বীমা খাতের দুর্নীতি ঠেকাতে আইনের সংশোধন চায় দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা খাতের দুর্নীতি ঠেকাতে বীমা আইন ২০১০ এর সংশোধন চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ থাকার পরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না দুদক। তাই বীমা আইন ২০১০ এর ১৫৮ ধারার সঙ্গে ১৫৮ক ধারা সংযু্ক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে এক সভা হওয়ার কথা ছিল। তবে অনিবার্য কারণবশত তা পিছিয়ে দিয়ে ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন এ ধারা সংযুক্ত করা হলে বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারি পাবালিক সারভেন্ট বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হবেন।

সূত্র মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করতে সংশোধনীর এ প্রস্তাব মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠায় দুদক। এরপর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়।

এর আগে ২৬ জুলাই ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ০৩/২০১৭ নং সভায় বীমা আইন ২০১০ সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

আইনটি সংশোধনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরে দুদক। এতে বলা হয়, বীমা কোম্পানি বীমা সংক্রান্ত কাজ সম্পাদন করলেও মূলত জনগণের সাথে আর্থিক লেন-দেন করাই তাদের কাজের প্রকৃতি। সে কারণে তাদের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। কিন্তু ১৯৯৩ সালের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞায় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এ ছাড়া, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১১০ এ ব্যাংক কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়েছে কিন্তু বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

অন্যদিকে এই আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দুদক জানায়, বীমা কোম্পানিসমূহের দুর্নীতির প্রচুর অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বীমা কোম্পানিসমূহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য না থাকায় এবং বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে গণ্য না থাকায় এ সমস্ত অভিযোগের কোন প্রতিকার করা সম্ভব হচ্ছে না।

সে কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১১০ এর অনুসরণে বীমা কোম্পানি আইন, ২০১০ এর ধারা ১৫৮ এর পর প্রস্তাবিত আকারে ধারা ১৫৮ক সন্নিবেশ পূর্বক সংশোধন আবশ্যক।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ জুন শনিবার বীমা খাতের একমাত্র অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি ‘বীমা গ্রাহকদের ১৭৮১ কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছে ১৭ লাইফ বীমা কোম্পানি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করে।

ওই সংবাদের ভিত্তিতে ওই বছর ২১ জুন মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন ১৭ লাইফ বীমা কোম্পানিতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে। উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে অনুসন্ধান কাজের তদারকির দায়িত্ব দেয় হয়।

এরপর থেকেই বীমা খাতের দুর্নীতি রোধে সক্রিয় হয়ে ওঠে দুদক।