মীর নাজিম উদ্দিনকে শেষ সময়ে সম্মান জানানোর সুযোগ চান ইসলামী কমার্শিয়ালের চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে তার কর্মজীবনের শেষ সময়ে সম্মান জানানোর সুযোগ চেয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ার। অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগে মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইডিআরএ’কে গত বৃহস্পতিবার লেখা এক চিঠিতে কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি এ আবেদন করেন।

সাহিদা আনোয়ার ওই চিঠিতে মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে একজন ভালো, সৎ ও নিষ্ঠাবান বীমা ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মীর নাজিম উদ্দিন দীর্ঘ ৩৫ বছর বীমা শিল্পে কাজ করে চলেছেন। শুধু সমাজের একজন প্রবীণ ব্যক্তিত্বই নয়, বীমা শিল্পেও প্রবীণ। তার শেষ সময়টুকুতে সম্মান জানানোর সুযোগ দিয়ে আমাদের বাধিত করবেন।

সূত্রমতে, ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ পায় আইডিআরএ’র সার্ভিলেন্স টিম। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৬টি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়ার পর গত বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর, ২০২০) অর্থদণ্ড কমানো, সিটি সেন্টার শাখা বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনাসহ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সাহিদা আনোয়ার।

আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেন, আপনার সঠিক ও সময়োপযোগী নির্দেশনায় আমাদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের আইপিও নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এই মুহুর্তে এ ধরণের বড় সিদ্ধান্ত মার্কেটে আমাদের কোম্পানির ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করবে এবং আমরা হয়তো আবার অভিষ্ঠ লক্ষ্যচূত হবো।

কোম্পানির সিটি সেন্টার শাখা বন্ধ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাহিদা আনোয়ার বলেন, শাখা বন্ধের মাধ্যমে কিছু লোকের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। কোম্পানিটিতে বর্তমানে ৪শ’র বেশি পরিবার নির্ভরশীল বলেও উল্লেখ করেছেন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান।

তিনি আরো বলেন, পৃথিবীব্যাপী করোনার মহামারীতে দেশের আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত। তাই আইপিও পরবর্তী সময়ের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার মেয়াদ থাকতে থাকতেই একজন শিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খুঁজে অবশ্যই আপনাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবো।

অন্যদিকে সিটি সেন্টার শাখা বন্ধের সিদ্ধান্ত ও অর্থদণ্ড পুনর্বিবেচনাসহ মান-সম্মানের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ চেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে একইদিন আরেকটি আবেদন জানিয়েছেন ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ।

তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ও ৭ নভেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অবস্থিত ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং সিটি সেন্টার শাখা পরিদর্শন করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সার্ভিলেন্স টিম।

পরিদর্শনে বীমা আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, গড়মিল তথ্য প্রদান, পরিচয় গোপন করে মোটা অংকের বেতনে মূখ্য নির্বাহীর ছেলেকে নিয়োগ, অবলিখন কর্মকর্তাকে এজেন্ট নিয়োগ, অনভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে অবৈধভাবে বেতন উত্তোলনসহ ১০টি অনিয়ম-জালিয়াতির তথ্য পায় সার্ভিলেন্স টিম।

অনিয়ম ও জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদকে অপসারণসহ ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সরে বিরুদ্ধে ৬টি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইডিআরএ। এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের ১২৬তম সভায়।

সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি অনিয়মের জন্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আরোপসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, সিটি সেন্টার শাখার ব্যবস্থাপক এবং ওই শাখার অবলিখন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত জরিমানা আরোপ; সিটি সেন্টারর শাখার কার্যক্রম বন্ধ; কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পত্র প্রেরণ এবং কোম্পানি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত জরিমানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ।