2822

07/01/2025

অভিন্ন বেতন কাঠামো নির্ধারণ হচ্ছে না বীমাখাতে

প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

আবদুর রহমান আবির: অভিন্ন বেতন কাঠামো নির্ধারণ হচ্ছে না দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমাখাতে। কোম্পানিগুলোর বর্তমান বেতন স্কেল এবং আর্থিক সক্ষমতায় অস্বাভাবিক তারতম্যের কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে অভিন্ন বেতন কাঠামো নির্ধারণ। এ অবস্থায় বেতন কাঠামো বেধে দেয়া হলেও তা কার্যকারিতা হারাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলছেন, দেশের বীমাখাতে যেখানে একজন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন-ভাতা ৪০ হাজার টাকা থেকে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বেতন কাঠামো কিভাবে একটা রেঞ্জের মধ্যে আনা সম্ভব। এখানে বেতন কাঠামো বেধে দেয়া হলেও তা কার্যকারিতা হারাবে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানির বেতন কাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। অন্যদিকে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও রয়েছে বিশাল ব্যবধান। কিছু বীমা কোম্পানির বেতন কাঠামোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। যদি দীর্ঘ দিন এ অবস্থা চলতে দেয়া হয় তাহলে বীমাখাতের জন্য তা হবে অমঙ্গলজনক।

জানা গেছে, দেশের বেসরকারি বীমাখাতে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি অভিন্ন বেতন কাঠামো নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের এক অফিস আদেশে লাইফ ও নন-লাইফ বীমাখাতে ১৬ সদস্য করে পৃথক দু'টি কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিটি কমিটিতে ১ জন সভাপতি, ১৪ জন সদস্য এবং ১ জন সদস্য সচিব রাখা হয়। কমিটি দু'টি সকল বীমা কোম্পানির জন্য একইরূপ সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল এবং অভিন্ন সার্ভিস রুল তৈরি করবে।

লাইফ বীমাখাতের জন্য গঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয় আইডিআরএ'র তৎকালীন সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমদকে এবং নন-লাইফ বীমায় সভাপতি করা হয় কর্তৃপক্ষের তৎকালীন সদস্য গকুল চাঁদ দাসকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন, ইন্স্যুরেন্স ফোরাম ও কোম্পানি প্রতিনিধিদের রাখা হয় এসব কমিটিতে।

কমিটি দু'টির কর্মপরিধিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের বীমা কোম্পানিসমূহের বিদ্যমান সার্ভিস রুল সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা; আন্তর্জাতিক বা প্রতিবেশি দেশসমূহের বীমা কোম্পানির সার্ভিস রুল সংগ্রহ ও পর্যালোচনা; দেশের বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য সুষম সাংগঠনিক কাঠামোর মডেল অনুসরণের লক্ষ্যে গাইডলাইন জারি।

এ ছাড়াও বীমা শিল্পে জনবলের দক্ষতা পরিমাপের মানদন্ড নির্ধারণ; বিভাগীয় প্রধানসহ বিভিন্ন পদে নূন্যতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিরূপর; এসব বিষয়ে আগামী ৩ মাসের মধ্যে পৃথক প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। অফিস আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১১ জুন লাইফ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশের সকল লাইফ বীমা কোম্পানিকে তাদের সার্ভিস রুলস এবং অর্গানোগ্রাম পাঠানোর নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সকল বীমা কোম্পানির জন্য একইরুপ সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল এবং অভিন্ন সার্ভিস রুল বাস্তবায়নে ২৯ আগস্ট এ চিঠি পাঠানো হয়।

এদিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের বীমাখাতে নির্ধারণ হয়নি অভিন্ন বেতন কাঠামো। বীমা কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের দাবির মুখেও আটকে আছে বেতন কাঠামো নির্ধারণের কার্যক্রম।

এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, কোন কোন বীমা কোম্পানি চল্লিশ হাজার টাকারও কমে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করে। আবার কোন বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী তেরো লাখ টাকারও বেশি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। এ অবস্থায় বেতনের কোন রেঞ্জ করা যাচ্ছে না। তাই অভিন্ন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা কঠিন।

তিনি আরো বলেন, বীমা কোম্পানির ভিপি’দের বেতন যদি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে কোন কোম্পানি আরো কম টাকায় নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বড় বীমা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার সাথে নতুন ও ছোট বীমা কোম্পানির সক্ষমতা মিলবে না। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর বেতন কাঠামো নয় বরং সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হক, এফসিআইআই বলেন; একদিকে সরকারি ও বেসরকারি বীমা কোম্পানির বেতন কাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। অন্যদিকে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও রয়েছে বিশাল ব্যবধান। কিছু বীমা কোম্পানির বেতন কাঠামোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।

তিনি বলেন, আমার জানামতে বেশ কিছু মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা গড়ে মাসিক বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা উপার্জন করেন। অন্যদিকে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পদস্থ কর্মচারীর বেতন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এসব কর্মচারীর অধিকাংশই স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত। আবার কেউ কেউ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত। এসব কর্মচারীর মাসিক বেতন এতটাই নিম্নমুখী যে এটা শুধু দুঃখজনকই নয় বরং অসম্মানজনকও।

তিনি আরো বলেন, বীমাখাতে দক্ষ জনবলের অভাব থাকার প্রধান কারণ- বিরাজমান নিম্ন বেতন-ভাতা এবং অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। আর্থিকখাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া সত্ত্বেও বীমাখাতের বেশিরভাগ সাধারণ কর্মচারী নিম্ন বেতন-ভাতা ও অপর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার কারণে মারাত্মক রকম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন যাপন করছে। দীর্ঘ দিন এ অবস্থা চলতে দেয়া বীমাখাতের জন্যই অমঙ্গলজনক।