অর্থ সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা আইডিআরএ’র

আবদুর রহমান: 

বীমা কোম্পানিরগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নিবন্ধন নবায়ন ফি তুলে দিলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’র খরচ চলবে কিভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আইডিআরএ’র আয়ের প্রধান উৎস কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি। এটি বন্ধ করে দিলে অর্থ সংকটে পড়বে আইডিআরএ। এক্ষেত্রে আইডিআরএ’র খরচের জন্য ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে।

গত ২১ মে বীমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়নে কোন ফি দিতে হবে না বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বীমাকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা দেয়া থেকে বেঁচে যাবে দেশের ৭৭টি বীমা কোম্পানি। অন্যদিকে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইডিআরএ’র মূল আয় আসে কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি থেকে । এ দিয়ে সংস্থাটির খরচ চলে। এ ফি তুলে দেয়া হলে তহবিল ঘাটতি দেখা দেবে। তা হলে আইডিআরএ কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন দিবে কি করে। এছাড়া বীমা খাতের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ সেমিনার, মেলাসহ নানা উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়বে সংস্থাটি।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০-এর ধারা ১৬(১) অনুসারে ১১টি খাত থেকে আইডিআরএ অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। যদিও আইডিআরএ গঠনের পর থেকে মাত্র ৩টি খাত থেকে আয় করেই আইডিআরএ’র খরচ চলছে।

২০১৪ সালে আইডিআরএ প্রকাশিত ৫ বছরের খাতভিত্তিক অর্জনের প্রতিবেদনে ৩টি খাত থেকে কর্তৃপক্ষ আয় করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খাতগুলো হলো- রিনিউয়াল/ রেজিস্ট্রি ফিস, এজেন্সি লাইসেন্স ফিস ও জরিমানা।

২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদন অনুসারে, আইডিআরএ প্রতিষ্ঠার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আয় হয় প্রায় ১ কোটি ৫১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত আয় হয় প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। ২০১২ সালের জুন থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত আয় হয় প্রায় ৩১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত আয় হয় প্রায় ৩২ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। 

এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আইন লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানি, ব্যক্তি এবং শাখাগুলোকে জরিমানা করা থেকে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

বীমা ব্যবসা নিবন্ধন ফি বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি ৩(২) অনুসারে বীমা ব্যবসার নিবন্ধন নবায়ন ফি হবে প্রতি হাজারে গৃহীত গ্রস প্রিমিয়ামের বিপরীতে ৩ দশমিক ৫ টাকা। এছাড়া নিবন্ধন ফি বিধিমালা অনুসারে, বীমাকারী কর্তৃক পরিচালিত বীমা ব্যবসার প্রত্যেক শ্রেণী এবং উপ-শ্রেণীর নিবন্ধন ফি হবে ১ লাখ টাকা এবং নিবন্ধন সনদের প্রতিলিপি সংগ্রহের ফি হবে ১ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০-এর ধারা ১৬(১)-তে কর্তৃপক্ষের তহবিল সম্পর্কে বলা হয়েছে-  এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকিবে এবং উহাতে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথা- সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান; কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান; কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ঋণ; বীমাকারী হইতে নিবন্ধীকরণ ও নবায়ন ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ; বীমাকারীর উপর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত জরিমানালব্ধ অর্থ; নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরীকৃত বীমা কোম্পানীর প্রিমিয়ার আয়ের একটি নির্ধারিত অংশ; ব্রোকার, বীমা জরিপকারী এবং বীমা এজেন্ট নিয়োগের ফলে প্রাপ্ত ফি; সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোন বিদেশী সরকার, সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা হইতে প্রাপ্ত অনুদান; কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ অর্থ; অন্য কোন উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ; এবং বিনিয়োগ খাতে প্রাপ্ত আয়।