খরচ বেশি হওয়ায় মুনাফা পাচ্ছে না গ্রাহক: আহসানুল ইসলাম টিটু

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের অভিমত। সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসানুল ইসলাম টিটু’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:

সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ক্ষুদ্রবীমা মূলত অল্প আয়ের মানুষের জন্য। ক্ষুদ্রবীমার পলিসির মাসিক কিস্তির পরিমাণ খুব বেশি না। গ্রাহকরা মাসে ১০০ টাক কিস্তি বা প্রিমিয়াম দিয়েই এ বীমার সুবিধা পেতে পারেন।

তবে ক্ষুদ্রবীমার পলিসি বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি খুব একটা লাভবান হয় না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পলিসি বিক্রির ফলে কোম্পানির লোকসান হয়। যেমন- ধরা যাক ১০ বছর মেয়াদি একটি পলিসি বিক্রি করে এজেন্ট কমিশনসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাদ দিয়ে কোম্পানিতে জমা হলো ৬ হাজার টাকা। এ টাকা ব্যাংক ডিপোজিট করলে মুনাফা পাওয়া যায় ২ হাজার টাকা।

অর্থাৎ ১০ বছর মেয়াদী একটি পলিসি বিক্রি করে প্রিমিয়ামের টাকা ও বিনিয়োগের মুনাফা সব মিলে কোম্পানিতে জমা হয় ৮ হাজার টাকা। কিন্তু মেয়াদ শেষে গ্রাহককে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একটি ক্ষুদ্রবীমার পলিসি বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি যে টাকা পেল গ্রাহককে দিতে হচ্ছে তার থেকেও ২ হাজার টাকা বেশি। ফলে বীমা পলিসি বিক্রি করে কোম্পানি মুনাফা তো পায় না। উল্টো লোকসান গুনতে হয়। ফলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্রবীমার আগ্রহ হারাচ্ছে।

এছাড়া বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নতুন নিয়মের কারণে এজেন্টদের কমিশন কমে গেছে। ফলে এজেন্টরাও ক্ষুদ্রবীমার পলিসি বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবার আগে বেতন দেয়া হতো প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় ও নবায়ন প্রিমিয়াম আয় থেকে। কিন্ত এখন শুধুমাত্র প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় থেকে বেতন দিতে হচ্ছে। এটিও ক্ষুদ্রবীমার প্রতি আগ্রহ কমার কারণ, বলেন টিটু।

এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বড় পলিসির তুলনায় ক্ষুদ্রবীমার পলিসিতে কোম্পানির খরচ বেশি হয়। যেমন কমিশন বেশি দিতে হয়, বিনিয়োগ রিটার্ন কম, ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি। ফলে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকদের আশানুরূপ মুনাফা দেয়া সম্ভব হয় না। এমনকি এমন ঘটনাও দেখা গেছে, কোন কোন কোম্পানি ক্ষুদ্রবীমার পলিসির গ্রাহক যে টাকা জমা দিয়েছেন, মেয়াদ শেষে সেই টাকাও ফেরত দিতে পারেনি।

জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধে হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টিটু বলেন, নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র্র হওয়ার কারণে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ পলিসি গ্রাহকদের নাম, বয়সসহ বিভিন্ন তথ্য পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলছে না। ফলে এক্ষেত্রে দাবি পরিশোধে এক ধরণের সমস্যা হচ্ছে। আবার নতুন অনুমোদন পাওয়া কিছু কোম্পানি আছে যাদের ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নেই। এ কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। কোন কোন কোম্পানির এফডিআর পর্যন্ত ভাঙতে হচ্ছে। এসব কোম্পানির নেতিবাচক এক ধরণের প্রভাব পুরাতন কোম্পানির উপরও পড়ছে।

অন্যান্য দেশের ক্ষুদ্রবীমার সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার পার্থক্য কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে ক্ষুদ্রবীমার কনসেপ্ট খুব একটা নেই। মূলত আমাদের উপমহাদেশেই ক্ষুদ্রবীমা দেখা যায়।

ক্ষুদ্রবীমার ওপর বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সন্ধানী লাইফের এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার প্রডাক্ট তৈরি হয়েছে মূলত আমার মাধ্যমেই। সাফায়াত আহমেদকে দিয়ে আমিই ওই সময় ক্ষুদ্রবীমা ডিজাইন তৈরি করি। সাফায়েত আহমেদ যে ক্ষুদ্রবীমা চালু করেন তাতে লোন চালু ছিল। প্রথম দিকের ক্ষুদ্রবীমার প্রডাক্টটা বেশি ভালো ছিল।

প্রকাশের তারিখ- ২৪ জানুয়ারি, ২০১৬