প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে ৩ কোটি টাকার নিয়ম বহির্ভূত হিসাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে একটি খাতেই ৩ কোটি টাকা নিয়ম বহির্ভূত হিসাব দেখিয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। শেয়ার ব্যবসার লোকসানকে দেখানো হয়েছে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে। বিনিয়োগ ও সলভেন্সি মার্জিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতেও গড়মিল হিসাব দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটির ২০১৭ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ২০১৭ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০৬ নম্বর পাতায় উল্লেখিত প্রফিট এন্ড লস একাউন্টে এক্সপেন্স অব ম্যানেজমেন্ট হিসেবে শেয়ার বিক্রিতে লোকসানের ৩ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭২০ টাকা দেখানো হয়েছে।

অথচ হিসাব বিশেষজ্ঞদের মতে, টোটাল ইনকাম লেস এক্সপেন্স অব ম্যানেজমেন্ট হিসেবে এই টাকা দেখানোর কোন সুযোগ নেই।  

তবে স্বচ্ছতার খাতিরে এ হিসাব দেখানো হয়েছে বলে দাবি কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার। এ হিসাবের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

বিষয়টিকে আইন বিরোধী ও গোঁজামিল হিসাব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হিসাবের নিয়ম অনুযায়ী এটি আলাদা খাতে দেখানো হয়ে থাকে। লোকসানকে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে দেখিয়ে জনগণের টাকার ক্ষতির দায়-দায়িত্বকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে কোম্পানিটি, মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।

একইভাবে প্রতিবেদনের ১৭৭ নম্বর পাতায় টোটাল এসেট (মোট সম্পদের পরিমাণ) হিসেবে ১২২ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ সলভেন্সি মার্জিনে টোটাল এসেট দেখানোর বিধান নেই। উল্লেখিত শিরোনামে বিনিয়োগ অর্জিত আয় ও নগদ অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়। এক্ষেত্রেও সলভেন্সি মার্জিনের নীতিমালা পালন করা হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  

এ ছাড়াও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ২০১৭ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের ২০৬ নম্বর পাতায় ২৪ নম্বর নোট এ ২ কোটি ৪১ লাখ ৯ হাজার ৭৩৪ টাকা শেয়ার ট্রেডিং বাবদ আয় দেখানো হয়েছে। যা বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ বিধির পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন বীমা বিশ্লেষকরা।

এদিকে প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম আয় ২৫.০৬ শতাংশ বেড়েছে বলে দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার ৩.২৯ শতাংশ কমেছে। সঙ্গতকারণেই বিনিয়োগ বাড়ার কথা। অথচ ২০১৭ সালে কোম্পানিটির বিনিয়োগ কমেছে ২৪.২১ শতাংশ।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদী খানম বলেন, অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে কোন অন্তর্ভুক্তি সম্পদ এবং দায়-দেনা অথবা আয় এবং ব্যয় হিসাবের বাইরে রাখা যায় না, যদি না তা বিএফআরএস কর্তৃক কাঙ্খিত বা অনুমোদিত হয়। এ ছাড়া স্বচ্ছতার কারণে বার্ষিক হিসাব প্রতিবেদনে আমরা এটাকে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন করেছি।

তিনি আরো বলেন, সলভেন্সি মার্জিন হিসাব করতে মোট সম্পদ থেকে কিছু শূন্যমূল্য সম্পদ এবং সকল দায়-দেনাকে বিয়োগ করে অর্জিত সলভেন্সি বের করতে হয়।

আইডিআরএ সম্পদ বিনিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য কাজ করছে। আইডিআরএ সম্পদ বিনিয়োগের নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সে নীতিমালা অনুসারে কোম্পানির সম্পদ পুনর্বিন্যাস করে নিব। যাহোক, স্বচ্ছতার জন্য আমরা বার্ষিক প্রতিবেদনে সব বিষয়ের সঙ্গে নন-অপারেটিং আয় হিসেবে শেয়ার বিনিয়োগ থেকে আয়কে দেখিয়ে গেছি, বলেন মোহাম্মদী খানম।

তিনি আরো বলেন, রেভিনিউ অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থাপনা ব্যয় ২০১৬ সাল থেকে ৫.৪৭% বেড়েছে। বিগত বছরগুলোতে শেয়ারে বিনিয়োগও ২৪% বেড়েছে। বিল্ডিং খাতে খরচের কারণে কোম্পানির মোট বিনিয়োগ ২৪% কমেছে। আগের বছরের হিসেবে এটা বিল্ডিং ক্রয়ের অগ্রিম প্রদেয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।