বিদেশগামী কর্মীদের বীমার আওতায় আনতে নীতিমালা চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশগামী কর্মীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রণীত খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত উপ-কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়।

কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একচ্যুয়ারি মোঃ সোহরাব উদ্দীন। আইডিআরএ'র সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড এবং এফআইডি'র প্রতিনিধিসহ বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুঝুঁকি, অঙ্গহানী, লে-অফ ঘোষণা প্রভৃতি ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলার লক্ষ্যে এ বীমা পলিসি চালু করা হচ্ছে। এরআগে বীমার পরিধি, বীমা অংক, বীমা চুক্তির জন্য মেডিকেল রিপোর্ট, বীমার বিপণন পদ্ধতি, কারা বীমা পরিকল্পটি বিপণন করবে এবং বীমা দাবি কি উপায়ে নিষ্পত্তি করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

চূড়ান্ত নীতিমালা অনুসারে, কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশগামী ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলক ৩ প্রকারের বীমা সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। যাত্রার সময় হতে পরবর্তী ১ মাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, জীবন বীমা এবং চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্য বীমা সুবিধা।

বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রেণীর শ্রমিকদের জন্য এ সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবে তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ব্যতীত বর্ণিত অন্য কোন বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতর হতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের পূর্বেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। বিদেশগামী কর্মীদের প্রকৃতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বীমা সুবিধার প্রয়োজনীয়তা, কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা, কর্মকালীন ঝুঁকিসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নীতিমালা করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রার দিন থেকে পরবর্তী ১ মাসের জন্য এ বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে। নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহ এক মাসেরজন্য স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা প্রদান করতে এ সংক্রান্ত পরিকল্প ডিজাইন করতে পারে।

প্রবাসীদের জীবন বীমার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কর্ম মেয়াদের জন্য জীবন বীমা ক্রয় করবে। পরবর্তীতে কর্মমেয়াদ বৃদ্ধি হলে বীমা গ্রহীতার নমিনি নিয়োগকর্তা প্রদত্ত চাকরির সময় বৃদ্ধি সংক্রান্ত ডকুমেন্টস বীমাকারী কোম্পানির নিকট দাখিলপূর্বক পলিসির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে।

জীবন বীমার বীমা অংক সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। আর নির্দিষ্ট বীমা অংকের জন্য আইডিআরএ কর্তৃক মনোনীত একচ্যুয়ারি দ্বারা পরিকল্প ও অভিন্ন প্রিমিয়াম রেইট প্রদান করা হবে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কেউ এ বীমা সুবিধা নিতে পারবে।

বীমা চলাকালে বীমা গ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা অঙ্গহানিতে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। যে কোন কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা অংকের ১০০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি হারালে মূল বীমা অংকের ১০০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। তবে এক চোখের দৃষ্টি শক্তি হারালে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে।

চাকরি হারানো ঝুঁকির বীমা পলিসির সর্বোচ্চ বীমা অংক নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সিআরসি কর্তৃক প্রিমিয়ামের হার নির্ধারিত হবে। তবে এককালীন সর্বনিম্ন বীমা অংকের উপর ০.৩০ শতাংশ আরোপ করা যেতে পারে। প্রতি বছর ০.৩০ শতাংশ হারে এককালীন ২ বছর পরিশোধ্য। এ ছাড়াও ভ্যাট ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর যোগ করতে হবে।

বীমার মেয়াদ হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১ বছর। তবে এনডোর্সমেন্ট'র মাধ্যমে ২ বছর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যাবে। সেক্ষেত্রে নবায়ন প্রিমিয়াম প্রযোজ্য হবে না। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ বীমা গ্রহণ করা যাবে। পেশা পরিবর্তন করলে পত্রের মাধ্যমে তা বীমাকারীকে জানাতে হবে।

যদি বীমা গ্রহীতা কর্মে নিয়োগ পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচূত্য হন তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৮০ শতাংশ। এক মাসের অধিক থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচূত্য হন তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৭০ শতাংশ। তিন মাসের অধিক থেকে ৫ মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচূত্য হন তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৬০ শতাংশ।