ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নে স্থায়ী অফিস ও কর্মকর্তা প্রয়োজন: জাকির হোসেন

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে ক্ষুদ্রবীমার ওপর অভিমত দিয়েছেন স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাকির হোসেন। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:
স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রবীমার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, গ্রামের অশিক্ষিত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষটি চায় সঞ্চয় করতে। এ কারণে তাদের চাওয়াটিও সামান্য। তারা যে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে কোনো একটি বীমা প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় করলেন তা মেয়াদ শেষে সুষ্ঠুভাবে ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশাও থাকে তাদের।
বর্তমান সময় অনেক গ্রাহকই এ সেবাটি পাচ্ছে না। এটা শুধু মেয়াদ শেষে দাবি পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, প্রিমিয়াম জমার ক্ষেত্রেও এ জটিলতা রয়েছে। এ জন্য ক্ষুদ্রবীমা গ্রামীণ সমাজের আর্থিক উন্নয়ন বান্ধব করতে গ্রাহকদের প্রিমিয়াম জমার বিষয়টি যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি দ্রুততম সময়ে দাবি পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মুনাফা প্রত্যাশিত পর্যায়ে না হলেও ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকদের তা নিয়ে কিন্তু খুব আপত্তি নেই।
আমাদের দেশে সঞ্চয় বীমাকেই ক্ষুদ্র বীমা বলা হচ্ছে। একক বীমার চেয়ে প্রিমিয়াম দেয়ার পরিমাণ এবং বীমা অংক দুটোই কম। মূলত খুব অল্প টাকায় যে বীমা সুবিধা দেয়া হচ্ছে তাকেই ক্ষুদ্রবীমা হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে ২০০০ সালে লাইফ বীমা খাতে তৃতীয় প্রজন্মের কোম্পানিগুলো অনুমোদন পাওয়ার পর ক্ষুদ্রবীমার প্রতি ঝুঁকে পরে। এরপর খুব অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা ভিন্ন। বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে ক্ষুদ্রবীমার কারণেই। খরচ বেশি হওয়ায় গ্রাহকদের মুনাফা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। দক্ষ জনশক্তি না থাকায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনারও অভাব রয়েছে। তবে খুব দ্রুত এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা খুব প্রয়োজন।
আমার মনে হয়, ক্ষুদ্রবীমার একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা উচিত। যেখানে ক্ষুদ্রবীমার বৈশিষ্ট্যও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা থাকবে। কোন শ্রেণী বা পেশার মানুষ ক্ষুদ্রবীমার আওতায় আসবে বা কারা এর সুবিধা পাবে তা আইন দ্বারা নির্ধারণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্ষুদ্রবীমায় গ্রাহক সেবা নিশ্চত করতে হলে স্থায়ী অফিসের পাশাপাশি স্থায়ী কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়াসহ অফিসগুলোকে সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের জন্য একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যেতে পারে। মাঠকর্মীদের টার্গেট ভিত্তিতে কমিশন বা রিলিজ প্রদান করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মীর ভবিষ্যৎ আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয়টিও নিশ্চিত করার আশ্বাস দিতে হবে। যাতে তারা ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে কাজ করার আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রবীমায় যারা কাজ করবে তাদের জন্য পৃথক সার্ভিস রুল করা যেতে পারে।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশেই প্রথম ক্ষুদ্রবীমা চালু হয়। এরপর থেকে সারা দেশেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্রবীমা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশেষ করে পার্শবর্তী দেশগুলোতে ক্ষুদ্রবীমার মডেলগুলো নিয়ে আমাদের ব্যাপক গবেষণা করা প্রয়োজন। ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো উন্নত ধারণা নিতে পারবে।
ক্ষুদ্রবীমার ওপর বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ না থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে বীমা খাতে কর্মরত থাকায় এ বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন জাকির হোসেন। আগামীতে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকদের আরো ভালো সেবা প্রদান করতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এই মূখ্য নির্বাহী।

প্রকাশের তারিখ- ২৫ অক্টোবর, ২০১৬