বীমা আইন বাস্তবায়নে ৯ বছরেও প্রণয়ন হয়নি অর্ধেকের বেশি বিধি-প্রবিধি

আবদুর রহমান আবির: বীমা কোম্পানির বিশেষ নিরীক্ষার পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে। এ নির্দেশনা দেয়া আছে বীমা আইন ২০১০ এর বিশেষ নিরীক্ষা সংক্রান্ত ২৯ নং অনুচ্ছেদে। অথচ আইন পাস হওয়ার পর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রণয়ন করা হয়নি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রবিধান।

একইভাবে বিভিন্ন বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া আছে বীমা আইনে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিধি-প্রবিধানমালার অর্ধেকও তৈরি হয়নি। ফলে বীমা আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিধি-প্রবিধি প্রণয়ন ছাড়া বীমা আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব না। তাই বীমাখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও খাতটির উন্নয়নে সরকারের উচিত দ্রুত সময়ে বিধি প্রবিধি প্রণয়ন করা।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, নানাবিধ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলেই প্রয়োজনীয় বিধি-প্রবিধান এখনো প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার একার কোন বিষয় নয়। এর সঙ্গে সরকারের অন্যান্য দফতর জড়িত। দ্রুত সময়ে বিধি-প্রবিধান প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা দরকার।

সূত্র মতে, ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠনের পর এ পর্যন্ত ৮টি বিধিমালা এবং ১৩টি প্রবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা- ২০১৬ রহিতকরণ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অথচ বীমা আইন ২০১০ পরিপালনে ৫১টি বিধি-প্রবিধানের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূ্ত্র।

আইডিআরএ তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বীমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা- ২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। তবে বীমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা- ২০১২ এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২০১৮ সালের ১১ জুন। বীমাকারীর শাখা ও কার্যালয় স্থাপনের জন্য লাইসেন্স ফি বিধিমালা- ২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর।

এ ছাড়াও বিদেশী উদ্যোক্তা কর্তৃক শেয়ার ক্রয় বা ধারণ (শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা- ২০১৩, দলিলাদি পরিদর্শন ও অনুলিপি সরবরাহ ফি বিধিমালা- ২০১৪, বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা- ২০১৬,   নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা- ২০১৮, স্বল্প অংকের বীমা দাবির (পরিমাণ নির্ধারণ) বিধিমালা- ২০১৮ এবং নন-লাইফ বীমা জরিপকারী (লাইসেন্সিং) বিধিমালা- ২০১৮ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো হলো- বীমাকারীর রেজিস্টার (পলিসি ও দাবি) সংরক্ষণ প্রবিধানমালা- ২০১৭, লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল প্রবিধানমালা- ২০১৬, নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা- ২০১৬ (রহিতকরণ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।), লাইফ ইন্স্যুরেন্স পুনর্বীমা (শর্তাদি নির্ধারণ) প্রবিধানমালা- ২০১৫, রিভিউ এর (সময়, ফরম ও ফি) প্রবিধানমালা- ২০১৫।

এ ছাড়াও রয়েছে বীমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা- ২০১৩, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটি) প্রবিধানমালা- ২০১২, গ্রামীণ বা সামাজিক খাতে বীমাকারীর দায়বদ্ধতা প্রবিধানমালা- ২০১২, বীমাকারীর শাখা ও কার্যালয় স্থাপন (লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন) প্রবিধানমালা- ২০১২, সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি প্রবিধানমালা- ২০১২, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা- ২০১২, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (উপদেষ্টা পরিষদ) প্রবিধানমালা- ২০১১ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (তহবিল ব্যবস্থাপনা) প্রবিধানমালা- ২০১১।

বিআইপিডি'র মহাপরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, বিধি-প্রবিধান তৈরির প্রক্রিয়াকে সহজ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবিধান তৈরির জন্য আইডিআরএ’কে ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন। একটা গাইডলাইন দেয়া থাকবে যার অনুসরণে আইডিআরএ প্রবিধানগুলো তৈরি করবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটার অনুমোদন দেবে।

অথবা একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি করা যেতে পারে যেখানে মন্ত্রণালয়সহ সবগুলো স্টেকহোল্ডার থাকবে। আইডিআরএ প্রবিধানমালা তৈরি করার পর ওই কমিটিকে প্রদান করবে। কমিটির বৈঠকে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে প্রবিধানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। এক্ষেত্রে সময় ক্ষেপনের খুব একটা সুযোগ থাকবে না বলে জানান কাজী মো. মোরতুজা আলী।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের পরামর্শক কিউএএফএম সিরাজুল ইসলাম ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আইন তৈরি হওয়ার পরই বিধি-প্রবিধি তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। কারণ, আইনে সংক্ষিপ্ত আকারে বলা থাকে। যার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বিধি-প্রবিধি। কিন্তু আইডিআরএ হয়তো অন্য কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। তাই বিধি-প্রবিধি তৈরিতে দেরি হচ্ছে। তবে আশা করি সবাই হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, প্রয়োজনীয় বিধি-প্রবিধান প্রণয়নে আমরা চেষ্টা করছি। নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে এটা করতে হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুধু আমরা জড়িত না। এজন্য চাইলেই একটি বিধি বা প্রবিধান তৈরি করা যায় না। লাইফ ও নন-লাইফের সম্পদ বিনিয়োগের একটি প্রবিধান তৈরি করতেই ৬ বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু এখনো সম্ভব হয়নি।