নতুন ব্যবসা বাড়ছে না জীবন বীমা খাতে



অনুপ সর্বজ্ঞ: মানুষের আয় বাড়ছে, সঞ্চয়ের আগ্রহও বাড়ছে। জীবনযাত্রার মানেও এসেছে পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে দেশের বীমা খাতও। কিন্তু আর্থিকভাবে সাবলম্বী বিপুল সংখ্যক জনগনকে আকৃষ্ট করতে পারছেনা জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। এমন অবস্থা বিরাজ করছে গত ৮ বছর ধরে।
সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০১৮ সালেও নতুন ব্যবসা সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ ২০১০ সালে প্রবৃদ্ধির এ হার ছিল ১৬ শতাংশ।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে ধ্বস নামতে শুরু করে জীবন বীমা খাতে। ২০১১ সালে প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও তা ধরে রাখতে পারেনি কোম্পানিগুলো।
২০১৫ সালে নতুন ব্যবসা সংগ্রহে প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৬ সালে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। এবং ২০১৭ সালে এসে প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশে। বিআইএ ও আইডিআরএ’র তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই চিত্র পাওয়া গেছে।
আইডিআরএ’র তথ্য অনুসারে, নতুন ব্যবসা সংগ্রহে ২০১৮ সালে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রস প্রিমিয়ামে প্রবৃদ্ধির হার ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আলোচ্য বছরে দেশের ৩২ টি জীবন বীমা কোম্পানির গ্রস প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৬ হাজার ৩৫৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৫ হাজার ৭৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় গত বছর জীবন বীমা খাতে গ্রস প্রিমিয়াম বেড়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা। যা ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।
২০১৮ সালে কোম্পানিগুলোর প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৮ কাটি ৭২ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের বছরের তুলনায় গত বছর জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৩৫৯ কোটি টাকা। যা ১.৯৩ শতাংশ।
বীমা খাতের এ চিত্রকে হতাশাজনক হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরাও। তাদের মতে, ব্যবসায়িকভাবে এগুতে পারছেনা কোম্পানিগুলো। মূলত নি¤œমানের গ্রাহক সেবা, অদক্ষ জনবল এবং কোম্পানির নানা অনিয়মের কারণে কাঙ্খিত সফলতা অর্জন করতে পারছেনা খাতটি।
ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল মো. আবু নাসের বলেন, ২০১৮ সালে বীমা খাতের ব্যবসা হতাশাজনক। তবে এরমধ্যেও কিছু কোম্পানি ভালো করেছে। যদিও তা নজরে পড়ছেনা। আমি মনে করি, আমাদের বীমা পলিসিগুলোতে নতনুত্ব আনা প্রয়োজন। এছাড়া খাতটির প্রসারে নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষকেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আইডিআরএ এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে পপুলার লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৮০৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৫০১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। এদিকে ২০১৮ সালে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৫৫৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এতে নতুন ব্যবসা সংগ্রহের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে কোম্পানিটি।
২০১৮ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাফের গ্রস প্রিমিয়াম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ১ হাজার ১২ কোটি ৩ লাখ টাকা। নতুন ব্যবসা সংগ্রহের দিক থেকে পপুলার লাইফের পরেই রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
গত বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪৮ কোটি ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৩৭৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
আইডিআরএ এর তথ্য অনুযায়ী, নতুন ব্যবসা সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এদিকে, ২০১৮ সালে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৯৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা এর আগের বছর ছিল ৮৭১ কোটি ১১ লাখ টাকা। গত বছর ২৫০ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করেছে ন্যাশানাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় ছিল ২১৭ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৬৬৪ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেঘানা লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ৪৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সন্ধানী লাইফের গ্রস প্রিমিয়মি ১৫৭ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৪৪ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সানলাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ৮৫ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৩৬ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা,প্রাইম লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ৩৭৭ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ১২৮ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, প্রগতি লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ২৫৫ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ১৫৩ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম ৬০ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এদিকে, ২০১৮ সালে প্রগ্রেসিভ লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ৬৮ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা, রুপালী লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম ২১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৮৫ কোটি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম ১০৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৪২ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা যায়, ২০১৮ সালে বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রস প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, হোমল্যান্ড লাইফের গ্রস প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ৪৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশনের গ্রস প্রিমিয়াম আয় ৫১৫ কোটি টাকা ও প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ১০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।