জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে ৪ কোটি টাকা বেশি দেখিয়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক: জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে ৪ কোটি টাকা বেশি দেখিয়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি ভবনে তিনটি গাড়ি পার্কিংসহ ১০ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর কিনতে এই মূল্য বেশি দেখানো হয়। এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে অভিযোগ দাখিল করেছেন নূরানী গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জাকারিয়া হোসেন চৌধুরী। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই অভিযোগ দাখিল করা হয়।

তথ্য অনুসারে, ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ‘প্রীতম জামান টাওয়ার’ নামের ভবনের ৫ম তলায় (লেভেল ৫) ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস ও তিনটি গাড়ি পার্কিং কেনার জন্য পাইওনিয়ার বিল্ডার্স লিমিটেডের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় মেঘনা ইন্স্যুরেন্স। ওই চুক্তিপত্রে এর মোট মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা। যেখানে প্রতি বর্গফুটের মূল্য ১১ হাজার টাকা হিসেবে ১১ কোটি টাকা এবং তিনটি গাড়ি পার্কিয়ের জন্য প্রতিটির মূল্য ৪ লাখ টাকা হিসেবে ১২ লাখ টাকা।

মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের পক্ষে ওই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তালুকদার মো. জাকারিয়া হোসেন। অন্যদিকে পাইওনিয়ার বিল্ডার্সের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবু সঞ্জিত কুমার দাস। এই চুক্তির স্বাক্ষী ছিলেন মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এম জি এ মামুন এবং পাইওনিয়ার বিল্ডার্সের অসিত কুমার দাস ও ফারুখ হোসেন।   

এদিকে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ৭৮ নম্বর পৃষ্ঠায় অ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও প্রিপেমেন্টস সংক্রান্ত ১৯ নম্বর নোটের শুরুতেই অফিস স্পেস কেনার জন্য অগ্রিম বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

এই নোটের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতম জামান টাওয়ার, ৩৭/২, পুরানা পল্টন, ঢাকা এর ৫ম তলায় (লেভেল ৫) ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস ও তিনটি গাড়ি পার্কিং কেনার জন্য পাইওনিয়ার বিল্ডার্স লিমিটেডের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছে। যার সর্বমোট মূল্য ১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

অর্থাৎ ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সম্পাদিত চুক্তিপত্রে নির্ধারিত জমির মূল্যের চেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি দেখানো হয়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। এ ছাড়াও বীমা কোম্পানিটির ওই আর্থিক প্রতিবেদনে জমি ক্রয়ের চুক্তিপত্র সম্পাদনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। অথচ চুক্তিপত্রটি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই।

এ বিষয়ে জানতে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে তিনি বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের। আর আমি এখানে যোগদান করেছি চলতি বছরের জানুয়ারিতে। যার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই।  তাই আগে আমাকে জানতে হবে, তারপর এ বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, আমি যতদূর জানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটি এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা অগ্রসর হওয়া যায়নি। প্রতিবেদন তৈরি হলে বিষয়টি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।