যাদের হারিয়ে শোকাহত দেশের বীমাখাত

আবদুর রহমান আবির: জীবন যার আছে, মৃত্যু তার অবধারিত। নির্মোঘ এই সত্য সবারই জানা। কিন্তু তারপরও আমরা মৃত্যুকে সহজে মানতে পারি না। তাই প্রিয়জনের চির প্রস্থান আমাদের সবাইকে মর্মাহত করে। এই মৃত্যুর মিছিলে প্রতিবছরই যুক্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। তবে করোনার এই বছরে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হওয়া মানুষের সংখ্যাটা যেন একটু বেশি।

যাদের ঘিরে আলোকিত ছিল দেশের বীমাখাত, তাদের অনেকেই এবার পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। তবে রেখে গেছেন তাদের কর্ম আর স্মৃতিময় দিনগুলো। ২০২০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছে দেশের বীমাখাত। বছর শেষে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি স্মরণ করছে এসব গুণীজনকে।

জামাল এম এ নাসের:

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন জামাল এম এ নাসের। চলতি বছরের ২১ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশিষ্ট এই বীমা ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৬ সালে ডেল্টা লাইফে যোগদানের মাধ্যমে বীমাখাতে কর্মজীবন শুরু করেন। বিভিন্ন সময় তিনি দেশের ৬টি লাইফ বীমা কোম্পানির ঊর্ধ্বতন পদে নিযুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন।

১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিকস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯২ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি বোর্ড (ইউকে) থেকে জিসিই (কম্পিউটিং) ডিগ্রি অর্জন করেন জামাল এম এ নাসের। দেশের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। প্রায় ৬১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণকারী এই বীমা ব্যক্তিত্বকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে।

বোরহান উদ্দিন মজুমদার:

মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন বোরহান উদ্দিন মজুমদার। ২০২০ সালের ২০ জুলাই রাজধানীর বনশ্রীতে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বোরহান উদ্দিন মজুমদার ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের প্রতিষ্ঠাতা মূখ্য নির্বাহী হিসেবেও তিনি ১০ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ৩ বছর হোমল্যান্ড লাইফের ডিএমডি হিসেবে তিনি চাকরি করেছেন। লাইফ বীমায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব বোরহান উদ্দিন মজুমদার পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে। তার গ্রামের বাড়ী ফেনী জেলার পরশুরামে।

হাজী মকবুল হোসেন:

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন হাজী মকবুল হোসেন। ২৪ মে, ২০২০ তারিখে ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫০ সালে মুন্সীগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী হাজী মকবুল পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিরও চেয়ারম্যান।

আলহাজ মকবুল হোসেন ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হাজী মকবুল হোসেনের ছেলে আহসানুল ইসলাম টিটু বর্তমানে টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বেও রয়েছে আহসানুল ইসলাম টিটু।

এম শামসুল আলম:

জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান এম শামসুল আলম মৃত্যুবরণ করেন চলতি বছরের ২০ মে। তিনি ২০১৪ সালে জীবন বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৬০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনে যোগদান করেন এম শামসুল আলম ।

এ ছাড়াও তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি জীবন বীমা করপোরেশনের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন। তিনি রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যানও তিনি।

এম আবদুল মোনেম:

বিশিষ্ট শিল্পপতি এম আবদুল মোনেম ছিলেন প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক। গত ৩১ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোনেম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

লতিফুর রহমান:

বীমাখাতের আরেক কিংবদন্তি লতিফুর রহমান। গত ১ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন লতিফুর রহমান। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি লতিফুর রহমান আমৃত্যু ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটি প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

আলী আজিম খান:

জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন মো. আলী আজিম খান। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। তৈরি পোশাক শিল্পের খ্যাতিমান উদ্যোক্তা আলী আজিম খান বেসরকারি মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একজন।

নীল কণ্ঠ রায়:

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন নীল কণ্ঠ রায়। চলতি বছরের ৬ জুলাই সিলেটস্থ নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক:

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অর্থ ও হিসাব বিভাগের ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক। প্রায় ৫৩ বছর বয়সে গত ১৭ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের অধিবাসী ছিলেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

খায়রুল আলম:

ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট-এসভিপি (হেড অব এডমিনিস্ট্রেশন এন্ড ইস্ট্যাবলিশমেন্ট) ছিলেন খায়রুল আলম। চলতি বছরের গত ৭ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

নজরুল ইসলাম:

নিটল ইন্স‍্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পুনর্বীমা বিভাগের প্রধান ছিলেন মো. নজরুল ইসলাম। চলতি বছরের ২৬ মার্চ রাতে ইন্তেকাল করেন নিটল ইন্স্যুরেন্সের দক্ষ এই কর্মকর্তা।

আবদুল মোনায়েম খান:

চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কক্সবাজার অফিসের ইনচার্জ ছিলেন মো. আবদুল মোনায়েম খান। চলতি বছরের ৭ জুন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আবদুল মোনায়েম খান ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন।