বীমা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব

এ কে এম এহসানুল হক:

সাধারণভাবে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আর বীমার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থার বেলায় সেটা বলার উপেক্ষা রাখে না। বীমার সঙ্গে অন্যান্য ব্যবসার মূল পার্থক্য এই যে, বীমা কোম্পানি বীমা গ্রহীতাকে পলিসি বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্ষতির বেলায় দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে যা ধরা বা ছোঁয়া যায় না।

বীমা ব্যবসায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গেলে বিশেষভাবে যে কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে, এই ব্যবসা আর অন্য দশটি ব্যবসার মত নয়। এটি একটি বিশেষায়িত ব্যবসা। বীমা ব্যবসার পরিচালনা করার জন্য বীমার বিভিন্ন আইন, বিধিমালা আন্তর্জাতিক বীমা চর্চা এবং সর্বোপরি বীমা বিষয় সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা আবশ্যক, যা কেবলমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, বাংলাদেশের বীমা শিল্প এ ব্যাপারে ভীষণভাবে দরিদ্রতায় ভুগছে এবং অনেক পিছনে পরে আছে।

এর কারণ একাধিক। প্রথমতঃ বাংলাদেশের বীমা শিল্প অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন, ব্যাংক ইত্যাদির তুলনায় অপেক্ষাকৃত অবহেলিত এবং অনাদৃত। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বীমা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে মূলতঃ বর্তমান নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা যেতে পারে।

দ্বিতীয়তঃ বীমা কোম্পানী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাধারণভাবে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে অনীহা এবং কৃপণ মনোভাব পোষণ ইত্যাদি।

কেবলমাত্র বড় অফিস বা বড় সাইনবোর্ড দিয়ে বীমা কোম্পানির মূল্যায়ন বা যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। কর্মচারীর পেশাগত বা শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন ইত্যাদি বীমা কোম্পানির কৃতকার্যের জন্য এবং সেই সাথে বীমা কোম্পানির সুনাম এবং জনগণের আস্থা অর্জনের ব্যাপারে বহুলাংশে নির্ভরশীল।

পৃথিবীর অনেক দেশে বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের পেশাগত যোগ্যতা এবং প্রশিক্ষণের জন্য বাৎসরিক একটি বড় অংকের টাকা বরাদ্দ করে থাকে। কারণ এ ব্যবসায়ে টিকে থাকা এবং ভাল ফল অর্জনের ব্যাপারে এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা নাই।

বীমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যত তাড়াতাড়ি এই সত্যটি অনুধাবন করতে পারবে ততই বীমা শিল্পের জন্য এটি মঙ্গলজনক। শুধুমাত্র ব্যবসা করার মনোভাব নিয়ে বীমা ব্যবসা পরিচালনা করা সাময়িকভাবে সম্ভব হলেও দীর্ঘস্থায়ীভাবে এর ফল ভালো হতে পারে না।

দেশের অর্থনীতিতে বীমার অবদান এবং বীমা শিল্পের ভবিষ্যত চিন্তা করে বীমা কর্মচারীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া কেবল প্রয়োজনীয় নয়, জরুরিও বটে।

বাংলাদেশের বীমা শিল্পের বর্তমান নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি থেকে সম্মানজনক অবস্থায় উত্তরণের জন্য বীমা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে একে অপরের সার্বিক সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু সমন্বয় একান্তভাবে বাঞ্ছনীয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের বীমা শিল্পের বড় ধরণের সংস্কার প্রয়োজন। এ কথা সত্যি যে, গাছ লাগিয়ে তার সঠিক পরিচর্যা ছাড়া ভালো ফল আশা করা সম্ভব নয়।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।