বীমা ব্যবসা: শিক্ষিত জনশক্তি ও আর্থিক বুনিয়াদ

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: বীমা শিল্প এখন বিকাশমান। বীমা নিয়ে অতীতে অনেক নেতিবাচক কথা হলেও সেটা অনেকটা কমে এসেছে। এখন দরকার এই শিল্প বিকাশে দক্ষ হাতে নার্সিং করা, যার উদ্যোগ ইতোমধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন।

এতদিন আমাদের অনেকের কাছেই অজানা ছিল যে, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মতো বীমা জগতেরই একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ষাট দশকে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১ মার্চ থেকে কর্মরত ছিলেন। তাই ১ মার্চকে সরকারের পক্ষ থেকে বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার জন্ম শত বার্ষিকীতে রইলো শত সহস্র বিনম্র ভালোবাসা। প্রকারান্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা করণীয় তা তিনি করবেন এবং শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রেখে সরকারী রাজস্ব খাতে অবদান রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, বীমা শিল্পে যারা জড়িত রয়েছেন তার প্রতিটি কথা বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা করে যাবেন।

আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের মুখে শুনেছি যে, তিনি ছাত্র অবস্থায় বীমার উপর একটি বই লিখেছিলেন। ছাত্র অবস্থায় বইটি প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে তার অত্যন্ত প্রিয় একজন শিক্ষকের নামে তা প্রকাশ করেছিলেন এবং শিক্ষক যৌথ লেখক হিসেবে তার নাম যুক্ত করে তাকে সম্মানীত করেছিলেন।

আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে পড়ি তখন আমার ইন্স্যুরেন্স টার্ম পেপার ছিল। রি-ইন্স্যুরেন্স শেখার জন্য ১৯৮১ সালে সাধারণ বীমা করপোরেশনের পুন:বীমা বিভাগে প্রায় এক মাস ইন্টার্নশীপ করে হাতে কলমে শিখে রিপোর্ট জমা দিয়ে ওই বিষয়ে পাশ করতে হয়েছিল। ওই সময় সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন মোরশেদ স্যার। সে সময়ের পুন:বীমার বিভাগের কর্মকর্তাগণও আমাদের বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন। তাছাড়া সিরাজুল ইসলাম স্যারও আমাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান ছিলেন, এখন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স এর কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।

১৯৮৪ সালে ভাগ্যের টানে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্সী কোর্স কমপ্লিট করে গ্রামীণ ব্যাংকের অডিট ডিপার্টমেন্টে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে যোগদান করি। গ্রামীণ ব্যাংক সবেমাত্র প্রজেক্ট থেকে ব্যাংক হিসেবে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের দূরদর্শিতায় এবং আমার সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্যার ড. মুহাম্মদ ইউনুসের দক্ষতা, দূরদর্শি ও মানবিক মূল্যবোধের কারণে গ্রামীণ ব্যাংক আজ বিশ্বের বুকে একটি উদাহরণ হয়ে আছে। যার মডেল পৃথিবীর অনেক দেশেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্যার এই কাজের যথাযোগ্য স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে এক বিরল মর্যদায় বসিয়েছেন।

আমার বাবার শরীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরা বাদ দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের এবং সিএ প্রফেশনের এক বন্ধুর হাত ধরে ১৯৮৬ সালে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করি। আমি প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মিহির দা, আমার শ্রদ্ধেয় স্যার মির হোসেন সাহেবের কাছে চির কৃতজ্ঞ। যিনি আমাকে হাতে কলমে শিখিয়েছেন ইন্স্যুরেন্স কি, কিভাবে ডকুমেন্ট ইস্যু করতে হয়, বীমা গ্রহীতাদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়, পত্রালাপ করতে হয়, Telex এর Wording কিভাবে লিখতে হয়। অবলিখন, পুন:বীমা, দাবি সংক্রান্ত কাজ তার কাছ থেকেই শিখেছি। এক কথায় তিনি আমার ইন্স্যুরেন্স গুরু।

দেখতে দেখতে বীমা শিল্পে ৩৪টি বছর কিভাবে কেটে গেলো টেরও পেলাম না। ২৮ বছর বিভিন্ন কোম্পানিতে বীমার বিভিন্ন শাখায় কাজ করে অবশেষে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে কর্মরত আছি। বীমা ব্যবসা এখন আর পেশা নয় এটা অর্থনৈতিক উন্নতি ও গ্রাহক সেবার নেশা। সে প্রেক্ষিতেই দীর্ঘদিন বীমা শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কিছুটা শেয়ার করার জন্য এই লেখা। কেউ আমাকে বিজ্ঞ বা সমালোচক বলে ভুল বুঝবেন না, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ৬১-৬২ নং সার্কুলারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ ও বিআই-এ মতামত প্রকাশ করেছিলাম। পরবর্তীতে অনেক কিছুই সংশোধিত হয়ে, ৬৪-৬৫ নং সার্কুলার পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে। আশা করি, নন-লাইফ বীমা শিল্পে কর্মরত কর্মকর্তাগণও আমার এই ভাবনার সাথে অনেকাংশে একমত হবেন।

বীমা ব্যবসা একদিনে হয় না, দীর্ঘ সাধনার ফল। যারা দীর্ঘদিন ধৈর্য্য সহকারে টিকে থাকতে পারে তারাই বীমায় সফলকাম হতে পারে। কি লাইফ, কি নন-লাইফ। ঝরে পরা লোকের সংখ্যাই অধিক, গুটি কয়েক লোক কেবল সাফল্যের হাসি হাসতে পারে। এই কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বা শিক্ষিত তরুণ-তরুণী বীমা শিল্পে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। কেউই তার জীবন থেকে কয়েকটি বছর ট্রাই এন্ড এরর -এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। সবাই চায় নিশ্চিত চাকরি, দুটো পয়সা কম তাতে অসুবিধা নেই্, শান্তি চাই। টার্গেট-বিহীন নিশ্চিন্ত ঘুম চাই।

বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে মার্কেট কারেকশন চলছে। নিয়ম নৈতিকতার মধ্যে বীমা শিল্পে কর্মরত কয়েক লাখ কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বীমা পরিবারের বেশ কয়েকজন উচ্চ শিক্ষিত জনবল বীমা শিল্পে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এদের বিকাশ কিন্তু একদিনে হয়নি, এদের পেছনে তাদের বাবা-মার অবদান অনেক। তারাই তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং পথের নির্দেশনা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ভাগ্যবান যে উত্তরসূরী সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

ইদানিং কিছু মেধা সম্পন্ন ছেলে-মেয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তাদের পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাঁধা হলো তারা পরিচালকদের সন্তান নন, তারা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধঃস্তন কারো সন্তান। আগেই বলেছি মার্কেট কারেকশন চলছে একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অধঃস্তনের প্রচুর বীমা ব্যবসা রয়েছে কিন্তু তিনি তা থেকে বেনিফিট নিতে পারছেন না বা কোম্পানি তার ব্যবসার জন্য আলাদাভাবে মূল্যায়িত করছে না, তাহলে তার ব্যবসার বেনিফিসিয়ারী কে হবেন? তাহলে তৃতীয় কোন পক্ষকে দাঁড় করলেতো সেই আগের অবস্থা অর্থাৎ ডেমী সৃষ্টি করতে হয়, তার চেয়ে কারো ব্যবসার জন্য তার ছেলে-মেয়েদের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে কিভাবে সহায়তা করা যায়, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

কোম্পানির জন্য যারা ধ্যানজ্ঞান রেখে নির্দিষ্ট বেতনের বিনিময়ে কাজ করছেন, তাদের সন্তানেরা বাবা-মার বা কারো স্নেহের সহযোগীতার মাধ্যমে যোগ্যতর হিসেবে বীমা শিল্পে জায়গা করে নিতে চাইলে অবশ্য কোন বাঁধা থাকার কথা নয়। আর থাকলেও তা বীমা শিল্পের স্বার্থে শিক্ষিত জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে তা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মীর হাতকে শক্তিশালী করে শিল্পে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টির প্রয়াস নিতে হবে।

একজন ডেস্ক কর্মী সারাদিন তার কাজ করেও তার কানেকশন বা প্রফেশনালিজমের কারণে তার মেধা, শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে কোম্পানির জন্য ব্যবসা সংগ্রহ করলে, কর্তৃপক্ষের কাছে তার কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতেই পারে? গিভ এন্ড টেক এর দুনিয়ায় তার প্রাপ্যটা তাকে না দিলে সে ব্যবসা আনবে কেন? সে যদি ব্যবসা না আনে কোম্পানি ব্যবসা হারাবে আর সে তার ব্যবসা তৃতীয় পক্ষ কারো কাছে বিক্রী করবে বা অন্যের নামে দেখিয়ে বা অন্য কোম্পানিতে ব্যবসা দিয়ে সে ঠিকই বেনিফিট নিয়ে নিবে। এটা বন্ধ করতে হলে উন্নয়ন কর্মকর্তার মতো তাদের ব্যবসা আহরণে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন পন্থা বের করার সময় এসেছে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভেবে দেখতে হবে।

পৃথিবীব্যাপী বীমা ব্যবসায় যারা উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন তাদের আয় আনলিমিটেড। তাদের নিয়োগই দেয়া হয় এইভাবে, ব্যবসা আনতে পারলে টাকা পাবে, না আনতে পারলে পাবে না। পৃথিবীতে সকল কাজেরই বিনিময় মূল্য আছে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। বর্তমান ডিজিটাল যুগে পরিশ্রম, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, মেধা ইত্যাদির মাধ্যমেই অর্থনীতির চাকা ঘুর্নিয়মান রাখতে হয়।

যদি এমন হয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেট দিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়া হলো, মাস শেষে টার্গেট পূরণ না হলেও তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হবে, তবে কি কেউ টার্গেট পূরণে বা ব্যবসা আনতে সচেষ্ট হবেন? এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। হাতে গোনা কয়েকজন হয়তো টার্গেট পূরণ করবেন আর বাকীরা তার সুবিধা ভোগ করবেন। এইভাবে কতদিন চলবে? কথায় আছে বসে খেলে রাজার ধনও এক সময় শেষ হয়ে যায়। এক সময় কোম্পানিও দেউলিয়া হয়ে যাবে, এভাবে ফ্রি বেতন দিতে থাকলে।

তাই উন্নয়ন কর্মকর্তাদের টার্গেটের বিপরীতে আনুপাতিক একটা পারসেনটেজ বেসিস ধরে যে যত টার্গেট নিতে চায় সে অনুপাতে বেতন নির্ধারণ করে দিতে হবে। টার্গেট পূরণ করলে পূর্ণ বেতন এবং টার্গেট পূরণ না হলে আনুপাতিক হারে বেতন পাবে। যা এখন আমাদের দেশের সকল কোম্পানিতে চালু আছে।

আরো উল্লেখ্য যে, কোন অবস্থায়ই পারসেনটেজ হিসাবে এককালীন অর্থ কাউকে দেয়া যাবে না, এতে কোম্পানি সর্বোপরি সরকারী রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। খয়রাতি সাহায্যে বেশি দিন চলা য়ায় না। এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সকলকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে দেশের আর্থিক বুনিয়াদ বিনির্মাণে বীমা খাত পিছিয়ে পড়বে।

বীমা এখন আর পেশা নয়, এটা নেশাও বটে। বীমা পেশাজীবীরাই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বীমাকারী এবং বীমা গ্রহীতাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করছেন। বিদেশের তুলনায় আমাদের বীমা শিল্প অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তাই বীমা পেশাজীবীদের আর্থিক বুনিয়াদকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে কর্তৃপক্ষের সবিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

কথায় কথায় আমরা বিদেশের বীমা শিল্পের সুনাম করে থাকি আর আফসোস করি- আমরা কেন সে পর্যায় যেতে পারি না। বিদেশে বীমা একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলে। উন্নত দেশে যারা বীমা ব্যবসা করেন তারা যে কদর পান আমাদের দেশে তার উল্টো। কারণ তাদের কমিটমেন্টের দাম আছে কিন্তু আমাদের নেই। তাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে বীমা বাধ্যতামূলক বলে সেবাও সে মতোই দিয়ে থাকে বীমা কোম্পানিগুলো। আমাদের দেশেও তা অসম্ভব নয়। শুধুমাত্র নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তা মেনে চলা।

আমাদের নিয়ম কানুন এমনভাবে তৈরী করতে হবে যা সকলের পক্ষে মানতে কোন অসুবিধা না হয়। শুধু একটি বিষয়ই আমার কাছে বিস্ময় বলে মনে হয় অনেকদিন ধরে আমরা নন-লাইফ বীমা কোম্পানির উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু সকল কোম্পানির আর্থিক অবস্থা একই অবস্থানে নয় বলে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না বা তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না।

আবার এজন্টের কথায় আসি, নন-লাইফ বীমায় এজেন্টের ভূমিকা কি তা স্পষ্ট নয়। একজন উন্নয়ন বা ডেস্ক কর্মকর্তা তাদের কাজের পাশাপাশি এজেন্ট হতে পারবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। একজন ব্যক্তি এসএসসি পাশ হলেই এজেন্ট হতে পারে। এই এজেন্ট দিয়ে বীমা শিল্প কি উপকৃত হবে তাও বুঝি না। বীমা শিল্প যদি এজেন্ট নির্ভর হয়, এদের মধ্য থেকে এক সময় যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। তাই সব সময় বিদেশের ভাবধারায় না চলে আমাদের দেশের উপযোগী আইন তৈরী ও প্রতিপালনে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

তাই আমাদের বীমা শিল্পকে বিদেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট যে কোন একটি বেছে নিয়ে এক খাতের খরচকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবেই বীমা কোম্পানির আর্থিক সলভেন্সি আসবে এবং সবাই সেবামূলক মনোভাব নিয়েই কাজ করবে। আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন- বীমা শিল্পে আর উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট নয়, যারা বীমায় কাজ করবেন তারা বীমা কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত হবেন।

উন্নয়ন কর্মকর্তা বা এজেন্ট এই দ্বৈত ব্যবস্থা থেকে বের হতে পারলেই বীমা শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। যার সুবিধাভোগী দেশের সকল জনগণ হবেন। এই ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক বুনিয়াদকে উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

আমাদের প্রত্যেকেই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষকের সন্তান, একজন ডাক্তারের সন্তান, একজন ইঞ্জিনিয়ার-এর সন্তান, একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট-এর সন্তান, একজন উকিলের সন্তান বা একজন ব্যাংকারের সন্তান যোগ্যতা অর্জন করে তাদের পিতা বা মাতার পেশায় আসতে পারে, তাহলে একজন বীমা পেশাজীবীর সন্তান কেন বাবা-মায়ের পেশায় আসতে পারবে না? নিশ্চয়ই আসবে আর যদি বীমা আইনে কোন বাঁধা থাকে তাহলে তা পরিবর্তন করে যোগ্যদের স্থান করে দিতে হবে। আমাদের সন্তানদের যথাযথ প্রতিপালন করতে যে কোন অনুকূল সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শিল্পের উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস থাকা অত্যন্ত জরুরি নতুবা বীমা শিল্পে নতুন শিক্ষিত প্রজন্ম আগ্রহী হবে না।

আমাদের দেশে বীমা শিল্পের যথাযথ বিকাশের তেমন ইনস্টিটিউট গড়ে উঠেনি। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, একাডেমি ফর লার্নিং এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক এন্ড ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট থেকেও তেমন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরী হচ্ছে না। তাই বর্তমানে বীমা শিল্পে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রনোদনা সৃষ্টি করে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর উদ্যোগ সকল বীমা কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

আর বেশি দূরে নয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগ এবার অবশ্যই সফল হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকীতে বীমা পেশাজীবীরাও মান-সম্মান নিয়ে আর দশটা দেশের বীমা কর্মীদের মতো নিজ পেশার স্বীকৃতি পাবে। এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই লেখার যবনিকা টানলাম।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।