নিম্নমূখী নন-লাইফের মুনাফা

আবদুর রহমান: নিম্নমূখী দেশের নন-লাইফ বীমাখাতের মুনাফা। ২০১২ সালের পর থেকেই কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে শুরু করে। আর নীট মুনাফা কমছে ২০১৩ সালের পর থেকে। ২০১০ সালে কোম্পানিগুলোর মোট মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬৫.৮৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে -০.৩৯ শতাংশ। একই সময়ে নীট মুনাফার প্রবৃদ্ধি ৭১ শতাংশ থেকে -১.৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

দেশের বীমাখাত নিয়ে প্রথমবারের মতো পরিচালিত "বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বীমাখাত" শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে এ চিত্র। সরকারি-বেসরকারি ৭৮টি বীমা প্রতিষ্ঠানের ২০০৯-২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আইডিআরএ'র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) খলিল আহমদ। সিলেটে অনুষ্ঠিত বীমা মেলা ২০১৭ উপলক্ষে প্রকাশিত সুভ্যেনিয়রে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় বলা হয়েছে, সাধারণ বীমাখাতে বার্ষিক মোট মুনাফা পাঁচশ' কোটি টাকা এবং নীট মুনাফা সাড়ে তিনশ' কোটি টাকার মত। ২০০৯-২০১৬ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় এর মুনাফা বাড়ছে, তবে ক্রমহ্রাসমান হারে। ২০১৬ সালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রথম ভাল ১০টি কোম্পানির মুনাফার অংশ মোট ও নীট উভয় ক্ষেত্রে মুনাফার ৫০ শতাংশের ওপরে, ছোট কোম্পানিসমূহের মুনাফার অংশ খুবই নগন্য। কোম্পানিগুলোর প্রদত্ত তথ্য অনুসারে দেখা যায় কোন কোম্পানি ক্ষতির মধ্যে নেই।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে নন-লাইফ বীমাখাতে মোট মুনাফার পরিমাণ ২৪৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যা ২০১০ সালে ৬৫.৮৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। তবে পরের বছর ২০১১ সালে মুনাফার পরিমাণ ২৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ৩৭৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এরপর ২০১২ সালে মোট মুনাফায় ৭৮.০১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখায় নন-লাইফ বীমাখাত। এ সময় কোম্পানিগুলোর মোট মুনাফার পরিমাণ ৬৭২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

তবে ২০১৩ সাল থেকেই ঋণাত্মক ধারা নামতে শুরু করে দেশের নন-লাইফ বীমাখাতের মোট মুনাফা। আগের বছরের চেয়ে ১৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কমে বছরটিতে মুনাফা দাঁড়ায় ৫৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১২ সালের চেয়ে ২০১৩ সালে মুনাফা কমে যায় ২০.৭৬ শতাংশ। এরপর ২০১৪ সালে নন-লাইফ বীমাখাতে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। যা আগের বছরের চেয়ে ২৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা ৪.৫৮ শতাংশ কম।

২০১৫ সালে নন-লাইফ বীমাখাতে মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ০.৯৬ শতাংশ কম। ২০১৬ সালেও কমে গেছে দেশের নন-লাইফ বীমাখাতে মুনাফা। ২০১৫ সালের তুলনায় ২ কোটি টাকা বা ০.৩৯ শতাংশ কমে ২০১৬ সালে মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, নীট মুনাফাও কমে যাচ্ছে দেশের নন-লাইফ বীমাখাতে। ২০১০ সালে নীট মুনাফায় সর্বোচ্চ ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১১ সালে তা সর্বনিম্ন -১৬.৬০ শতাংশে নেমে যায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে নীট মুনাফার প্রবৃদ্ধি ৮৭.৬০ শতাংশ কমে যায়। ২০০৯ সালের নীট মুনাফা ছিল ১৮৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ২০১০ সালে ১৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ৭১ শতাংশ বেড়ে নীট মুনাফা দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এরপর ২০১১ সালে নীট মুনাফা আবারো কমে দাঁড়ায় ২৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

২০১২ সালে ২৩.১২ শতাংশ বা ৬২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেড়ে নীট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৩২ কোটি ৯৬ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩ সালে নীট মুনাফার প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১২.৯৭ শতাংশ, তবে আগের বছরের চেয়ে ১০.১৫ শতাংশ কম। বছরটিতে নীট মুনাফার পরিমাণ ৩৭৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।  এরপর আবারও কমতে শুরু করে দেশের নন-লাইফ বীমাখাতের নীট মুনাফা।

২০১৪ সালে এখাতে নীট মুনাফার প্রবৃদ্ধি -৪.৬৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের চেয়ে ১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ১৭.৬১ শতাংশ কমে ২০১৪ সালে নীট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৫৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমে নীট মুনাফা দাঁড়ায় ৩৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বছরটিতে প্রবৃদ্ধি -১.৯৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে নীট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দাঁড়ায় ৩৪৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।