শরীয়া ও ইথিকস- এ দুই চাকায় চলে আফ্রিকার তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স: মাসুদুজ্জামান

আফ্রিকার তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স মূল চালিকা শক্তি শরীয়া ও ইথিকস। বীমা ব্যবসায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণ নয়, গুরুত্ব দেয়া হয় ইথিকস আর শরীয়াকে। এ দুইয়ের সমন্বয়ে সাজানো হয় পলিসি বিক্রি থেকে বীমা দাবি পরিশোধ তথা কোম্পানির সার্বিক ব্যবস্থাপনা। একচুল হেরফের হয় না।

এখান থেকেই আলোচনা শুরু করলেন মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান খান।

তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স অব আফ্রিকা নামে কেনিয়া ভিত্তিক একটি বীমা কোম্পানিতে কর্মরত আছেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান খান। সোমালিল্যান্ডের রাজধানী হার্গেইসায় অবস্থিত কোম্পানিটির শাখা অফিসের মেডিকেল আন্ডাররাইটিং অ্যান্ড ক্লেইমস বিভাগের প্রধান।

ঈদের ছুটিতে দেশে এলে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডিতে আসেন সৌজন্য সাক্ষাতে। কথা হয় বীমা বিষয়ে। ওই দেশের বীমা প্রধান বিষয় হলেও বাংলাদেশের বীমা ব্যবসার সঙ্গে তুলনাও ওঠে প্রাসঙ্গিকতায়। আলোচনায় আসে ব্যবস্থাপনা ব্যয়, কমিশন, বিক্রয় কৌশল, বীমা পণ্য, বিনিয়োগ, গ্রাহক সেবা এবং সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে- বিশেষ করে দাবি পরিশোধ বিষয়ে।

তাকাফুল বা ইসলামী বীমা ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শরীয়া কাউন্সিল ও গুরুত্ব পায়।

 

ইন্স্যুরেন্সকে শরীয়ার সঙ্গে মানিয়ে চালানোর নীতি তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স’র।

কেনিয়ার বীমাখাতে কঠোরভাবে শরীয়া অনুসরণ করে। পণ্য, বিনিয়োগ ও ক্লেইম সবই শরীয়াহ ভিত্তিতে হয় । শরীয়ায় যা অনুমোদিত সবই তাদের বীমায় অন্তর্ভুক্ত। শরীয়ার উপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হয় বীমা পণ্য। আবার ক্লেইম পরিশোধের সিদ্ধান্তও হয় শরীয়ার বিচারে।

 

ইন্স্যুরেন্স অ্যাওয়ারনেস আফ্রিকার এ অঞ্চলে এতো ডেভেলপ না, কিন্তু কোম্পানিগুলোর এথিকস ‍খুব স্ট্রং।

আমার কোম্পানি ব্যবসাটি শুরুই করে হেলথ ইন্স্যুরেন্স চালুর মধ্য দিয়ে। শুরুটাই হেলথ। এটা খুব বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল কোম্পানির জন্য। কেননা আপনি জানেন যে, হেলথ ইন্স্যুরেন্স মানে আজকে পলিসি হওয়ার পর কালকেই ক্লেইম হবে।  এরপরও কোম্পানি এ চ্যালেঞ্জটি নেয় যাতে জনসাধারণের মাঝে দ্রুত অ্যাওয়ারনেস বাড়ানো যায়।

অথচ অভিজ্ঞতাটি এমন কোম্পানির প্রথম দুবছর খুব বড় চ্যালেঞ্জ গেছে। এ সময়ে একদিকে কোম্পানি প্রচুর আয় করছে অন্যদিকে ক্লেইম পরিশোধে তা বেড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন বাস্তবতা হচ্ছে কোম্পানি টিকে গেছে। তারা আয় করছে। আমাদের গ্রাহকের বাড়িতে বাড়িতে যেতে হয় না। গ্রাহক নিজেই এসে পলিসি করে।

আমাদের কোম্পানি হচ্ছে আফ্রিকার ফার্স্ট তাকাফুল। ২০১২ তে এটা স্টার্ট করেছে। প্রথমে জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের জন্য লাইসেন্স পায়। পরে ২০১৪ তে লাইফ ইন্স্যুরেন্স স্টার্ট করে কেনিয়াতে। কেনিয়াতে এস্টাবলিষ্ট হওয়ার পর অন্যান্য দেশে তাকাফুলটা ইন্স্যুরেন্সটা স্টার্ট করে। আমার কোম্পানি শুধু কেনিয়াতেই ব্যবসা ধরে রাখতে চায়নি। পুরো আফ্রিকাতেই ব্যবসার ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে। ফলে কোম্পানির বর্তমান ব্যবসাক্ষেত্রটি সোমালিল্যান্ড, ইথুপিয়া, সোমালিয়া, জিবুতি চারটি দেশ মিলে।

 

বীমা পলিসি করাতে কোম্পানিগুলো গ্রাহকের দোড় গোড়ায় যতটা না যায়, তার চেয়ে গ্রাহকরাই কোম্পানির কাছে বেশি আসে।

আমি যে এলাকায় কর্মরত সে এলকার সাধরাণ মানুষের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অনেক কম। তাদের জীবন যাত্রার মানও খুব উন্নত নয়। সেখানে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার আর আমাদের দেশে ১৬শ’ ডলার।  অথচ বীমা সুবিধার বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব সচেতন।  পলিসি করতে নিজেরাই কোম্পানির অফিসে চলে আসে। জানে, বোঝে তারপর পলিসি কেন।

 

শর্টটার্ম পলিসি দিয়ে এ অঞ্চলে গরীব মানুষকে বীমার প্রতি আগ্রহী করা গেছে।

আমার কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর সাথে আমার একাধিকবার কথা হয়েছে। তিনি মনে করেন, বীমাকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। বীমা উপকারিতা কাগজে কলমে নয়, প্রাকটিক্যালি সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। তাহলেই তারা বীমার প্রতি আকৃষ্ট হবে। দীর্ঘ মেয়াদি পলিসির উপকার পেতে অপেক্ষা করতে হয়। এতে আগ্রহ সৃষ্টি হয় না। আমার কোম্পানি এক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে শর্টটার্ম পলিসিগুলোর প্রতি। এক্ষেত্রে হেলথ ইন্স্যুরেন্স বেশি উপযোগী।

 

দীর্ঘমেয়াদী সেবার ক্ষেত্রে পেনশন বীমাকে সুবিধাজনক মনে করা হয়।

বর্তমানে ১১টি কোম্পানি পেনশন বীমা চালুর অনুমোদন পেয়েছে। দেশটিতে সরকারি কোন পেনশন সুবিধা নেই। বীমা কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই পেনশন দেয়া হয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পেনশন সুবিধাও এই বীমার মাধ্যমে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে পেনশন পলিসি চালু করা হয়। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বন্ড জমা রাখতে হয়। অর্থাৎ গ্রাহক ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ রাখতে হয়, যাতে বীমা প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত বা দেউলিয়া হলে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে পেনশন পরিশোধ করা যায়।

 

ভেল্যু অ্যাডেড সার্ভিসের আওতায় বীমা গ্রাহককে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেয়া হয়।

জরুরি মুহুর্তে এ্যাম্বুলেন্স পেতে হাসপাতালে নয়, গ্রাহকরা ফোন করে বীমা কোম্পানির কাস্টমার সাপোর্ট সেন্টারে। এরমাধ্যমে কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেয়। আমার কোম্পানিতে ৮৫টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে গ্রাহক সেবার জন্য। প্রতিটি শাখা অফিসে মার্কেটিং টিমের জন্য শুধুমাত্র ২টি করে গাড়ি আছে।

 

চুক্তিভুক্ত হাসপাতাল যথাযথ সেবা দিচ্ছে কি না তা মনিটর করা হয়।

গ্রাহক আমাদের কাছে বীমা করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য। আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালগুলো আমাদের গ্রাহককে ঠিকমতো সেবা দিচ্ছে কি না তা আমরা মনিটর করি। ভিজিট করি। কোন হাসপাতালের ত্রুটি ধরা পড়লে তার সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়।

 

গাড়ি দিবে কাকে?

আমাদের দেশে কোনো কোনো কোম্পানিতে শত শত গাড়ি রয়েছে। এমনকি নতুন কোম্পানিগুলো যারা ২০১৩ সালে অনুমোদন পেয়েছে তাদেরও গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতার শেষ নেই। একজন মাঠ কর্মকর্তাকে গাড়ি না দিলে মাঠে নামানো যায় না।

বাংলাদেশের বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো অন্যকোন কর্মকর্তাদের জন্য বা মার্কেটিংয়ে কর্মরত কর্মকতাদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ নেই । তবে বিদেশি কর্মকর্তাদের গাড়ি সেবা দেয়া হয়। অফিসের পুলে গাড়ি থাকে। অফিসের কাজের প্রয়োজনে এসব গাড়ি কর্মকর্তারা ব্যবহার করতে পারেন।

 

এক্সক্লুশনের মধ্যে একটা ক্লজই আছে- শরীয়ার মধ্যে না পড়া।

এক্সক্লুশনের মধ্যে একটা পার্টই আছে, যা শরীয়ার বাইরে চলে যায়।  আমাদের এশিয়ান কান্ট্রিতে ফার্স্ট এক্সক্লুশন হচ্ছে এইডস। আমরা কিন্তু এইডসটাকে কাভার দিই। যদি ইন্ডিয়া দেখেন, বাংলাদেশ দেখেন।  এক্সক্লুশনের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া কিন্তু অনেক ওয়াইড প্র্যাকটিস করে।  দেখবেন ওদের এক্সক্লুশনে আছে- প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ ফর এক্সক্লুডেড।  আমাদের দেশের শরীয়া বোর্ড এটাকে একসেপ্ট করে নাই।  প্রি-এক্সিস্টিং এ ৩ মাসের একটা ওয়েটিং পিরিয়ডে রাখে। একটা লোকের অসুস্থ থাকতে পারে, সে নাও জানতে পারে। তুমি প্রি-এক্সিস্টিং ক্লজটি যদি যোগ করে দাও তাহলে ওই লোকটি কিন্তু আমার ইন্স্যুরেন্সের সার্ভিস পাবে না। এইডস, এইডস বিভিন্ন কারণে হচ্ছে। এখন সেটা যদি শরীয়াতে আসে, সে যদি ইললিগ্যাল কোন কাজ করতে গিয়ে হয় তাহলে সেটা শরীয়া কমপ্লায়েন্সের বাইরে চলে গেলে সেটা আউট অব সার্ভিস। আর শরীয়া কমপ্লায়েন্সের মধ্যে যদি থাকে তাহলে সেটা, আমরা ক্লেইম সেটেলমেন্টর সময় দেখি এইডস বা গণরিয়া যেটা সেক্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এইটার জায়গায় খুব সেনসিটিভ। এই ধরণেরে ক্লেইম যদি শরীয়া কমপ্লায়েন্সের মধ্যে না পরে তাহলে যেকোন ক্লেইম আমরা বাতিল করব। এইটার ক্ষেত্রে কোম্পানি খুব স্ট্রিক্ট। শরীয়া কমপ্লায়েন্সের মধ্যে পড়লে ক্লেইম বাতিল করার কোন স্কোপ আমাদের নেই। এজন্য আমাদের এক্সক্লুশন লিস্টটা খুব বড় না, ছোট। প্রি-এক্সিস্টিং দেখে তো আমার মাথা খারাপ, প্রি-এক্সিস্টিং এইডস যেটা আমরা কাভারেজের বাইরে রাখছি । ওরা এটাকে ভিতরে রাখছে-  ওটাকে শরীয়া দিয়ে বিচার করছে।

 

ক্লেইম সেটেলমেন্টর ক্ষেত্রে কোম্পানি প্রিন্সিপালটা হচ্ছে সব চেয়ে লিবারেল থাকা।

ক্লেইম সেটেলমেন্টর ক্ষেত্রে কোম্পানি প্রিন্সিপালটা হচ্ছে সব চেয়ে লিবারেল থাকা। তাকাফুলের যে প্র্যাকটিস, তা হলো ইসলামী শরীয়া চিন্তাটাকে লালন করা। যদি এইডস, এটা শরীয়ার মধ্যে থাকে তাহলে ক্লেইম দিচ্ছে। যেমন-এইডস অনেক কারণে হতে পারে। গণরিয়া, সিফিলিসের অনেক কারণ থাকতে পারে। যদি শরীয়া কমপ্লায়েন্সের মধ্যে থাকে তাহলে দাবি দিতে হবে।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি । গত সপ্তাহে একটা মৃত্যু দাবি এসেছে। মহিলা মারা গেছে এইডস এ। এইডস তার হলো কিভাবে? মহিলার বিয়ের পর এইডস হয়েছে। বাহক ছিল তার স্বামী। মহিলা তো শরীয়া বিরোধী কাজ করে এইডস বাঁধায়নি। মহিলা তো কোন অন্যায় করেনি। কাজেই ক্লেইম দিয়ে দিতে হলো।

যদি প্রমাণ হতো মহিলা শরীয়া বিরোধী কাজ করে এইডস এ আক্রান্ত হয়েছিল, তাহলে বীমা দাবি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

যদি কোন ক্লেইম শরীয়া কমপ্লায়েন্সের মধ্যে না পরে, ডাইরেক্ট রিজেক্ট করব। কেউ মদ খেয়ে ফেললো, মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কিছু একটা হলো বা মারা গেল, ওইটা স্ট্রিক্টলি আমরা দেব না। কারণ, এইটা শরীয়া কমপ্লায়েন্সের বাইরে চলে গেল। এই জায়গাটায় কোম্পানি স্ট্রিক্ট। শরীয়ার মধ্যে যদি থাকে তাহলে ক্লেইম দেব। এটা আমরা একেবারেই লিবারেল। যদি কোন প্রোবলেমও থাকে তাহলে তা মিনিমাইজ করে ক্লেইমের একটা এমাউন্ট গ্রাহককে দেয়া হচ্ছে।

 

ক্লেইম পরিশোধের বিষয়ে শরীয়া কাউন্সিল অ্যাপিলেট বডি কাজ করে।

প্রতি তিন মাসে ক্লেইমের প্রতিবেদন শরীয়া কাউন্সিলে পাঠাতে হয়। শরীয়া কাউন্সিল ওগুলো মূল্যায়ন করে। যদি এমন কোন ক্লেইম থাকে যা শরীয়ার আওতায় পড়ে কিন্তু আমরা পরিশোধ করিনি তা দিয়ে দিতে ফেরত পাঠায়। তখন আমরা দিতে বাধ্য।

যেকোন ইস্যুতে একটা ক্লেইম যদি আমরা বাতিল করে দেই সেটা শরীয়াহ বোর্ডে যাচ্ছে। শরীয়া বোর্ড সেটাকে যাচাই করে দেখছে এটা শরীয়া অনুযায়ী হয়েছে কিনা। শরীয়া কাউন্সিলের কা‌র্যক্রম আমি কখনই বাংলাদেশে আমাদের মতো দেখি না। প্রতি ৩ মাসে আমাদের ক্লেইম রিপোর্ট আন্ডাররাইটের পর চলে যায় শরীয়া বোর্ডে। অল রিপোর্টস শরীয়া কাউন্সিলে যায় এবং ওরা সেটা কমপাইল করে। কমপাইল করে দেখে যে এই জিনিসগুলো ঠিক আছে কিনা।

ইসলামিক রুলস অনুযায়ী ক্লেইমস, আন্ডাররাইটিং ও অ্যাকাউন্টস, বিনিয়োগ অপারেট করি।  সবই সে অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

আমরা যখন আন্ডার রাইট করি তখন দেখি, কারো যদি একটা মোরাল হ্যাজারডের বিষয়টি থাকে তাহলে ৩ মাসের মধ্যে একটা মিটআপ হয়ে যাবে। মোরাল হ্যাজার্ডেরটা ৩ মাস। এক্ষেত্রে ৬ মাস বা ১ বছর প্রয়োজন নেই।  ওই তিন মাস আপনার প্রি-এক্সিস্টিং কাভারেজ আমরা দেব না। কারো যদি ব্যাড ইনটেনশন থাকে সেটা যাতে আমাদের কোম্পানি সাফার না করে। ৩ মাস পর তো যেকোন ডিজিজ এক্সপান্ড করতে পারে। অনলি প্রি-এক্সিসটিং ডিজিজটা ৩ মাসের ওয়েটিং পিরিয়ড। প্রি-একজিসটিং এবং ম্যাটার্নিটি এটার জন্য খালি ৩ মাসের একটা ওয়েটিং পিরিয়ড। অন্য কোন রোগ নয়। কিন্তু কেউ যদি ডিক্লার না দেয় তাহলে তো সেটা অন্য কমপ্লায়েন্সে চলে গেল। শুধুমাত্র ডিক্লার দেয়া রোগের ক্ষেত্রে ওয়েটিং পিরিয়ড ৩ মাস।

উদাহরণসরূপ, আমার অ্যাজমা আছে। অ্যাজমাটা আগামী ৩ মাস পর্যন্ত কাভার পাব না। এটা প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ। এ ডিজিজটা বোঝা যাবে যে সেটা আগে থেকেই ছিল কিনা বা তার জানার মতো স্কোপ আছে কি না। আর আমরা (বাংলাদেশে) প্রি-এক্সিস্টিং আমরা টোটালি বাদ দিচ্ছি।

 

কমিশন লেয়ারের কিছু নেই।

আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের একটা বড় ধরণের ইনকাম চলে যায় হচ্ছে বিজনেজ আনতে গিয়ে। তো ওইখানে সেই জিনিসটা অনেকটাই কম। বা মার্কেটিংয়ে আমাদের যে স্টেপ ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ স্তরের কাঠামো ওইখানে সে রকম কোন ব্যাপার নেই। ওইখানে হিউজ ব্রোকারেজ হাউজ আছে। তারাই বিজনেস দিচ্ছে তারাই ১০%- ১৫% কমিশন নিচ্ছে। কাজেই ব্যবসা আনতে খরচ হচ্ছে ১০% থেকে ১৫%।

ব্রোকারেজ হাউজ দিয়ে যদি আসে তাহলে ব্রোকারেজ হাউজের সিগনেচার থাকবে। আর আমাদের মার্কেটিং টিমের মাধ্যমে যদি আসে, ওরাই এজেন্ট। যদি আমার কোম্পানি ডাইরেক্ট বিজনেস করে তাহলে সেক্ষেত্রে আমার কমিশনের একটা পার্সেন্টেজ আমি শো' করতে পারছি।

মনে করেন, আমি মার্কেটিংয়ে যদি থাকি তাহলে আমি হচ্ছি লো পেইড। আমাকে প্রতিমাসে একটা করে এমাউন্ট দিচ্ছে। আবার আমার বিজনেসের ওপর আরেকটা পার্সেন্টেজ দিচ্ছে। অর্থাৎ সেই এজেন্ট, সে বেতনভুক্ত। সে আমার স্টাফ সে আমার প্রোপোজাল ফরমে আমার এজেন্টের যে জায়গাগুলো সেখানে সে সাইন করছে। অর্থাৎ লেয়ারের কিছু নেই।

আমাদের প্রত্যেকটা অফিসে মার্কেটিং টিম আছে। যে যার ইনডিভিজ্যুয়াল বিজনেসগুলো করছে। যারা মার্কেটিং টিমে আছে তাদের মধ্যে যারা নতুন, এরা লো পেইড। এরা মাসে হয়তো একটা এমাউন্ট পায়। আর বাকীটা তারা বিজনেস থেকে নেয়। অর্থাৎ কেউ যদি বিজনেস দেয় ওই বিজনেসের একটা পার্সেন্টেজ পায়। এই পার্সেন্টেজ- নট মোর দেন ১০%। আমার ইমপ্লয়ির ক্ষেত্রে নট মোর দেন ১০%। আর ব্রোকারেজ হাউজকে আমরা ১৫% দেই।

 

প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ হয়ে থাকে একচ্যুয়ারির ফ্রেম এবং ক্লেইম এক্সপেরিয়েন্স বিবেচনায়।

একচ্যুয়ারি ফ্রেম দিয়েছে যে, এই রেট তুমি নাও। কিন্তু আপনার ক্লেইম এক্সপেরিয়েন্স তো ভিন্ন। কেয়ার'র ক্লেইম এক্সপেরিয়েন্স ভিন্ন, আবার যদি বলি ওয়াল্ডভিশন, তাদের ক্লেইম এক্সপেরিয়েন্স ভিন্ন। যেমন কেয়ার’র গত বছর হিউজ ক্লেইম হয়েছে। ইনপ্যাশেন্ট, আউট প্যাশেন্ট, ডেন্টাল প্রত্যেকটার জন্য আলাদা কমপেয়ার করে কি পার্সেন্ট হয়েছে তার ওপর আমি এ বছর হাই রেটিং করেছি। কেয়ারও সেটা একসেপ্ট করেছে।

কিন্তু কোম্পানি থেকে আমাকে বলা হয়েছে, আমি কেয়ার’র লাস্ট ইয়ার এবং এই বছরের রেটিং এ যে ডিফারেন্সটা হলো এটার এস সুন এস রেডি করে সাবমিট করতে হবে। কারণ কেন বাড়ানো হলে সেটা রেগুলেটরিকে দেখাতে হবে। রেগুলেটরি আমার এইটার ওপর স্টার মার্ক করবে। যে এটা কতটুক এ্যাকুরেসি ছিল। এটা হলো রেগুলেটরির কাজ।

গত বছর আমরা বেস্ট ক্লেইম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। রেগুলেটরি থেকে আমাদেরকে বেস্ট ক্লেইম অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। তাহলে আন্ডাররাইটং প্র্যাকটিসের ভিতর ওরা দেখবে যে আসলে আমরা আন্ডাররাইটং ভালোভাবে করতে পারছি কিনা। ওরা তখন আমার অফিসকে গাইড দিবে যে তোমার আন্ডাররাইটংটা এই স্টাইলে কর, এই স্টাইলটা করা উচিত। তোমার রেটিংটা এইভাবে উচিত।

 

নিবন্ধন পেতে প্রতিটি কোম্পানিকে প্রতিবছর অন্তত একটা নতুন পণ্য চালু করতে হয়। 

কেনিয়ায় ৫০টার মতো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে। প্রতিবছর এদের রিনিউ করতে হয় আমাদের বাংলাদেশের মতো। রিনিউ এর এক নম্বর শর্ত হচ্ছে প্রতিবছর মিনিমাম একটা নতুন প্রোডাক্ট বাজারে ছাড়তে হরব।

বাংলাদেশে যেটা দেখা যায়, লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আমাদের যে প্রোডাক্ত, সেগুলো একেবারেই লং টার্ম। কিন্তু আপনি যদি মিডলইস্টে যান, ইউরোপের মার্কেট বা আফ্রিকান মার্কেটে যান, ওরা কিন্তু প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ওই জায়গা থেকে সরে আসছে। আমাদের বেজ হচ্ছে হেলথ ইন্স্যুরেন্স। তারপরে আসছে পেনশন। তারপরে আসছে পার্সোনাল এক্সিডেন্ট।

ওরা ইন্স্যুরেন্স সার্ভিসটা  দেখতে যাচ্ছে অন্যভাবে। আমি যদি ডাইরেক্টলি কাউকে সুবিধা দিতে চাই তাহলে আমাকে হেলথে আসতে হবে। লং টার্মের ক্ষেত্রে পেনশন কিন্তু ইন্ডিভিজ্যুয়াল হয় না। কোম্পানিগুলো ইমপ্লয়িদের পেনশন দেয়, সাপোর্ট দিচ্ছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

 

নিয়ন্ত্রণক সংস্থা খুঁজে বের করে একটি কোম্পানি কি ধরণের সমস্যায় পড়েছে। এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়।

আমি যে কোম্পানিতে কাজ করছি “তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স অব আফ্রিকা'কে ৫টি দেশের কমপ্লায়েন্স বজায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে অন্যকোন দেশের আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে সে বিষয়ে কেনিয়ার বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে হয়। কেনিয়ায় ৫০টির মতো বীমা কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশের মতো তাদেরও প্রতিবছর নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়। তবে কেনিয়ার নিয়ন্ত্র্রক সংস্থা খুবই বন্ধু সুলভ আচরণ করে। তারা প্রথমে দেখে একটি কোম্পানি কি ধরণের সমস্যায় পড়েছে। তারা সেটা খুজে বের করে।  এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে পরামরর্শ দেন। তাদের ভিতর কঠোরতা বা চোর পুলিশ আচরণ বা বলা যায় চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা নেই। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে।

 

সব ধরণের রোগের জন্য গ্রাহককে স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা দেয়া হয়। তবে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ঝুঁকি বিবেচনায়।

 বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি তাদের এমপ্লয়ীদের গ্রুপ বীমার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বীমার সুবধি দিয়ে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা নিতে পারে বীমা গ্রহীতারা। স্বাস্থ্য বীমার ৫টি অংশ রয়েছে- ইনপেশেন্ট, আউটপেশেন্ট, ডেন্টাল, ম্যাটর্নিটি। তবে প্রিমিয়াম বেশ হাই।  অ্যাভারেজে বলা যায় ১০০ টাকার স্বাস্থ্য সেবায় কোম্পানিগুলো ৫৫ টাকা পর্ন্ত প্রিমিয়াম নিয়ে থাকে। তবে ক্লেইম রেশিওর উপর প্রিমিয়াম হার কম বেশি হয়।

 

বিনিয়োগের খাত নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে জবাবদিহিতা আছে।

মুনাফা নয়, নিশ্চিত খাতে বিনিয়োগ করে বীমা কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলো খুব অল্প মুনাফাতেও বিনিয়োগ করে থাকে। কোম্পানি চালুর সময় বন্ড ছাড়তে হয়। কিন্তু তারপর আর বাধ্য নয়। সেখানে বিনিয়োগ উন্মুক্ত। কোম্পানিগুলো যেখানে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারে। আমাদের দেশের মত বিনিয়োগে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে জবাব দিহি আছে। প্রতিবছর হিসাব প্রদানের সময় কঠোরভাবে বিচার করা হয়- অর্থের ব্যবহার যথাযথ হয়েছে কিনা, জনগণের টাকা নষ্ট হচ্ছে কিনা। অর্থাৎ বিনিয়োগের শুরুতে নয়, ধরা হয় বছর শেষে। দেশটিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কঠোর, তবে কার্যের পরিধি উন্মুক্ত।

 

বীমা প্রতারণা সেখানেও আছে।

হাসপাতালগুলো এসব প্রতারণা করে থাকে। অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা তথা প্রয়োজনের বেশি চেকআপ করে খরচ বৃদ্ধি করে। এজন্য গ্রাহককে নয়, ধরা হয় হাসপাতালগুলোকে। সতর্ক করা হয় তাদেরকে।

 

সরকারের নিজস্ব স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প আছে।

ন্যাশনাল হসপিটাল ইন্স্যুরেন্স ফান্ড বা এনএইচআইএফ কার্ডের মাধ্যমে গরীব জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেয় কেনিয়া সরকার। এসব কার্ডধারীকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের যোগান হয় এসব কার্ডে। তবে এর বেশি খরচ হলে কার্ডধারীকে বহন করতে হয়। ‍

অনুলিখন- রহমান সিদ্দিকী