পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ হোক আমাদের শপথ: নিজাম উদ্দিন আহমদ

জীবন বীমা হলো পলিসিহোল্ডার তথা বীমা গ্রহণকারীর উপকারের জন্য। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশে জীবন বীমা কোম্পানির বিভিন্ন কার্যক্রমে পলিসিহোল্ডারগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং পলিসি গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পলিসিহোল্ডার বীমা করেন তার উপকারের জন্য, অথচ পলিসিহোল্ডারগণ কার্যত: বীমার উপকার পাচ্ছেন না। তবে তিনি কেন বীমা করবেন? পলিসিহোল্ডারগণের বীমা কোম্পানির প্রতি যদি আস্থা না থাকে বা তিনি যদি উপলব্ধি করেন বীমা করে লাভবান হবেন না, মৃত্যুর পর তার নমিনী বীমাপ দাবি পাবে না, বা বীমা করে প্রতারিত হবেন তখন বীমা করবে কেন?

এর কারণ কি? কারণ হলো বাংলাদেশে ২/৩টি কোম্পানি ছাড়া বেশি সংখ্যক কোম্পানি নিয়মের বাইরে তথা 'একচুয়ারিয়াল প্রিন্সিপাল' না মেনে গড়ে উঠেছে। মৃত্যুদাবি ছাড়া এসবি (প্রত্যাশিত দাবি) শুরু হয়ে যায় ৪ থেকে ৬ বছরের মধ্যে, ১০ বছর থেকে শুরু হয় ম্যাচুরিটি। কার্যত: ১৫ বছর হলো একটি কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতার লিটমাস টেস্ট ইয়ার। তখন যদি দেখা যায় কোম্পানিতে প্রয়োজনীয় অর্থ নেই, পলিসিহোল্ডারকে টাকা দিতে পারছে না, কারণ বিগত বছরগুলিতে তার প্রয়োজনীয় নবায়ন প্রিমিয়াম আসেনি। বাড়ী ভাড়া, গাড়ী, কমিশনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ এত করেছে যে দায় মেটানোর প্রয়োজনীয় সম্পদ তার নেই। একচুয়ারিয়াল প্রিন্সিপাল তথা বীমার নিয়ম-নীতি না মেনে অধিক খরচ করার ফলে কোম্পানি এখন আর্থিক সংকটে। বাংলাদশে অনেক জীবন বীমা কোম্পানি নিয়মনীতি না মেনে চলার ফলে বর্তমানে বীমায় অনাস্থা সৃষ্ঠি হয়েছে।

প্রতিদিন সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বীমা ক্ষেত্রে সংঘটিত নানা অনিয়ম, ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছে। এতে করে বীমার প্রতি মানুষের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। পলিসিহোল্ডারগণ বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করছে। ইতোমধ্যে বীমা কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তাকে জেল খাটতে হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

মেঘনা লাইফ বর্তমানে ২২ বছর অতিক্রম করেছে। মেঘনা লাইফ পলিসিহোল্ডারগণকে সর্বাধিক বোনাস প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে বিগত দিনে প্রায় ১৯ হাজার মৃত্যুদাবি ও ৩ লাখ ৬৫ হাজার জনকে মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি বাবদ ১৮শ' কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

বলতে দ্বিধা নেই ২০০৯ পর্যন্ত মেঘনা লাইফ মোটামুটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছিল। এরপর মেঘনা লাইফের কার্যক্রমে অনেক ভুলভ্রান্তির ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালের পর বর্তমান পর্যন্ত মেঘনা লাইফের কার্যক্রমে অনেক সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে আথিক অবস্থান মজবুত হয়েছে এবং পলিসিহোল্ডার, কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কোম্পানি এখন অতীতের ভুলভ্রান্তি সংশোধনপূর্বক বীমা নীতি ও পলিসিহোল্ডারগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করে অগ্রসর হচ্ছে।

কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি কোম্পানির উন্নয়ন বিভাগের প্রতিটি কর্মকর্তা এফএ থেকে উচ্চতর সকল কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করছি। মেঘনা লাইফের প্রতিটি পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা তাদের প্রতিটি পলিসির আমানতদার। পলিসিহোল্ডার যাতে মৃত্যুদাবি ও মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি আইন অনুযায়ী পান, তারা যাতে বেশি লাভবান হন সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট হবো। প্রতিটি বীমাকর্মী ও কর্মকর্তা যাতে ন্যায্য পাওনা পান তারও খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে শুধু বোর্ড কিংবা চেয়ারম্যান নয় কোম্পানির প্রতিটি কর্মকর্তার দায়িত্ব পলিসিহোল্ডারগণের পাওনা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা। সকল কর্মকর্তাদের খেয়াল রাখতে হবে পলিসিহোল্ডারগণ যাতে প্রতারিত না হন। পলিসিহোল্ডারগণের টাকায় কর্মকর্তাদের বেতন হয়, শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ট হয়। পলিসিহোল্ডারদের ঠকিয়ে বা তাদের প্রতারণা করে কর্মকর্তাগণ, বীমাকর্মী ও শেয়ারহোল্ডারগণ লাভবান হলে কেয়ামতের দিন তাদের হিসাব দিতে হবে। কারণ কোম্পানির মূল মালিক হল পলিসিহোল্ডারগণ।

তাই আসুন আমাদের সৃষ্টিকর্তার নামে শপথ নেই। আমরা সবাই বীমার নিয়মনীতি মেনে চলব, কোম্পানি চালাব, পলিসিহোল্ডারগণকে প্রতারণা করব না, তারা যাতে বেশি লাভবান হয় সেদিকে খেয়াল রাখব। কোম্পানির বীমা কর্মীদের ঠকাব না। আমরা সৎ নিষ্ঠার সাথে পরকালের কথা চিন্তা করে কাজ করব। তবেই আমরা আশ করি, দুনিয়াতে ও আখেরাতে আল্লাহ আমাদের ভাল রাখবেন। মনবসেবার ব্রতই হোক আমাদের প্রাণের শপথ।

লেখক: চেয়ারম্যান, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড