896

03/28/2024

১১ মার্চ পর্যন্ত পেছনের তারিখে পলিসি করবে ফারইষ্ট; ঝুঁকিতে বীমা গ্রাহক

প্রকাশ: ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

বিশেষ প্রতিনিধি: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র কাছে জমা দেয়া ২০১৭ সালের হিসাবে দেখানো অর্জিত প্রিমিয়াম আয় পূরণ না হওয়ায় আগামী ১১ মার্চ পর্যন্ত পেছনের তারিখ দেখিয়ে পলিসি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

১১ মার্চ পর্যন্ত বিক্রি করা পলিসিতে পলিসি প্রস্তাব, প্রথম প্রিমিয়াম জমা এমনকি ঝুঁকি গ্রহণের তারিখ দেখানো হবে গত বছরের ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর। এ কৌশলে পলিসি বিক্রি করতে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে মৌখিকভাবে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এদিকে পেছনের তারিখে পলিসি করায় এসব গ্রাহক ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে মনে করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এসব পলিসি বেশ কিছু আইনি জটিলতা সৃষ্টি করবে। বীমা কোম্পানি অবগত থাকছে যে এসব পলিসিতে দেয়া তারিখ প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা। যদি কোন পলিসির মৃত্যুদাবি ওঠে তখন তারিখের এ মিথ্যাচার দেখিয়ে দাবিটি নাকচ করে দেয়ার সুযোগ পাবে কোম্পানি। এর ফলে গ্রাহকস্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। প্রকৃত পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে গ্রাহকরা।

আইডিআরএ’র কাছে দাখিল করা ২০১৭ সালের হিসাবে প্রথম বর্ষ ও নবায়ন প্রিমিয়াম আয় ১ হাজার ১২ কোটি টাকা দেখিয়েছে ফারইষ্ট লাইফ। এর মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৩৭৬ কোটি টাকা ও নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৬৩৬ কোটি টাকা।  কিন্তু ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশের শাখা অফিসের মাধ্যমে কোম্পানিটির একক বীমায় প্রথম বর্ষ ও নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয় ৭শ' ২০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ২৫৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং নবায়ন ৪৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

অন্যদিকে সার্বজনিন বীমায় আজ বুধবার পর্যন্ত প্রিমিয়াম সংগ্রহ ১৮০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম বর্ষে ৮৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা, নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৯৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আইডিআরএ দাখিল করা প্রিমিয়াম সংগ্রহের হিসাবের চেয়ে এ হিসাব ১১০ কোটি টাকা কম।

দেখানো হিসাবের এ ঘাটতি পূরণ করতেই পেছনের তারিখ দেখিয়ে পলিসি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফারইষ্ট।

এ সম্পর্কে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর এক চিঠিতে আইডিআরএ জানায়, “তাছাড়া ২০১৭ সালে প্রদর্শিত ১ম বর্ষ ব্যবসার বিপরীতে ব্যাংক জমা অবশ্যই ১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের মধ্যে হতে হবে এবং ১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের পর প্রদর্শিত ব্যাংক জমা ২০১৮ সালের ব্যবসা হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের বিপরীতে কালেকশন ইন হ্যান্ড/ ক্যাশ ইন ট্রানজিট/কালেকশন কন্ট্রোল এ্যাকাউন্ট/ব্রাঞ্চ কন্ট্রোল এ্যাকাউন্ট শিরোনামে কোন অর্থ প্রদর্শন করা যাবে না।”

বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রিমিয়াম আয়ের যে অগ্রিম হিসাব দেখানো হয়েছে তা এক ধরণের ফাঁকিবাজি। কারণ প্রিমিয়াম আয়ের সঙ্গে কমিশন, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হিসাব জড়িত। এসব কারণ মাথায় রেখেই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া বর্ষ সমাপনী হিসাবে প্রিমিয়াম আয় বেশি দেখানো হয়েছে।

সে হিসাব যখন পূরণ হয়নি তখন পরের বছরের প্রিমিয়াম আয়কে আগের বছরের হিসাবে দেখানোর কৌশল নিয়েছে বীমা কোম্পানিটি। এটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সঙ্গেই নয় গ্রাহকের সঙ্গেও প্রতারণার সামিল। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বীমা আইন অনুসারে অভিযুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমলক ব্যবস্থা নিতে পারে আইডিআরএ।

এ বিষয়ে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেরেন্স কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত উল্লাহ'র সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন কথা বলতে পারবেন না বলে খুদে বার্তা পাঠান।

এ বিষয়ে আইডিআরএর একজন সদস্য জানান, সম্প্রতি প্রণয়ন করা পরিদর্শন ম্যানুয়ালে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। আমাদের কাছে ইতোমধ্যেই এবিষয়ে অভিযোগ এসেছে। খোঁজ-খবর নিতে শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন দল পাঠানো হবে।