিতে গ্রস প্রিমিয়ামের সীমা দেয়া হয়েছে ৪০ কোটি টাকা থেকে তদুর্দ্ধ। এই স্ল্যাবটির বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে ফায়ার ও অন্যান্য বীমায় ব্যয়ের সীমা ২২% ও নৌ বীমায় ১৬%। ব্যয়ের উল্লিখিত হার কমিশনসহ। এ দু’টির গড় যদি আমরা ধরে নেই ১৮%। তাহলে কি দাড়ায়? কমিশন খাতে ১৫% বাদ দিলে অফিস খরচ বেতন ভাতা বা অন্যান্য ব্যয়ের জন্য থাকছে ৩%। এই ৩ শতাংশ দিয়ে কি ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটাতো সম্ভব? কখানো সম্ভব নয়।

এখানে বাস্তবতা হলো কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন বাবদ ১০% খরচ হয়ে যায়। এছাড়া অফিস ভাড়া, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, প্রিন্টিংসহ অন্যান্য খরচ আছে সেখানে খরচ হয় ১০%। এই হিসাবে কমিশন বাদ দিয়েই খরচ হয় ২০%। সেখানে ৩% দিয়ে কীভাবে ব্যয় করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, সব কিছুতেই এখন খরচ বেড়েছে। আইডিআরএও খরচ বাড়িয়েছে। নবায়ন ফি এখন সাড়ে ৩%, এজেন্ট লাইসেন্স ফি, এজেন্টদের প্রশিক্ষণ খরচ, শাখা কার্যালয় ফি আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতাও বেড়েছে। এমন অবস্থায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা মেনে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।

প্রকাশের তারিখ- ৮ আগস্ট, ২০১৬