ট্যারিফ রেইটে বৈষম্য দূর করার দাবি কেসিসিআই’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: নন-লাইফ বীমাখাতে অগ্নি ও নৌ-বীমার ট্যারিফ রেইটে বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়েছে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেসিসিআই) । ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের এ সংগঠন বলছে, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্য বর্হির্ভূত অন্যান্য সকল বীমা গ্রাহকদের জন্য উচ্চহারে অগ্নি ও নৌ-বীমার ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে ট্যারিফ রেইট পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নন-লাইফ বীমাখাতে ৭১, ৭২ এবং ৭৩ নং সার্কুলার জারি করে অগ্নি ও নৌ-বীমার ট্যারিফ রেইট পুনর্নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। এতে বাংলাদেশ নিটওয়্যার এন্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ)’র সদস্যভুক্ত শতভাগ রপ্তানীমূখী পোষাক কারখানাগুলোকে কম প্রিমিয়ামে বীমা সুবিধা দেয়া হয়।

কেসিসিআই বলছে, আইডিআরএ জারিকৃত এই সার্কুলার ৩টির ফলে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্য বর্হির্ভূত অন্যান্য সকল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্য রপ্তানীর জন্য উচ্চহারে প্রিমিয়াম দিয়েই অগ্নি ও নৌ-বীমা গ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে করে অসম প্রতিযোগিতার মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্য বর্হির্ভূত অন্যান্য বীমা গ্রাহককে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।

সংগঠনটি আরো জানিয়েছে, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্য বর্হির্ভূত অন্যান্য সকল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নৌ-বীমার প্রিমিয়াম হার বেশি হওয়ায় এবং আমদানীকারক দেশের নৌ-বীমার প্রিমিয়াম হার কম থাকায় বিদেশি আমদানিকারকরা তাদের স্ব স্ব দেশে বীমা গ্রহণ করতে বেশি উৎসাহী হয়। যার ফলে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ছাড়াও এসব শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য প্রচুর পরিমাণ কাঁচামাল, মেশিনারী বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। কিন্তু অগ্নি ও নৌ-বীমার ট্যারিফ রেইট বেশি হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। যার কারণে সদস্য বহির্ভূত এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান রপ্তানী বাজার সৃষ্টিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দরের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না- যা এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে বড় ধরণের অন্তরায়। অথচ এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্লেইম এক্সপেরিয়েন্স অনেক ভালো।

আইডিআরএ’র কাছে আবেদনে কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি জানিয়েছে, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ন্যায় অগ্নি ও নৌ-বীমা ট্যারিফ রেইটসের ক্ষেত্রে যদি প্রতিষ্ঠান ৩টির সদস্য বর্হির্ভূত অন্যান্য সকল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেয়া তাহলে তাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কম পড়বে এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে রপ্তানী বাণিজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। এর ফলে বৈদেশি মুদ্রা অর্জন এবং দেশের শিল্পায়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান।

কেসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট হাজী মো. রবিউল ইসলাম ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ এবং বিটিএমএ’র সদস্যের বাইরে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের অগ্নি ও নৌ-বীমার প্রয়োজন। কিন্তু ওই সব প্রতিষ্ঠানের বীমায় ট্যারিফ রেইট বেশি। ফলে তাদের পণ্য উৎপাদনে খরচ বেশি হচ্ছে এবং রপ্তানী বাণিজ্যে প্রবেশ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পক্ষ থেকে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ট্যারিফ রেইট সমপর্যায়ে পুনর্নির্ধারণের আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র আবেদনটি এখনো আমার নজরে আসেনি। তবে তাদের আবেদন যৌক্তিক বিবেচিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।