ক্ষুদ্রবীমার সঙ্গে সম্পূরক স্কিম চালু করা প্রয়োজন: গিয়াস উদ্দিন

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের অভিমত। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্রবীমার মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ করে অল্প আয়ের মানুষকে বীমা সুবিধা দেয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই বীমায় ল্যাপস বা তামাদি পলিসির সংখ্যা বেশি। নেতিবাচক ধারণা এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারায় এ অবস্থা। তবে গ্রাহকদের দ্রুত ও ভালো সার্ভিস দিতে পারলে দেশের ক্ষুদ্রবীমার বাজার বৃদ্ধি পাবে।

এজন্য ক্ষুদ্রবীমাকে তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) নির্ভর করতে হবে। এতে করে গ্রাহকদের দ্রুত সেবা দেয়া সম্ভব। গ্রাহকরা প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সাথে সাথে তার অবস্থা জানতে পারবে। এর ফলে বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর তাদের আস্থা বাড়বে। প্রয়োজনে এনডোওমেন্ট পলিসির মতো ৩/৪ বছর পর অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের কিছু অর্থ ফেরত দিতে পারলে তারা আরো আগ্রহী হবে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্রবীমার সঙ্গে সম্পূরক স্কিম হিসেবে হেলথ কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এতে গ্রাহকরা ক্ষুদ্রবীমার প্রতি আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির নেটওয়ার্কভুক্ত হাসপাতালের একজন ডাক্তার প্রতিমাসে গ্রাহকদের চেকআপ করে কিছু ওষুধপত্র প্রদান করবে। যা দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সহায়ক হতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের আয়ের পরিধি ও পরিমাণ বেড়েছে। একজন রিকশা চালকের দিনে ৪/৫শ’ টাকা আয় হয়ে থাকে। তাই ক্ষুদ্রবীমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়ানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিস্তির সর্বনিম্ন পরিমাণ ৩০০ টাকা করা যেতে পারে। এতে কিস্তি সংগ্রহের খরচ তুলনামূলক আরো কমে আসবে। পাশাপাশি বীমা আইনে অনুমোদিত ব্যয়সীমা মেনে খরচ করতে হবে। তাহলে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমবে। আর গ্রাহকদের ভালো মুনাফা দেয়া সম্ভব হবে।

ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহক বৃদ্ধিতে করণীয় বিষয়ে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের এই সিইও বলেন, বীমা সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করে এ বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে হবে। এই কাজ কোন কোম্পানির একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে ক্ষুদ্রবীমার বাজারকে আরো এগিয়ে নেয়া সম্ভব।

বীমা খাতকে এগিয়ে নিতে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অদক্ষ, অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মাঠকর্মীদের কারণে বীমা খাত নিয়ে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে দক্ষ ও শিক্ষিত প্রতিনিধিরা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের বীমা খাতে দক্ষ ও শিক্ষিত জনবলের অভাব খুবই প্রকট। তবে বর্তমানে কোম্পানিগুলো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাজারে ক্ষুদ্রবীমার যে অবস্থান তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে সেরকম অবস্থান তৈরি হতে পারেনি। সেদেশের সরকার এ বিষয়ে ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সম্ভব বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে বীমা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা।

ক্ষুদ্রবীমার ওপর নিজের কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ বা একাডেমিক শিক্ষা নেই উল্লেখ করে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সিইও গিয়াস উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে কোন সম্মেলনেও যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সামনে যদি কোন সুযোগ আসে সেটা হাতছাড়া করার ইচ্ছা নেই। তবে দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করায় কিছুটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে, পাশাপাশি অনলাইনে এ বিষয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে আরো জানার চেষ্টা করছি।

ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স আরো জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাহকদের আরো সুবিধা দিতে ক্ষুদ্রবীমা পলিসির সম্পূরক হিসেবে হেলথ কার্ড প্রদানের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মাধ্যমে দরিদ্র গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সম্ভব হবে। যা তাদের জন্য খুবই প্রয়োজন।

প্রকাশের তারিখ- ১০ আগস্ট, ২০১৬