মূখ্য নির্বাহীদের দৃষ্টিতে ২০১৮ সালের বীমাখাত

আবদুর রহমান আবির: অনেক ধরণের আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তা থাকলেও ভালোই কেটেছে ২০১৮ সাল। মোটামুটিভাবে ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকেই এগিয়েছে বীমাকারীরা। বিদায় বছরে কোম্পানিগুলোর গ্রাহক সেবায় গুরুত্ব পেয়েছে তথ্য প্রযুক্তি। দাবি পরিশোধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশের বীমাখাত। ২০১৮ সালের এই অভিজ্ঞতার আলোকে ২০১৯ সালে আরো এগিয়ে যাবে দেশের বীমাখাত- এমনটাই প্রত্যাশা মূখ্য নির্বাহীদের।

ফারজানা চৌধুরী, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালে আমাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালোই হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়েও ভালো ছিল। আশা করছি ২০১৯ সালও ভালো যাবে। গত বছর আমাদের কয়েকটি বড় ক্লেইম পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও বছরটি আমাদের ভালোই কেটেছে। দাবি পরিশোধ করা তো বীমা ব্যবসারই অংশ।

২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ব্যবসা ব্যাহত হয়নি। হরতালের মতো ব্যবসা ব্যাহতকারী কোন ঘটনাও ঘটেনি। তাছাড়া একই সরকারের ধারাবাহিকতা। তাই আশা করছি আমাদের ব্যবসার ধারাবাহিকতাও বজায় থাকবে। বরং আগের চেয়ে ভালো ব্যবসা হবে বলেই প্রত্যাশা।

মো. আজিজুল ইসলাম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সাল ভালোই কেটেছে। আমাদের ব্যবসাও বেশ ভালো হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে বছরের শেষ ৩ মাস একটু মন্দা গেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে বলবো বছরটি ভালোই কেটেছে।

আর নতুন বছরের শুরুটা খারাপ হয়নি। এখনো অস্বাভাবিক কিছু দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবেও খারাপ কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। তাই আশা করছি বছরটি ভালোই যাবে। তাছাড়া নেতিবাচক চিন্তা না করাই ভালো।

মো. মনিরুল ইসলাম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালে অনেক ভালো ব্যবসা হয়েছে। ২০১৭ সালের চেয়ে বছরটিতে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আশা করছি ২০১৯ সালে আরো বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। আমরা এখন সব ধরণের পলিসি গ্রহণ করছি না, বরং বেছে বেছে পলিসি করছি। ব্যবসা করতেই হবে এমন অবস্থান থেকে আমরা সরে এসেছি।

গত বছরে জাতীয় নির্বাচন হলেও আমাদের ব্যবসায় কোন প্রভাব পড়েনি। বীমা শিল্পের উন্নয়ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমদানি-রপ্তানি বাড়লে আমাদের ব্যবসার গুরুত্বও বাড়ে। আমরা আশা করছি ২০১৯ সালে বীমাখাতের অবস্থা আরো ভালো হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. শফিক শামিম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি), সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সাল ভালোই গেছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনায় বড় বীমা দাবি পরিশোধ করার পরও আমাদের ব্যবসা ভালো হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে কিছু এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার পর বাতিল হয়েছে। আশা করি এ বছর সেগুলো আবার খোলা হবে।

সরকার পরিবর্তনের সাথে বীমা ব্যবসার সরাসরি কোন সম্পর্ক না থাকলেও আমরা মনে করি সরকারের ধারাবাহিকতার মতোই এবার ভালো বীমা ব্যবসার ধারাবাহিকতাও বজায় থাকবে। কারণ নতুন কিছু আসলে সেটা স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় নেয়। ২০১৯ সালে আমরা আরো ভালো করতে চাই এবং এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদি।

জামাল এম এ নাসের, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স

২০১৮ সাল ছিল আমাদের ব্যবসা সফল বছর। সকল ধরণের বীমা পলিসিই গ্রাহকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়েছে।

বিদায় বছরে আমরা দ্রুত গ্রাহকসেবা দিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করি ভালো ব্যবসা করার জন্য ভালো গ্রাহকসেবা প্রদান করা আবশ্যক। ২০১৯ সালও ভালো যাবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এমএম মনিরুল আলম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

গেল বছরটি আমাদের ভালোই কেটেছে। আমরা আমাদের প্রত্যাশার কাছে পৌঁছতে পেরেছি। ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা হয়েছে। আশা করছি ২০১৯ সালও ভালো যাবে। এ বছর ৩০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছি।

২০১৮ সালে আমাদের ডিজিটাল কাস্টমার কেয়ার চালু এবং ডিজিটাল চ্যানেলে প্রোডাক্ট সেলিং শুরু হয়েছে। এটাতে আমরা বেশ সাড়া পাচ্ছি। গ্রাহক সেবায় আমরা প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা আশা করছি আমাদের এ উদ্যোগ বীমাখাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

মো. শামসুল আলম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে সময় কেটেছে। কিন্তু তারপরও ব্যবসা ভালো হয়েছে। দাবি পরিশোধ কেন্দ্র করে গ্রাহকের আস্থাহীনতাও বেশ বাধার সৃষ্টি হয়েছে বীমা ব্যবসায়।

তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপ এবং বীমা কোম্পানিগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টা বীমাখাতের জন্য সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। আমরা আশা করি ২০১৯ সালে অতীতের বাধা-বিপত্তি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যা বীমা ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নেবে।

এসএম নুরুজ্জামান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি), জেনিথ ইসলমী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৮ সালে আমাদের ব্যবসা ভালোই হয়েছে। নির্বাচনের বছর হওয়ার পরও সে ধরণের কোন সমস্যা হয়নি। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আমরা মনে করছি ভালো ব্যবসার এই ধারাও বজায় থাকবে।

গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে আমরা প্রযুক্তির ওপর জোর দিচ্ছি। ২০১৯ সালে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।