বীমা শিল্পে করোণার প্রভাব

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: পৃথিবীতে যখন ঝড় আসে তখন আসমানের ডাক শুনেই বুঝা যায়, তখন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু করোনা এমন একটি ব্যাধি যা কিনা কোন পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। যখন মানব শরীরে স্থায়ী বাসা বাঁধে তখন টের পাওয়া যায় যে ব্যক্তিটি করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আর কপাল ভালো থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়ত ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠবেন তা না হলে জীবন জীবিকা আর সংসারের মায়া ত্যাগ করে পরোপারে পাড়ি জমাতে হয়। কি নিষ্ঠুর এই ভাইরাস কারো কোন প্রস্তুতি নেবারও সুযোগ দেয় না । 

আমাদের মত উন্নয়নশিল দেশে মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরে অনির্দিষ্টকাল কোয়ারেন্টিনে থাকা সম্ভব নয়। তবু অন্যান্য দেশের ব্যবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল আমাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তা মেনে চলার চেষ্টা করছি। সরকারও সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ দিয়ে আমাদের সতর্ক করার চেষ্টা করছেন। তারপরও আমাদের ঘরে বন্দি রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ ঘরে বসে থাকার মত আর্থিক সামর্থ্য আমাদের নেই। হতদরিদ্র শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুরদের জন্য সরকারের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান, ব্যবসায়ী সংগঠন মানবিক জ্ঞান সম্পন্ন বিবেকবান মানুষ তাদের সাধ্যমত দান করে যাচ্ছেন। এই দানের সময় অনেকেই ছবি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে ব্যস্ত থাকেন। এই লোক জমায়েত এ ভাইরাস আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে আশার আলো এখনও অনেকে নিভৃতে বাসায় বাসায় খাবার দ্রব্যাদি পৌঁছে দিচ্ছেন এতে সংক্রমিত হচ্ছে না। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম চট্টগ্রাম পুলিশ সংগৃহীত খাদ্য বাসার দরজায় পৌঁছে দিচ্ছেন। 

ইন্দোনেশিয়াতে একটি জায়গায় প্যাকেজ করা সামগ্রী রাখা হয়েছে যার যা প্রয়োজন নিজেই যেন তা নিয়ে নিতে পারেন এতে সংক্রমন এর আশঙ্কা থাকে না। আমাদের দেশে সিলেটে এমনি ব্যবস্থা কেউ করেছেন যেখানে থরে থরে প্যাকেজ সাজানো আছে যে কেউ নিতে পারেন, কোন পাহারাদার এর ব্যাবস্থা নেই। সত্যি প্রশংসনীয় উদ্যোগ যা আমাদের মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ পায়। করোনা ভাইরাস যে হারে দেশ থেকে দেশ এ সংক্রমন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে দেখা যায় এর জন্য পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না। এক সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্ত অনায়াসে প্রবেশ করতে পারছে বলে সংক্রমন বেড়েই চলেছে। মানুষের ও চেষ্টার কমতি নেই অবিরাম ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। একদিন সত্যি ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে ঠিকই কিন্তু অনেক প্রাণ চলে যাবে ইতিমধ্যেই।

করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ ‘stay at home’ এর সুযোগ পেয়েছে যা তাদের পুরো জীবনেও এমন সুযোগ আর আসেনি বা আসবে না। ধনী, গরীব, উন্নত, অনুন্নত, সকল দেশের নাগরিকরা এবার উপভোগ করছেন এবং পরিবার পরিজনের সাথে গভীরভাবে মেলার সুযোগ পাচ্ছেন আর তা একমাত্র করোনা ভাইরাসই করে দিয়েছে এই কথা ভুলে গেলে চলবে না। করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি আজ পর্যুদস্ত। প্রত্যাশার কাছে প্রাপ্তি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষের সকল দাম্ভিকতা ধুলায় মিশিয়ে পড়েছে। আর আমাদের উন্নয়নশীল দেশ এর কথা নাই বললাম।

দীর্ঘ দিন ‘stay at home’ এর কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিল কারখানা, অফিস আলাদত সব বন্ধ। উৎপাদন নেই, অগ্রগতিও নেই; কর্ম চাঞ্চল্যও নেই । অর্থ নেই, বৈভব নেই, নেই হাতে সঞ্চয়। কি করবে মানুষ, দিশেহারা। সরকারেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা তো উন্নত দেশ নই। তবু সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের ঠিকই সুরক্ষা দিবেন কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী, বিশেষ করে বীমা শিল্পের সাথে জড়িত তাদের কে দেখবে? 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বীমা পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি নিশ্চই জানেন বীমা শিল্পে যারা কাজ করেন তারা ব্যবসা আনলে বেতন পান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থতিতে ব্যবসা নেই তাদের, বেতনের কি হবে? তারা কি খেয়ে বেঁচে থাকবেন? যারা অবস্থাপন্ন তারা ব্যাংক থেকে তাদের সঞ্চয় তুলে চলবেন যারা দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, শ্রমিক, কর্মজীবী, রিকশাওয়ালা অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় চলবেন কিন্তু মধ্যবিত্তরা যাদের সঞ্চয় নেই, ব্যাংকে টাকা নেই তারা তো কারো কাছে হাত পাততে পারবেন না। তাদের কথা আসুন আমরা সকলে উপলদ্ধি করি । 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ২% সুদে ১৮ মাসের জন্য রপ্তানিকারকদের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। বীমা পরিবারের সদস্য হিসেবে বীমা শিল্পের দুর্দিনে বীমা পরিবারের সদস্যদের জন্য বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য ২% সুদ হারে ১৮ মাসের জন্য কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করে বীমা শিল্পকে পূনর্জিবিত করুন। বীমা পরিবারের সকল সদস্য কায়মনো বাক্যে আপনার কাছেই এই মানবীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করে। 

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।