বীমা হবে মানুষের সহায়ক শক্তি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বীমা হবে মানুষের সহায়ক শক্তি। তিনি বলেন, বীমা মূলত একটি সেবামূলক পেশা। এ সেবাকে জনপ্রিয় করাসহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতি যত বেশি শক্তিশালী হবে, বিস্তৃত হবে, মানুষ সচেতন হবে। বীমার গুরুত্বও ততটা বাড়বে। তিনি বলেন, বীমা থেকে মানুষ যে সুফল পেতে পারে, এ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি আশা করি আপনারা যারা বীমার সঙ্গে জড়িত, তারা মানুষের মাঝে সচেতনতাটা বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নেবেন।

বীমা থাকলে যে মানুষ দুঃসময়ে সুবিধা পায়, সে বিষয়টি তুলে ধরে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা চাই, মানুষ বীমা সম্পর্কে আরও আস্থাশীল হোক। এতে তারা যেন সুফলটা ভোগ করতে পারে। সেজন্য বীমা পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও যাবতীয় আইন করে দিয়েছি। বীমার প্রিমিয়াম জমা দেয়া ও ক্ষতি নিরূপণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারেও তিনি পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের কিছু অভ্যাস আছে। অনেক সময় কোন ক্ষতি না হলেও নিজেরা আর্টিফিশিয়ালি কিছু ক্ষতি করে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু খোঁজ করে দেখা যায় যে পরিমাণ অর্থ সে দাবি করছে, সেই পরিমাণ খরচ হয়নি। আবার যারা পরীক্ষা করতে যাবে, তাদেরকেও আপনাদের ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন আবার অন্য কোনভাবে ওই অল্প ক্ষতিকে বড় ক্ষতি হিসেবে না দেখায়। তাই দাবি পরিশোধে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিসে বসেই ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু পূর্বপাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্সের বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এসময়ে তাজউদ্দিন আহমেদকে বীমা পেশায় নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর পিএস হিসেবে হানিফকে নিয়োগ দেন। বঙ্গবন্ধু বীমা পেশায় থেকে দেশের মানুষকে বীমা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবতেন। এ কারণে দেশ স্বাধীনের পরপরই বীমাখাত সংস্কারে হাত দেন। ১৯৭২ সালে তিনি ৪৯টি বীমা কোম্পানি জাতীয়করণ করেন। ১৯৭৩ সালে করপোরেশন এ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশন গঠন করেন। বীমা অধিদপ্তর গঠন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ করে গেছেন। অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সব জায়গায় হাত দিয়েছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছেন তিনি দেশ গঠনের। উন্নয়নের এই পথেই আসে আঘাত। তাকে হত্যা করা হয়। শুধু তাকে নয় পুরো পরিবারকে। এতে পরিবার শুধু নয় বাঙালি জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ জাতি তাদের সম্ভাবনাকে হারিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু করা হয়েছে। বার্ষিক ৮৫ টাকা দিয়ে একটা পলিসি করতে পারবে। এক্ষেত্রে নতুন বিবাহিত কাপল বীমা করলে সন্তান শিক্ষা সমাপনী পর্যন্ত আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না, এরকম ব্যবস্থা করতে হবে। বার্ষিক ২৮৫ টাকা দিয়ে একজন খেলোয়াড়ও নিজের জীবন সুরক্ষিত রাখতে পারবে। প্রবাসীদের জন্যও বীমার সুযোগ রাখা হয়েছে। চালু করা হয়েছে শস্য বীমা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, সাধারণ বীমা করপোরেশ, জীবন বীমা করপোরেশ এবং ইন্স্যুরেন্স একাডেমিকে শক্তিশালী করতে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্প চালু রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে একচ্যুয়ারির সংকট রয়েছে। এটি একটি বড় সমস্যা। তাই একচ্যুয়ারি তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে সরকার। এসব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার টাকাও দিবে সরকার। যারা এ সুযোগ নেবেন তাদের শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে আসতে হবে।

বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত ও শিক্ষা বীমাপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে গিয়ে সম্মাননা দিতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু করোনা আমাকে একরকম বন্দি করে দিয়েছে। কারণ আমি বের হলে হাজারখানেক লোকের কাজে সম্পৃক্ততা হয়। এতে ঝুঁকি তৈরি হয়। নিজের জন্য তো অন্যের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তবে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমরা টিকা নিয়ে আসছি। দেয়াও হচ্ছে। টিকা গ্রহণের পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, এগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।