বীমা কোম্পানি একত্রিকরণের প্রয়োজনীয়তা এবং কিছু প্রশ্ন

এ কে এম এহসানুল হক:

বাংলাদেশের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট দেশে বীমা বাজারের প্রয়োজনের তুলনায় অত্যাধিক বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে, যা বীমাখাতের জন্য মোটেই স্বাস্থ্যপ্রদ নয়। বীমাখাতে বর্তমানে সর্বমোট ৭৮টি বীমা কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৪৬টি এবং জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৩২টি।

অথচ পাশের দেশ ভারতের মতো বিশাল ভূ-খণ্ডে বীমা কোম্পানির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বর্তমানে ভারতে সর্বমোট ৫৪টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। যার মধ্যে সাধারণ বীমার সংখ্যা ৩০টি এবং জীবন বীমার সংখ্যা ২৪টি।

বাংলাদেশে বীমা কোম্পানি ব্যাঙের ছাতার মতো গজানোর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্তৃপক্ষের দূরদর্শীতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কর্ম পেইড-আপ-ক্যাপিটাল এর প্রয়োজনীয়তা।

শোনা যায়, কিছু কিছু বীমা কোম্পানির বাৎসরিক প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ যা পেইড-আপ-ক্যাপিটাল সার্ভিসিং করতে অসমর্থ। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ওই সমস্ত কোম্পানির ব্যাবসায়ে টিকে থাকার কি যুক্তি থাকতে পারে?

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন- যুক্তরাজ্যে ৯০ দশকে বীমা কোম্পানি নরউইচ ইউনিয়ন, কমার্শিয়াল ইউনিয়ন এবং জেনারেল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মতো বৃহৎ শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বীমা কোম্পানির একত্রিকরণ অজানা নয়।

নানান রকম অনিয়ম, বীমা আইনের বরখেলাপ ইত্যাদির কারণে দেশের বীমাখাত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। যার পরিণতি হিসেবে বীমা গ্রাহকরা তাদের ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বর্তমান অবস্থায় সরকারের নতুন বীমা কোম্পানি নিবন্ধন দেয়ার ব্যাপারে বিরত থাকতে হবে। নিবন্ধনকৃত বর্তমান বীমা কোম্পানিগুলোর পেইড-আপ-ক্যাপিটাল অনেকাংশে বৃদ্ধি করতে হবে। যে সমস্ত কোম্পানি বর্ধিত নতুন পেইড-আপ-ক্যাপিটাল জোগার করতে অসমর্থ হবে তাদের নিবন্ধন নবায়ন না করা।

বীমাখাতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানির সংখ্যা কমানোর প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক বীমা কোম্পানির একত্রিকরণের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনার যোগ্যতা রাখে।

রোগ যেমন আছে, তেমনি রোগের নিরাময় বা চিকিৎসাও আছে। যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে রোগের সঠিক উপসর্গ নির্ণয় করা।

বীমা শিল্প এবং বীমা গ্রাহকের স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পেইড-আপ-ক্যাপিটাল বৃদ্ধির প্রচলন রয়েছে।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।