3064

03/28/2024

মূখ্য নির্বাহীদের দৃষ্টিতে ২০২০ সালের বীমাখাত

প্রকাশ: ২ জানুয়ারী ২০২১

আবদুর রহমান আবির: ২০২০ সালের শুরুটা ছিল বেশ ভালোই। তবে বাধ সাধে করোনা মহামারী। পুরো বিশ্বকে প্রায় থমকে দেয় এই ভাইরাস। কোভিড থাবা বীমাখাতেও ছিল বেশ মারাত্মক। তবে বছরের শেষটা ছিল ঘুড়ে দাঁড়াবার। সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাহস এবং শক্তি যোগাবে বছরটি। ২০২০ সালের এই অভিজ্ঞতার আলোকে ২০২১ সালে আরো এগিয়ে যাবে দেশের বীমাখাত- এমনটাই প্রত্যাশা মূখ্য নির্বাহীদের।

মো. জালালুল আজীম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

করোনার কারণে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে আমাদের ব্যবসা কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে বছরের শেষ দিকে এসে মোটামুটি ভালো ব্যবসা হয়েছে। যার কারণে সেই ঘাটতি অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। আশা করছি ২০২০ সালে আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে হিসাব ক্লোজ করার পর সঠিত তথ্য জানাতে পারবো।  

বর্তমানে ইউরোপে করোনার প্রকোপ আবার বাড়ছে। যার কারণে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২০২১ সালে ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি। করোনার কারণে গত বছরের মাঝামাঝি ব্যবসা খারাপ গেলেও শেষ দিকে যেমন ভালো হয়েছে তেমনি এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসা বাড়বে, এটাই প্রত্যাশা।

এস এম মাহবুবুল করিম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, নিটল ইন্স্যুরেন্স:

করোনায় বিশ্বব্যাপী বীমার অবস্থা খারাপ ছিল। বাংলাদেশেও বীমা ব্যবসা কিছুটা কমেছে। তবে বছরের শেষ দিকে এসে বীমা ব্যবসা কিছুটা ভালো হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে আমরা ব্যবসা সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। এরপরও ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে আমাদের ব্যবসা প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। যদিও ব্যবসা ক্লোজিংয়ের পর প্রকৃত হিসাব জানা যাবে।

করোনার কারণে এখনো স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফ্রি-ভাবে আমরা গ্রাহকদের কাছে যেতে পারছি না। আবার গ্রাহকরাও আমাদের কাছে আসতে পারছে না। ব্যাংকগুলোতে আমাদের কর্মীরা যেতে পারছে না। আশা করি করোনার প্রভাব কমে আসবে, নতুন বছরটা ভালো যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আমাদের ব্যবসা আবার বেড়ে যাবে।  

ফারজানা চৌধুরী, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স:

২০২০ সালে আমরা প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারি নাই। এর বড় একটি কারণ ছিল করোনা মহামারী। তাছাড়া মটর থার্ড পার্টি বীমা বাতিলও ছিল বীমা ব্যবসা কমার একটি কারণ। সব মিলিয়ে গেলো বছরে আমাদের ব্যবসা ৭ থেকে ৮ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ক্লোজিংয়ের হিসাব হাতে পেলে আমরা সঠিক অবস্থা জানতে পারবে।

২০২১ সালে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য আমরা বড় বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছরটা ভালো যাবে। এক কোম্পানির ব্যবসা আরেক কোম্পানি না নেয়ার যে সিদ্ধান্ত রয়েছে সেটা আমাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। তাছাড়া প্রযুক্তির ওপর আমরা আরো বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, যা আমাদেরকে আরো এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামিম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স:

২০২০ সালে যেমন হওয়ার কথা ছিল ব্যবসা, তেমন হয়নি। নতুন কোম্পানি হিসেবে বিগত বছরগুলোতে আমাদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এ বছর তেমনটি হয়নি। তবে ব্যবসা সংগ্রহ গত বছরের মতোই হয়েছে। শুধু প্রবৃদ্ধি হয়নি। এবার মেরিন ব্যবসা ৪০ শতাংশের মতো কমেছে। জুলাইয়ের পর ব্যবসা কিছুটা ভালো হলেও নভেম্বরে এসে আবার তা কমেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় অনেক পলিসি বাতিল হয়েছে।

এ ছাড়াও মটর থার্ড পার্টি বীমা পলিসি এখন বাতিল করা হয়েছে। তবে আমাদের সেনাবাহিনীর লোকজন নিয়ম মেনে চলে বিধায় তারা থার্ড পার্টি বীমার পরিবর্তে ফার্স্ট পার্টি বীমা করবে বলে আমরা আশা করছি। এক্ষেত্রে থার্ড পার্টি বীমা বাতিল করায় আমাদের কোম্পানিতে তেমন প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি না। আমরা আশা করছি আগামী বছর ইনশাল্লাহ আমাদের ব্যবসা আরো ভালো হবে।

মো. খালেদ মামুন, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স:

মহামারীতে নানান সমস্যায় ছিল বীমাখাত। যার কারণে ২০২০ সালে আমাদের ব্যবসা বাড়েনি। যদিও পুরো হিসাব সম্পন্ন করলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে। তবে এ বছরের ব্যবসা আগের বছরের কাছা কাছি যাবে বলে আশা করছি।

নন-লাইফ বীমা ব্যবসার প্রাণ হলো মেরিন বা ইমপোর্ট বীমা। এই বীমায় লস রেশিও কম। কিন্তু গত বছরে মেরিন ব্যবসা একাবারেই হয়নি বলা যায়, ৩০/৩২ শতাংশ কমেছে। তাছাড়া এবার মটর ব্যবসাও বন্ধ, গাড়ির শোরুমগুলো বন্ধ থাকায় নতুন গাড়ি বেচা-কেনা হয়নি।

গেলো বছরে অতিরিক্ত কমিশন দেয়া কিছুটা কমেছে, যদিও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আমরা আইনে নির্ধারিত কমিশনে ব্যবসা করতে পেরেছি, যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল।

২০২১ সালে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি। তবে ২০২০ সালের প্রভাব দীর্ঘদিন থাকবে। নন-লাইফ বীমা ব্যবসা বড় একটি অংশ জড়িত পশ্চিমা দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজের সাথে। অথচ তাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো না, থমকে গেছে। এ অবস্থায় কতটা ভালো যাবে ২০২১ সাল তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।

তাছাড়া মটর থার্ড পার্টির বড় একটা প্রভাব পড়বে এ বছর। এখান থেকে আমাদের বড় একটা ব্যবসা আসতো। অথচ এখন সেটা বন্ধ। পেনডামিকের কারণে গেলো বছরে কোন নতুন বাজার সৃষ্টি হয়নি। এ বছরেও হবে বলে মনে হচ্ছে না। সব মিলিয়ে অস্বচ্ছ অবস্থা বিরাজ করছে আগত দিনের বীমা ব্যবসায়।

এমএম মনিরুল আলম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

করোনার কারণে ব্যবসা কিছুটা কম হলেও গত বছরের চেয়ে এবার ব্যবসা ভালো হয়েছে। ক্লেইম রেশিও বেড়েছে। গ্রস প্রিমিয়ামও বেড়েছে। নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ গতানুগতিকের চেয়ে ভালো হয়েছে। আমরা আগে থেকেই অনলাইন মাধ্যমে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করায়, করোনাতেও থেমে যায়নি কাজ।

করোনা সংক্রমন রোধে দীর্ঘ বন্ধের কারণে বছরের প্রথম দিকে ব্যবসা ভালো না হলেও বছরের শেষ ২/৩ মাসে ভালো ব্যবসা হয়েছে। আমরা আশা করছি লকডাউন না হয়ে সার্বিক কর্মকাণ্ড বর্তমান অবস্থায় চলতে থাকলেও আগামী ২০২১ সালটা ভালো যাবে।

মো. আপেল মাহমুদ, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০২০ সালে আমরা ভালো সূচনা করেছিলাম। কোভিড-১৯ আমাদে ছুঁতে পারেনি। নির্ধারিত সময়েই আমরা লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে পেরেছি। তবে আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থাকতে হয়েছে। বীমার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাঠে থাকা। আলহামদুলিল্লাহ, ২০২০ সালে আমরা সব মিলিয়ে যুগান্তকারী সূচনা ও সমাপ্ত করতে পেরেছি। এ বছর আমাদের নতুন ব্যবসায় প্রায় ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছি এবং গ্রস প্রিমিয়ামে এই প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ দাঁড়াবে।

আগামী বছরের জন্য আমরা সুন্দর একটা পরিকল্পনা করেছি। প্রত্যাশা করছি ২০২১ সালে আমরা আরো ভালো ব্যবসা করতে পারবো। বিদায় বছরে আমরা রিক্রুটমেন্টের ওপর জোর দিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি অর্জনের এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও ধরে রাখতে পারব।

এসএম নুরুজ্জামান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, জেনিথ ইসলমী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

করোনা মহামারী আমাদের বেশ বড় আঘাত হেনেছে। নতুন কোম্পানি হওয়ায় এমনিতেই আমরা থাকি চ্যালেঞ্জে, তারওপর দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় এবার ব্যবসা সংগ্রহ কমেছে। তবে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ গতানুগতিক ধারায় এসেছে। তাছাড়া বছরের শেষ দিকে এসেছে ব্যবসা সংগ্রহ আবার কিছুটা বেড়েছে, যদিও প্রবৃদ্ধি নেই।

আগামী ২০২১ সালে যদি এমন কোন বড় বাধা আর না আসে তাহলে আমরা আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এবং নতুন উদ্যোমে আমরা আগামী বছরে কাজ করবো। আমরা আশা করছি ইনশাল্লাহ আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা বাড়বে এবং প্রবৃদ্ধি হবে।