আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির দাবি: শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১৩টি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে ১০টির সত্যতা পেয়েছে বলে দাবি করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র তদন্ত দল। এ ঘটনায় শাহরিয়ার আহসানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত দল।

এরইমধ্যে এসব দুর্নীতির ফলে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপনে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে গত ৪ এপ্রিল চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ‘একনাবিন’কে বিশেষ নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম। তবে তার পদবি বা কোন ঠিকানা উল্লেখ করেননি ওই অভিযোগপত্রে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে এই অভিযোগ দায়ের করেন। গেলো বছরের অক্টোবরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অভিযোগটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে দুদক।  

এই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের সদস্য মইনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি গত বছরের ৯ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করে এবং চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেছে কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল।

তদন্ত প্রতিবেদনে শাহরিয়ার আহসানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ আর্থিক সংশ্লিষ্ট ৮টি অভিযোগ তদন্তে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে গত ৪ এপ্রিল চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ‘একনাবিন’কে বিশেষ নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছে আইডিআরএ। একইসঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে এক মাস সময় বেধে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এসবিসি’র এমডি’র যেসব দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত দল:

শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে প্রমাণিত দুর্নীতিগুলো হলো- ঢাকাস্থ গুলশান-১ এ অবস্থিত এসবিসি’র দখলীয় দ্বিতল বাড়িটি টেন্ডার না করে নিজ ক্ষমতার মধ্যে বারবার আরএফকিউ এর মাধ্যমে সাড়ে ৬১ লাখ টাকা ব্যয়, যা বিধি ও ক্ষমতা বহির্ভূত; সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া বাড়িতে বসবাস করেও ৯০ হাজার টাকা বেতনের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া গ্রহণ; বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যায়ভাবে বদলি করণ;

পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের বকেয়া প্রায় ১১৮০ কোটি টাকা, পুনর্বীমার অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম এবং পুনর্বীমা বিভাগ ও পুনর্বীমা হিসাব বিভাগ একজন ডিজিএম’র মাধ্যমে পরিচালনা করে অনিয়ম-দুর্নীতির আড়াল করা; সরকারি নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে সিলেকশন কমিটির সুপারিশ ছাড়াই গাড়ি চালক পদে নিয়োগ এবং সরকারি অনুমোদন বিহীন ও মামলা থাকা অবস্থায় চারজন লিফটম্যান নিয়োগ;

সরকারি আর্থিক নীতি উপেক্ষা করে এসবিসি’র তহবিল বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা; নিয়ম ভেঙ্গে নিজের জন্য কোটি টাকার জিপ গাড়ি ক্রয়; চুক্তি ছাড়াই ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য সংস্কার কাজে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়; এসআরও’র নির্দেশনা অমান্য করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম ঋণ অনুমোদন এবং আয়কর উপদেষ্টা নিয়োগের নামে বেতন ভাগ-বাটোয়ারা।

তদন্ত দলের সুপারিশ:

উল্লেখিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়ায় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত দল। একইসাথে এসব দুর্নীতির ফলে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপনে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্ত দল।

আর্থিক সংশ্লিষ্ট যেসব দুর্নীতি তদন্ত করবে বিশেষ নিরীক্ষক:

শাহরিয়ার আহসানের বিরুদ্ধে আর্থিক সংশ্লিষ্ট ৮টি দুর্নীতির ক্ষতি নিরূপন করবে বিশেষ নিরীক্ষক। সেগুলো হলো- ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাসভবন (গুলশান-১ এ অবস্থিত এসবিসি’র দখলীয় দ্বিতল বাড়ি) পুনরায় মেরামত করার জন্য সাড়ে ৫৮ লাখ টাকার বেশি ব্যয়, সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া বাড়িতে বসবাস করেও বাড়ি ভাড়া গ্রহণ; নিয়ম ভেঙ্গে নিজের ব্যবহারের জন্য কোটি টাকার জিপ গাড়ি ক্রয়;

চুক্তি ছাড়াই ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য সংস্কার কাজে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়; পুনর্বীমা প্রিমিয়ামের প্রায় ১১৮০ কোটি টাকা বকেয়া রাখাসহ পুনর্বীমার অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম; এসআরও’র নির্দেশনা অমান্য করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম ঋণ অনুমোদন; সরকারি আর্থিক নীতি উপেক্ষা করে এসবিসি’র তহবিল বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রাখা এবং আয়কর উপদেষ্টা নিয়োগের নামে বেতন ভাগ-বাটোয়ারা।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হয়। তবে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন উল্লেখ করে আগামীকাল (১৪ জুন, ২০২১) বেলা এগারটার পরে যোগাযোগ করতে বলেন।