৫ বছর পর অনুমোদন পেলেন আজিজুল ইসলাম তালুকদার      

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ ৫ বছর পর  হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অনুমোদন পেলেন আজিজুল ইসলাম তালুকদার। আজ রোববার দুপুরে নবায়ন নিয়োগের অনুমোদন পত্র আজিজুল ইসলাম তালুকদারের হাতে তুলে দেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআএ)'র চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী। ২০১৩ সাল থেকে তার নিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে।

মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা-২০১২ অনুসারে সকল শর্ত পূরণ হওয়ায় আজিজুল ইসলাম তালকদারকে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অনুমোদন পত্র হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান আজিজুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, আজ আমি খুব খুশি। ন্যায় বিচার পেয়েছি। বিগত দুই মেয়াদে আইডিআরএ'র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা যে অবিচার আমার প্রতি করেছে তার সুবিচার পেয়েছি।

আইডিআরএ’কে ধন্যবাদ জানাই। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। গত আট বছর যাবৎ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে  যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম আজ তার ফল পেলাম।

আমি মনে করি, আইডিআরএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তারা আজকে যে সুবিচার করেছেন তা এ সেক্টরের উন্নয়নে তাদের আন্তরিকতার বহি:প্রকাশ।

তিনি আরো বলেন, আমি হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী কমকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাই ২০১০ সালের ২৪ মে। এ সময় কোম্পানির আর্থিক ভিত খুব দূর্বল ছিল। এর কারণ কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতি। আমি এসব দুর্নীতি দূর করার কাজে কঠোর ভূমিকা নেই। আর এটাই ছিল আমার জন্য কাল।

কোম্পানির কতিপয় দুর্নীতিবাজ পরিচালক ও আইডিআরএ’র গত দুই মেয়াদের দায়িত্ব প্রাপ্তদের একটি চক্র অন্যায়ভাবে আমার নবায়ন অুনমোদন আটকে রাখে। কিন্তু দুর্নীতিবাজরা কখনো পার পায় না। আজ তা আবার প্রমাণ হলো।

আমি কৃতজ্ঞ আইডিআরএ’র বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব প্রাপ্তদের  কাছে, এ সেক্টরে আমার সহকর্মীদের কাছে।

জানা যায়, আজিজুল ইসলাম তালুকদার ২০১০ সালে ২৪ মে হোমল্যান্ড লাইফের মূখ্য নির্বাহী হিসেবে ৩ বছরের জন্য অনুমোদন পান।

২০১৩ সালের ২৪ মে দ্বিতীয় মেয়াদে অনুমোদনের জন্য আবেদন পাঠানো হয় আইডিআরএ।

পরের মেয়াদে নিয়োগ লাভের জন্যও  তার নিয়োগ নবায়নের আবেদন পাঠানো হয়।

এরপর থেকেই শুরু হয় নানা অজুহাতে হয়রানি। কখনো এ কাগজ নেই, তা পুরণ করলে আবার অন্য শর্ত। সব শর্ত পুরণ করার পরও চলে নানা হয়রানি।

বর্তমান মেয়াদের আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আজিজুল ইসলাম তালুকদারের আবেদন যাচাই বাচাই করেন। গঠন করেন কমিটি।

মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা-২০১২ অনুসারে সকল শর্ত পূরণ হওয়ায় আজিজুল ইসলাম তালুকদারকে মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন ওই কমিটি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়। একই সাথে ২০১৬ সালে ২৪ মে থেকে ২০১৯ সালের ২৩ মে পর্যন্ত আরো ৩ বছরের জন্য তার নিয়োগ অনুমোদন দেয় আইডিআরএ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল ইসলাম তালুকদার হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে কঠোর পদেক্ষপ নেন। এসব দুর্নীতির সাথে কোম্পানির কতিপয় পরিচালকের শেয়ার জালিয়াতি যেমন ছিল তেমনি ছিল তৎকালীন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম। আজিজুল ইসলাম তালুকদার দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে নানাবিধ সংস্কার কাজে হাত দেন। ফলে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে।   

হোমল্যান্ড লাইফের ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোম্পানিটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯৭ সালে। অথচ ২০০৯ সালে এসে কোম্পানীর মোট বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৬৪.৩৫ কোটি টাকা। এর ছাড়াও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমিক্রয়ে বিনিয়োগ ছিল ৮ কোটি টাকা।

তবে ২০০৯ সালের ৬৪.৩৫ কোটি টাকা এ বিনিয়োগ ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায়  ১৫৪.৬৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ ৭ বছরে বিনিয়োগে মোট প্রবৃদ্ধি হয় ২৪০.৩৩%। এর মধ্যে  ২০১০ সাল শেষে বিনেয়াগ দাঁড়ায় ৮২.৮৪ কোটি টাকা, আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১২৮.৭৩%। ২০১১ সালে ১০৯.৬০ কোটি টাকা, আগের বছরের তুলানায় প্রবৃদ্ধি ১৩২.৩০%,  ২০১২ সালে ১৩৩.৫০ কোটি টাকা,  যা  আগের বছরের তুলনায় ১২১.৮০%, ২০১৩ সালে ১৪৮.৮৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১১১.৫২%,  ২০১৪ সালে ১৬২.৭১ কোটি টাকা,  যা আগের বছরের তুলনায় ১০৯.২৮%, ২০১৫ সালে ১৬৩.৮৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১০০%।

সূত্র মতে, কোম্পানিটি ক্ষুদ্রবীমা পলিসি বিক্রি শুরু করে ২০০৬ সাল থেকে। এসব পলিসির মেয়াদ ১০ বছর হওয়ায় বেশিরভাগ পলিসি ২০১৬ সালে মেয়াদ শেষ হয়। ফলে, পলিসির মেয়াদোত্তর দাবি পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আর্থিক প্রতিবদেন দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে পরিশোধিত দাবির পরিমাণ ৪৫.১৭ কোটি টাকা, ২০১০ সালে ৫১.৪৩ কোটি টাকা, ২০১১ সালে ৫৮.৮৬ কোটি টাকা, ২০১২ সালে ৬৮.৯২ কোটি টাকা, ২০১৩ সালে ৭২.৬৭ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ৮১.১০ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৮১.৩১ কোটি টাকা এবং ২০১৬ সালে দাবি পরিশোধ করতে হয় ৮৮.৪২ কোটি টাকা।

কোম্পানি সূত্র জানায়, ২০১১ থেকে আইডিআরএ থেকে একচ্যুয়ারিয়াল বেসিস অনুমোদন না দেয়ায় কোম্পানিটি ভ্যালুয়েশন করতে পারেনি। ফলে কোম্পানির সারপ্লাস নির্ণয় করা যায়নি। এতে কোম্পানিটি পলিসি গ্রাহকদেরও দীর্ঘদিন কোন ধরণের বোনাস প্রদান করতে পারেনি।

তবে, আইডিআরএ'র বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এবং সদস্যসহ অন্যান্য পরিচালকগণ যোগদানের পর কোম্পানির ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত একসাথে ৬ বছরের একচ্যুয়ারিয়াল বেসিস অনুমোদন করে। অনুমোদিত বেসিস এর উপর কোম্পানির একচ্যুয়ারি আফসার উদ্দিন আহমেদ ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত ভ্যালুয়েশন সম্পন্ন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।

সূত্র অনুসারে, ২০১০ সালের কোম্পানির ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট অনুসারে ঘাটতি ছিল ১০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সর্বশেষ ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট অনুসারে , ২০০৯ সালে ১০ কোটি টাকার ঘাটতি ২০১১ সালে এসে দাঁড়ায়  ৪ কোটি টাকায়।

পরবর্তী বছরে এসেই ঘুরে দাঁড়ায় এ অবস্থা। ২০১২ সালে ৪ কোটি টাকা সারপ্লাস চলে যায় কোম্পানি। এর পরের বছরগুলোতে এ সারপ্লাস অব্যহত থাকে।

সূত্র মতে, কোম্পানিটির ২০১৩ সালে ৮ কোটি টাকা সারপ্লাস, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ১৮ কোটি টাকা করে সারপ্লাস, এবং ২০১৬ সালে ১৫ কোটি টাকা সারপ্লাস হয়। এমনকি ভ্যালুয়েশন রিপোর্টে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর পর তিন বছর কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের জন্য পলিসি বোনাস এবং শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ট প্রদানের সুপারিশ করে।

আজিজুল ইসলাম তালুকদার বলেন, বর্তমানে কোম্পানিটি আইডিআরএ এর যাবতীয় নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত হয়ে আসছে। তাছাড়া অনলাইন এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে করার ফলে একদিকে যেমন জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে অপরদিকে আর্থিক শৃঙ্খলাও ফিরে এসেছে।