নৌপণ্য বীমায় ব্যবহৃত কতিপয় প্রয়োজনীয় পরিভাষা

এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই: নৌপণ্য বীমায় বিভিন্ন ধরণের পরিভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নন-লাইফ বীমা সংশ্লিষ্টদের যেগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পাঠকদের এমনই কিছু পরিভাষার সঙ্গে আজ পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।   

১। ঋণপত্র (Letter of Credit- L/C): এক প্রকার ঋণপত্র যা বিশেষ করে নৌপণ্য বীমার ব্যবহৃত হয়। আমদানিকারক বা ক্রেতা (Importer/ Buyer) নিজস্ব ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্যের মূল্যের সমপরিমাণ ঋণপত্র ক্রয় বা খরিদ করে থাকে। যা রপ্তানিকারক (Exporter/ Seller) বা বিক্রেতার ব্যাংকে পাঠানো হয়।

প্রকৃত বা বৈধ কারণ ব্যতিত আমদানিকারক খরিদকৃত পণ্যদ্রব্য গ্রহণে প্রত্যাখ্যান বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে যেমন- পণ্যদ্রব্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পূর্বে উহার বাজার দরের পতন বা মূল্য হ্রাস; ঋণপত্রের মাধ্যমে রপ্তানিকারক পণ্য বিক্রয় বাবদ অর্জিত অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা (Guarantee) লাভ করে থাক।

২। পণ্যের প্রাথমিক মূল্য (Ex-Factory or Ex Works): এই পরিভাষা রপ্তানিকারকের (Exporter/ Supplier) পণ্যাগার বা গুদামঘরে মজুতকৃত পণ্যদ্রব্যের মৌলিক মূল্য (Factory Price) প্রকাশ করে। এই মূল্যের সাথে অন্য কোন ধরণের মূল্য বা খরচ সংযোজন বা অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

আমদানিকারক (Importer/ Buyer) পণ্যের প্রাথমিক মূল্যের সাথে পরিবহন খরচ (Transportation Expense), জাহাজ ভাড়া (Freight) এবং বীমা খরচ (Insurance Expense) বহন করে থাকে।

৩। জাহাজে পণ্যদ্রব্য বোঝাই সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট খরচ (Free on board- FOB): পণ্যদ্রব্য রপ্তানিকারী বা সরবরাহকারীকে (Exporter/ Suppler) পণ্যদ্রব্য বোঝাই করার নিমিত্তে কতিপয় খরচ বহন করে থাকে। যেমন- ক) রপ্তানিকারকের ফ্যাক্টরি বা পণ্যাগার (Warehouse) থেকে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত পরিবহন খরচ (Transportation Expense), খ) পণ্যদ্রব্য জাহাজে বোঝাই (Loading Expense) এবং গ) অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ বহন করে থাকে।

৪। মূল্য ও জাহাজ ভাড়া (Cost and Freight- C&F): এই পরিভাষা পণ্যদ্রব্যের মৌলিক মূল্য (Factory Price) এবং জাহাজ ভাড়া (Freight) এই দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই খরচের সাথে বীমা খরচ (Insurance Expense) অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

৫। পণ্যের মৌলিক মূল্য, জাহাজ ভাড়া ও বীমা খরচ (Cost, Insurance & Freight- CIF): এই পরিভাষা পণ্যের মৌলিক মূল্য (Factory Price), জাহাজ ভাড়া (Freight) এবং বীমা খরচ (Insurance Expense) এই তিন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।

৬। পণ বহনপত্র বা পণ্য চালান রশিদ (Bill of Lading- B/L): এটি পণ্যদ্রব্য প্রেরণকারী বা সরবরাহকারী (Exporter/ Suppler) ও জাহাজ মালিকের মধ্যে সম্পাদিত এক প্রকার চুক্তিপত্র। এই চুক্তিপত্রের মাধ্যমে জাহাজ মালিক বা তার প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্য নির্ধারিত গন্তব্যস্থলে নিরাপদে পৌঁছানোর অঙ্গীকার করে। পণ্য বহনপত্রে পণ্যদ্রব্য পরিবহনের বিভিন্ন শর্তাবলীর উল্লেখ ছাড়াও নিম্ন বর্ণিত তথ্যসমূহের বর্ণনা থাকে।

ক) আমদানিকারী সংস্থার নাম।

খ) সংশ্লিষ্ট জাহাজের নাম।

গ) সমুদ্রবন্দর, যেখান থেকে পণ্যদ্রব্য প্রেরণ করা হয়।

 ঘ) গন্তব্যস্থলে সমুদ্রবন্দরের নাম, যেখানে পণ্যদ্রব্য খালাস করা হয়।

ঙ) পণ্যদ্রব্যের বিবরণ।

চ) জাহাজ ছাড়ার সম্ভাব্য তারিখ ইত্যাদি।

৭। গন্তব্যস্থলে বন্দর কর্তৃপক্ষ/ শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পণ্যদ্রব্য ছাড়াবার পত্র (Bill of Entry- B/E): নৌপণ্য বীমায় ব্যবহৃত এক প্রকার দলিল দস্তাবেজ যেখানে বিভিন্ন তথ্যের উল্লেখ থাকে। যেমন- ক) পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতি ও বিবরণ, খ) গন্তব্যস্থলে সমুদ্রবন্দরের নাম এবং গ) বন্দর কর্তৃক প্রাপ্য শুল্কের টাকার পরিমাণের উল্লেখ থাকে।

বন্দর শুল্ক (Port harges) প্রদান না করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ (Port Authority) সংশ্লিষ্ট পণ্যদ্রব্য ছাড়ানোর অনুমোতি প্রদান করে না। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে পণ্যদ্রব্য ছাড়বার জন্য বিল অব এন্ট্রির প্রয়োজন পড়ে।