ডিলারদের বীমা করতে সার সমিতিকে ৫ লাখ টাকা সেলামী দিয়েছে সোনালী লাইফ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশের সার‌ ডিলারদের গোষ্ঠী বীমা করতে ৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা সেলামী ও ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সার ডিলারদের পক্ষে বীমা গ্রহীতা বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন এ টাকা নেয়াকে বলছে 'অন্যকিছু', আর বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফ বলছে আমরা নিজেদের প্রচারণার জন্য এসোসিয়শনকে অনুদান দিয়েছি। যদিও গোষ্টী বীমার এ চুক্তির আগে এ ধরণের অনুদান ও সেলামী দেয়ার কোনো নজির সোনালী লাইফের নেই।

তবে এ ধরণের লেনদেনকে ঘুষ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন বীমা সংশ্লিষ্ঠরা। তাদের মতে, বীমা আইন ও দেশের প্রচলিত আইন কোনো আইনেই এ ধরনের অবৈধ লেনদেন করার সুযোগ নেই। এটা ঘুষ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের অবৈধ এ লেনদেনের বিষয়ে সুষ্ট তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা। একই সেক্টরে থেকে নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির অনিয়ম নিয়ে কথা বলা বিব্রতকর বলে সকলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

তাদের মতে, দেশের বীমাখাত নিয়ে সাধারণ মানুষের খুবই নেতিবাচক ধারণা। এমন অবস্থায় ব্যবসা করতে কোম্পানিগুলো এ ধরণের অবৈধ লেনদেন বা ঘুষ দেয়ার প্রবণতা সৃষ্টি  হলে তা হবে বীমাখাতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাদের মতে, দেশের গ্রুপ বীমার বাজারটি সবেমাত্র গড়ে উঠছে। এমন একটি অবস্থায় সোনালী লাইফের মত নতুন একটি বীমা কোম্পানির এ ধরণের আচরণ বীমাখাতের জন্য ক্ষতিকর।

উল্লেখ্য, বীমা আইন ২০১০ এর ৫৮ ধারার উপ-ধারা ১ এ বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা অর্জন বা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বীমা এজেন্ট বা এজেন্ট নিয়োগকারী বা ব্রোকার ব্যতিত অন্য কাহাকেও কমিশন বা অন্য কোন নামে কোন পারিশ্রমিক বা পারিতোষিক পরিশোধ করিবে না বা প্রদান করার জন্য কোন চুক্তি করিবে না।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের (বিএফএ) সর্বশেষ র্বার্ষিক হিসাব ও নিরীক্ষিত হিসাবের ১৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সালে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনকে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সেলামী দিয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার। আর ২০১৫-১৬তে সেলামী দিয়েছে ৯৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সোনালী লাইফ টাকা দিয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা

জানা যায়, গ্রুপ বীমার  আওতায় সারা দেশের সার ডিলারদের পলিসি করে সোনালী লাইফ। ডিলাদের পক্ষ থেকে বীমা কোম্পানিটির সাথে এ চুক্তি করে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ)। প্রথমবার এ পলিসি করা হয় ২০১৬ সালে। সংগঠনটির ৬ হাজার সদস্য এ বীমা সুবিধা পায়। এ জন্য বীমার প্রিমিয়াম বাবদ ২০১৬ সালে প্রতিজন সদস্য চাঁদা দিতেন ২ হাজার টাকা।  ২০১৭ সাল থেকে তা ১ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ এখন প্রত্যেক সদস্য চাঁদা দিচ্ছেন ৩ হাজার টাকা। বর্তমান চুক্তি অনুসারে সদস্যার মারা গেলে তার পরিবার বা নমিনি পাবেন ৩ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যকোনো সুবিধা পাবেন না। তবে বীমা কোম্পানির নেটওয়ারর্কভুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসায় নির্দিষ্ট হারে ছাড় পান সদস্যরা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের প্রধান হিসাব রক্ষক মো. মিজবাহ উদ্দিন সোহাগের সাথে আলাপ করেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র এই প্রতিবেদক। এ সময় তিনি সোনালী লাইফ থেকে প্রাপ্ত সেলামী ও অনুদানের বিষয়ে বলেন, এগুলো বীমা দাবির কোন টাকা নয়। এগুলো অন্যকিছু। সোনালী লাইফ কেন এ টাকা দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের বিষয়, আপনাদের জানা প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে তিনি আর কোন কথা বলতে রাজি হননি।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত চন্দ্র আইচ বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনকে টাকা দেয়ার বিষয়টি ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি দাবি করেছেন, সংগঠনটির বার্ষিক সাধারণ সভায় বীমা কোম্পানির প্রচারণার জন্য স্পন্সরশিপ বাবদ এসব টাকা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং প্রাণ আরএফএল কোম্পানি বিএফএ'র বার্ষিক সাধারণ সভায় স্পন্সর করে থাকে। সংগঠনটির সব ধরণের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারে এ দুই প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগে ব্যবহার করা হয়। এসবই করা হয় শুধুমাত্র প্রচারণার জন্য। অনুষ্ঠানটিতে ১০-১৫ হাজার লোক উপস্থিত থাকে বলেও জানান অজিত চন্দ্র আইচ।

সোনালী লাইফের এই মূখ্য নির্বাহী বলেন, প্রতি বছর স্পন্সরশিপ বাবদ ৫/৬ লাখ টাকা দেয়া হয় বিএফএ'কে। তবে সুনির্দিষ্ট হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, হিসাব কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন। তবে অন্যকোন একদিন আসলে এ হিসাব দেয়া যাবে। এ বিষয়ে তিনি বিএফএ'র কোম্পানি সেক্রেটারির সঙ্গেও যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।