বীমার টাকা পেতে যে কারণে মামলা করছেন গ্রাহকরা  

আবদুর রহমান আবির: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ দফা অভিযোগ করেছেন পদ্ম ইসলামী লাইফের মৌলভী বাজারের ৬৭ জন গ্রাহক। এসব গ্রাহকের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২ বছর আগে। ভুক্তভোগী এই গ্রাহকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও তারা দুর্নীতি দমন কমিশন, অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগেও পাওনা টাকা আদায়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু দফায় দফায় অভিযোগ করেও কোন সুরাহা না হওয়ায় এখন আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা

এসব বীমা গ্রাহক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর, ১১ অক্টোবর, ১২ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ২ জানুয়ারি অভিযোগ করেছেন। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে এই অভিযোগ করার আগে মৌলভী বাজারের পদ্মা ইসলামী লাইফের স্থানীয় কার্যালয় ও ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে মাসের পর মাস যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি।

গ্রাহকরা জানিয়েছেন, পদ্মা ইসলামী লাইফের মৌলভীবাজার জোনাল হেড কোয়ার্টারের আওতাধীন ৬৭ জন বীমা গ্রাহকের পলিসির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দু’বছর হলো। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করার পর নির্বাহী রশিদও পেয়েছেন অনেক বীমা গ্রাহক। তবে এখন পর্যন্ত মেয়াদোত্তর বীমা দাবির চেক হাতে পাননি এসব গ্রাহক। আবার ১০ থেকে ১২ বছর মেয়াদী এসব বীমা পলিসিতে মুনাফা দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে ৫ শতাংশ।

বীমা গ্রাহক খোয়াজ আলী বলেন, আমার বীমা পলিসির (নং- ৭০১৬৯২-৬) মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের নভেম্বরে। এরপর টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। সব কাগজপত্রও জমা দিয়েছি। বেশ কিছু দিন পর স্থানীয় অফিসে খোঁজ নিলে কর্মকর্তারা জানান কোম্পানির ফান্ড সংকট রয়েছে। তাই টাকা দিতে একটু দেরি হবে। ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হচ্ছে। এরপর আরো অনেকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু দিচ্ছে দিবে করে এখন পর্যন্ত সে টাকা আমি পাইনি। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদন করেও লাভ হয়নি। আমরা আইনজীবীর সাথে কথা বলেছি। আদালতে মামলা করা ছাড়া ন্যয্য পাওনা আদায়ে আর কোনো পথ নেই।

আরেক বীমা গ্রাহক মো. আলী (পলিসি নং- ৫৭০৪০৫১-১) বলেন, প্রয়োজনের সময় কাজে লাগবে বলে বীমা করেছিলাম। কষ্ট করে দীর্ঘ দিন বীমার কিস্তি পরিশোধ করেছি। এখন মেয়াদ শেষ হয়েছে, কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। এই করোনার সময় আয়-রোজগার নাই বললেই চলে। অভাবের কারণে মাঝে মধ্যে ঘরে খাবারও থাকে না। এই সময় বীমা টাকাটা পেলে বড় উপকার হতো। এই আশা নিয়ে কোম্পানির কাছে বারবার দৌড়া-ঝাপ করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত টাকা পেলাম না। কবে পাবো তাও জানি না।

সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানি ও সরকারি সংস্থাগুলোতে অভিযোগ করে টাকা আদায় না হওয়ায় ভুক্তভোগী এসব গ্রাহক মামলা করার প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যেই তারা ২ দফা উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

ভুক্তভোগী এসব গ্রাহক আরো জানিয়েছেন, কোম্পানিটির কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও বীমা টাকা তুলতে না পেড়ে বাধ্য হয়ে তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। মৌলভীবাজার জজকোর্টের আইনজীবী আবদুস সামাদের মাধ্যমে তারা পদ্মা ইসলামী লাইফকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। অর্ধমাস সময় দিয়ে ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর প্রথম দফা এবং ২৫ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় এই নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নোটিশের জবাব দেয়নি পদ্মা ইসলামী লাইফ। তাই এখন তারা আদালতে যাবেন টাকা আদায় করতে।

গ্রাহকদের আইনজীবী আবদুস সামাদ মামলার বিষয়ে এই প্রতিবেদককে জানান, গ্রাহকরা ইতোমধ্যে পাওনা টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। তিনি বলেন, বীমা আইন অনুসারে পলিসির মেয়াদ শেষে ৯০ দিনের মধ্যে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া আছে। এই সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে সুদসহ টাকা ফেরত দিতে হবে। গ্রাহকদের টাকা আদায়ে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে ২ দফা উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু নোটিশ দেয়ার পরও তারা কোন সাড়া দিচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কোন নোটিশের জবাব দেয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম- লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর কোম্পানিটি তার গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করে দিবে। এ জন্য আমরা তাদের সময়ও দিয়েছি। তাই এখন পর্যন্ত আমরা কঠোর কোন পদক্ষেপ নেইনি। তবে দু’দফা নোটিশের কোন জবাব না দেয়ায় এখন আর অপেক্ষা নয়। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আদালতের মাধ্যমেই আমরা ভুক্তভোগী এসব বীমা গ্রাহকের পাওনা টাকা আদায় করবো।

বীমার টাকা আদায়ে গ্রাহকদের পাঠানো উকিল নোটিশের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় পদ্মা ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিসি) মো. মোরশেদ আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি। কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে মেসেজ দিলেও কোন সাড়া দেননি তিনি।

এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র সদস্য মো. দলিল উদ্দিন বলেন, এ রকম কোন অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে কিনা সেটা দেখতে হবে। আমাদের অনেক সেকশন আছে, তাই কাগজপত্র না দেখে কিছু বলতে পারছি না। তবে আপনার রেফারেন্সে এসব গ্রাহকের কাউকে পাঠিয়ে দিলে আমরা ত্বড়িত কোন ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো।