আমিও বীমা পরিবারের একজন সদস্য: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমিও এই পরিবারেরই একজন সদস্য। আজ মঙ্গলবার ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইনক্লুসিভ ইন্স্যুরেন্স ফর ইমার্জিং মার্কেটস: কোপিং উইথ ক্লাইমেট রিস্ক শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা শিল্পের সাথে আসলে আমার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রী ছিলেন। তবে ১৯৫৭ সালে তিনি মন্ত্রীত্ব ত্যাগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশে তখনকার পাকিস্তানে মার্শাল ল’ জারি হয় এবং মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মার্শাল ল’ জারি হয়। আর ১২ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ১৪ মাস কারাগারে থাকার পর ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু তখন সকল দল নিষিদ্ধ ছিল এবং রাজনীতিও নিষিদ্ধ ছিল। যার ফলে তার শুধু ঢাকা শহরে থাকা, ঢাকার বাইরে যেতে হলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করে যেতে হতো। সেই সময় তিনি আলফা ইন্স্যুরেন্সের আঞ্চলিক শাখা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। বলতে গেলে তার জীবনে প্রথম একটা চাকরি জীবন শুরু হয়। আর আমাদের জন্য এইটুকু সৌভাগ্য ছিল যে আমরা বাবাকে খুব আপন করে কাছে পাই। যদিও সে সৌভাগ্য খুব বেশি দিন টেকেনি। এরপই আবার ‘৬২ সালে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। শুধু তিনি যে তখন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন সেই সুবাদে আমি বলব যে, আমারা, আমিও এই পরিবারেরই একজন সদস্য এবং সন্তান ছিলাম।  

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন,  তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই বাংলাদেশের মানুষ যাদের অধিকাংশই দরিদ্র ছিল, প্রায় ৮২ ভাগের ওপর মানুষ দারিদ্রের নীচে বাস করত। এই দেশের মানুষের একটি সুন্দর জীবন দেয়া, মানুষের উন্নতি করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা -এটাই ছিল তার লক্ষ্য। আর সে জন্যই তিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদয়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেন এবং সেই সংগ্রামের পথ দিয়েই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। আর স্বাধীনতার পরই তিনি দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত কঠিন দায়িত্ব ছিল। সেই দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তিনি অন্য সব ক্ষেত্রে যেমন উন্নতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে বীমা শিল্পের উন্নয়নেও তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি আমাদের বাংলাদেশের একমাত্র একচ্যুয়ারি যিনি তখন লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। তার নাম ছিল সাফাত আহমেদ চৌধুরী। তাকে তিনি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশে তখন কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স পদে তাকে নিয়োগ দেন। কারণ ইন্স্যুরেন্সকে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আসলে ব্যক্তি, পরিবার এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতে অদৃশ্য ঝুঁকি হ্রাসে বীমা শিল্প সহায়তা করে থাকে। এবং সেটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই এই বীমাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এটাও হতে পারে যে, তিনি কাজ করেছিলেন বলে তার নিজের একটা অভিজ্ঞতাও ছিল। যাহোক, আমরা মনে করি যে, এ সমুস্ত ঝুঁকি কমিয়ে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে বীমা। জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিতে একটা নিরাপত্তা দেয়া বীমা। পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ খাতের জন্য তহবিল সৃষ্টিতেও সহায়তা করে। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য মূলত বীমাটা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বীমা শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ যখন পুনরায় সরকার গঠনের সময় আমরা এই খাতের সর্বিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেই। ১৯৩৮ সালে প্রণিত যে বীমা আইন, সেই আইনটি যুগোপযোগী করে ২০১০ সালে আমরা নতুনভাবে আইনটি প্রণয়ন করি এবং চালু করি। একইসঙ্গে আমরা পূর্বের কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অধিদপ্তর অবলুপ্ত করে আমরা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আইডিআরএ আইন ২০১০ প্রণয়ন করি এবং সেই সময়ও আমি লন্ডন থেকে আরেকজন একচ্যুয়ারিকে আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসি এই বীমা শিল্পের উন্নয়নের জন্য। যদিও তিনি এখন অসুস্থ হয়ে আছেন। কিন্তু তাকেও আমরা নিয়ে এসেছিলাম। আমরা সব সময়ই দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করি। তবে আমাদের দেশের মানুষ আসলে বীমা করার অভ্যাসটা একটু কম, এটা হলো বাস্তবতা। এমনকি আমিও একসময় জীবন বীমা করি, তারপর সে কাগজপত্র যে কোথায় হারালো তা আর খুঁজে পাইনি।