নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে কিছু ভাবনা

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ:

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মান্যবর চেয়ারম্যান মহোদয় কর্তৃক উপরোক্ত বিষয়ে ইস্যুকৃত সার্কুলার নং- ৬১ থেকে ৬৫ বীমা শিল্পে কমিশনের দৌরাত্ম নিরসনে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান মহোদয়গণ ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে গত ১৯-০৬-২০১৯ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম কর্তৃক গত ২৪-০৬-২০১৯ তারিখে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও কমিশনসহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

দু’টি সভায়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ১৫% কমিশনের বেশি দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ করা হয়। আমরা জানি আইনে আছে কমিশন পাবে এজেন্ট কিন্তু প্রচার প্রচারনায় প্রকাশ পাচ্ছে আমরা ১৫% কমিশন থেকে ৫% ট্যাক্স বাদ দিয়ে অর্থাৎ ১৪.২৫% কমিশন সর্বসাকূল্যে বীমা গ্রহীতাকেই দিব।

কমিশন যদি বীমা গ্রহীতাকেই দেয়া হয় তবে তা এক সময় বর্তমান অবস্থার মতোই হবে বলে সকলের মতামত, তাই এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে মহাশয়ের আশুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বীমা কোম্পানিগুলোর উন্নয়ন কর্মকর্তাদের জন্য সম-মর্যাদার একটি পে স্কেল প্রণয়নে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বহুদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন বৈষম্যের কারণেও মার্কেট আবার অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের আলোচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল যে, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহ ও সধুীজনদের নিয়ে কমিশন বন্ধের এবং বীমা শিল্পের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতায় ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে সভা-সমাবেশ ও প্রচারনার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলায় জেলায় তদারকি সেল গঠন করতে হবে এবং সার্কুলারের শর্ত ভংগকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

নন-লাইফ বীমায় অনাদায়ী প্রিমিয়াম একটি মারাত্মক ব্যাধি। বিশেষ করে মেরিন বীমার ক্ষেত্রে এলসি খোলার পর বীমাকৃত মাল আসতে কিছুটা সময় লাগে বলে বীমা গ্রহীতাগণ মালামাল না আসা পর্যন্ত প্রিমিয়াম দিতে চায় না। এই জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাধ্য করাতে হবে যেন ব্যাংক তাদের এলসি মার্জিন ও অন্যান্য খরচের সাথে ইন্স্যুরেন্সের পে-অর্ডার ইস্যুর ব্যবস্থা করে।

প্রত্যেক বীমা কোম্পানিরই মার্কেটে কিছু অনাদায়ী প্রিমিয়াম রয়েছে। এই প্রিমিয়াম কোম্পানিতে জমার কোন নির্দেশনা না দিলে এই টাকা দ্বারা বাজার অস্থিতিশীল হতে পারে। বিষয়টি নজরে নিয়ে দ্রুত ১ আগস্টের আগেই নির্দেশনা দানের ব্যবস্থা করতে মহাশয়ের আজ্ঞা হয়।

বীমা কোম্পানিগুলো যাতে রেগুলার ম্যান পাওয়ারের বাইরে অস্তিত্বহীন অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে না পারে এবং কমিশন বেসিসে কাউকে নিয়োগ দিতে না পারে তা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সব সময় মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনে বর্তমান ম্যান পাওয়ারের একটি তালিকা এখনি সব কোম্পানি থেকে চেয়ে নেয়া যেতে পারে।

ছোট ছোট বীমা কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যাতে বড় কোম্পানিগুলো তাদের (ছোট ছোট কোম্পানির) ব্যবসা গ্রাস করতে না পারে তার জন্য ২/৩ বৎসরের জন্য লক ইন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সকল নির্দেশনার বাস্তবায়ন বীমা কোম্পানিসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ, শাখা ব্যবস্থাপকগণ ও প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসারগণ করে থাকেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে তাদের নিয়ে একটি বিশেষ সভা আহবান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।