করোনার কবলে লাইফ বীমাখাত, প্রায় সব সূচকেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি

আবদুর রহমান আবির: করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে থমকে গেছে দেশের লাইফ বীমাখাত। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে খাতটির প্রায় সব সূচকে। প্রিমিয়াম সংগ্রহ, লাইফ ফান্ড, দাবি পরিশোধ, চালু পলিসি, বীমা কর্মী ও কর্মকর্তা- কোন খাতেই ধরে রাখতে পারেনি প্রবৃদ্ধির ধারা। সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।  

লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও মূখ্য নির্বাহীদের সঙ্গে গত ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব তথ্য তুলে ধরেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাস সম্পূর্ণ সাধারণ ছুটি থাকায় বড় ধরণের হোঁচট খেয়েছে দেশের বীমাখাত। তবে জনজীবন আবারো স্বাভাবিক হয়ে আসায় এরইমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আর্থিক খাতের অন্যতম অংশীদার বীমাশিল্প।  

তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে দেশের লাইফ বীমাখাতে সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ১ হাজার ৮১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তবে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে এই সংগ্রহ ৪২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ কমেছে ২৩ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০১৯ সালে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ৩৩.২৪ শতাংশ।  সে বছর মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৯ হাজার ৬৩৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

অন্যদিকে ২০২০ সালের এপ্রিল, মে ও জুনে চালু পলিসির সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ৩ হাজার ১৫৮টি বা ১ দশমিক ১৯ শতাংশ।  বর্তমানে চালু পলিসির সংখ্যা ৮৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪টি।  চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চালু পলিসির সংখ্যা ছিল ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ৭৪২টি।  আর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৮২ হাজার ৬৯৯টি।

এদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে লাইফ ফান্ড কমেছে ৩০৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩৪ হাজার ১৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।  ২০১৯ সালে লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৪৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে লাইফ ফান্ড ছিল ৩৩ হাজার ৫৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

করোনাকালে বীমা দাবি পরিশোধও কমে গেছে ২৩ শতাংশ।  ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চে লাইফ বীমায় উত্থাপিত ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা দাবির মধ্যে পরিশোধ করা হয় ১ হাজার ৯২১ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ৭২ শতাংশ। তবে এপ্রিল, মে ও জুনে উত্থাপিত ১ হাজার ৬৪৭ কোটি ২ লাখ টাকা বীমা দাবির মধ্যে পরিশোধ করা হয় ৭৯৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ৪৮ শতাংশ।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এফএ, ইউএম, বিএম তথা বীমা কর্মীর সংখ্যা কমেছে ১৯ হাজার ৭৭৪ জন বা ৪ শতাংশ। বর্তমানে এসব বীমা কর্মীর সংখ্যা ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫২ জন।  আর অফিস স্টাফের বর্তমান সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৪৪ জন। যা বছরের প্রথমার্ধে ছিল ২০ হাজার ২৫১ জন। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে অফিস স্টাফ কমেছে ৭১৪ বা ৪ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।  সংক্রমণ রোধে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দেশের ইতিহাসে ২ মাস ৪ দিনের এই দীর্ঘ ছুটির পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩১ মে থেকে খোলা হয় অফিস-আদালত। চালু হয় গণপরিবহনও।