কমিশনের নামে গ্রাহকদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা বন্ধের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: নন-লাইফ বীমাখাতে ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন। একইসাথে মূখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামও অতিরিক্ত কমিশন বন্ধের এ উদ্যোগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। 

কমিশন বন্ধে গত মাসে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের জারি করা ৩টি ব্যাংক একাউন্টে প্রিমিয়াম জমা ও ১টি একাউন্টের মাধ্যমে ব্যয় পরিচালনা করার নির্দেশ জারির (নন-লাইফ-সার্কুলার ৬২-২০১৯) পরই বীমাখাতের শীর্ষ এ দু’টি সংগঠন তা বাস্তবায়নে একাত্মতা ঘোষণা করে।  

তবে অতিরিক্ত কমিশন বন্ধ করে ১৫ শতাংশ কমিশন চালু ও ৬২ নং সার্কুলার বাস্তবায়ন করা হলেই কমিশন বন্ধ হবে বলে মনে করেন না বীমাখাত সংশ্লিষ্ট অনেক মূখ্য নির্বাহী। তাদের মতে, গ্রাহকদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেয়ার প্রবণতা বন্ধ হলে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরবে বীমাখাতে।

মূখ্য নির্বাহীদের সাথে আলাপকালে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে তারা জানান, কমিশন বন্ধের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা নন-লাইফ খাতের অনিয়মন ও দুর্নীতি বন্ধে একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ।  একইসাথে এ খাতের শীর্ষ দু’টি সংগঠনের একাত্মতাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। তবে ৬২ নং সার্কুলার বাস্তবায়নে আরো কিছু পদক্ষেপ এখনই নেয়া হলে তা হবে খুবই কার্যকর। 

এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- কমিশনের নামে গ্রাহককে আর্থিক সুবিধা না দেয়া ও উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে তাদেরকে ‘কমিশন এজেন্ট’-এ রুপান্তর করা এবং অবৈধভাবে গ্রাহকদের যে কমিশন দেয়া হয় তা উন্নয়ন কর্মকর্তাদের দেয়া। তবে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে সব কোম্পানির ঐক্যমতের ভিত্তিতে।  এসব মতামত দেয়া মূখ্য নির্বাহীরা কেউই নাম প্রকাশে রাজি হননি।

ওই মূখ্য নির্বাহীরা আরো জানান, এর আগেও ২০১২ সালে অতিরিক্ত কমিশন দেয়া বন্ধ করা হয়েছিল।  চালু করা হয়েছিল ১৫ শতাংশ কমিশন। কিন্তু তা তেমন একটা কার্যকর হয়নি। কিছুদিন পরেই আবার অতিরিক্ত কমিশন দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত কমিশন প্রতি বছরেই বাড়তে বাড়তে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতির জন্য কমিশনের নামে গ্রাহকদেরকে অবৈধ আর্থিক সুবিধাকেই দায়ী করেন তারা। 

তাদের মতে, গ্রাহককে দেয়া হতো ১৫ শতাংশ কমিশন।  এ কমিশনও দেয়া হয় ডামি এজেন্ট তৈরি করে। অর্থাৎ ডামি এজেন্টদের ব্যাংক একাউন্টে কমিশনের টাকা পরিশোধ দেখিয়ে সেই একাউন্ট থেকে টাকা তুলে তা নগদে দেয়া হয় গ্রাহকদের।  যা বীমা আইন ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন। কেননা কমিশনের টাকা এজেন্ট ছাড়া অন্য কাউকে দেয়া বেআইনি।

এসব ডামি এজেন্ট করা হয় উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠজনদের।

অন্যদিকে উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন নির্ধারণ করা হয় প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশ। এই হিসেবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের অন্যান্য খরচ বাদ দিয়েই একটি কোম্পানির ‍শুধু ব্যবসা সংগ্রহেই ব্যয় হয় ৩০ শতাংশ।

তাদের মতে, এখনো আগের নিয়মের যদি শুধু ১৫ শতাংশ দেয়ার সিদ্ধান্তের মধ্যেই এ উদ্যোগ থেকে যায় এবং কমিশনের নামে গ্রাহকদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেয়া বন্ধ না হয় তাহলে বীমাখাতের সাম্প্রতিক এ উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে না।

আলাপকালে তারা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’কে বলেন, কমিশনের নামে গ্রাহকদের অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেয়া বন্ধ করার পাশপাশি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের এজেন্টে পরিণত করে কমিশনের টাকা দেয়া হলে এখাতে দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব হবে। একইসাথে প্রিমিয়াম আয় বাড়বে। জিডিপিতে বীমাখাতে অবদান ২ থেকে আড়াই শতাংশ হবে।