করোনায় স্থবির বীমাখাত, বন্ধ হচ্ছে সব অফিস

আবদুর রহমান আবির: করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো ব্যবসা। আমদানী-রপ্তানী কমে যাওয়ায় বন্ধের পথে নৌ-বীমা ব্যবসা। নেই ওভারসিস মেডিক্লেইম ব্যবসাও। থমকে গেছে অগ্নি ও মটর বীমার নতুন পলিসি ইস্যু। অন্যদিকে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যক্তিগত বীমা পলিসি বিক্রিও বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে সীমিত আকারে চলছে গ্রুপ বীমা ব্যবসা। সরকারি ছুটি শুরু হলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বীমাখাতে।

এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ করে দেয়া হবে দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির অফিস। আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এসব অফিসের কার্যক্রম। তবে গ্রাহক সেবা অব্যাহত রাখতে ই-নথি ও অনলাইনের অন্যান্য মাধ্যমে বীমা দাবি এবং স্বাস্থ্য বীমার মতো জরুরি কার্যক্রম চালু রাখতে হবে । বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, সরকারি নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের। তাই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বীমা কোম্পানিগুলোর সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হবে। আগামীকাল এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে বীমা কোম্পানিগুলোকে। তবে বিপদের এই মুহুর্তে গ্রাহক সেবা আমাদের অক্ষুন্ন রাখতে হবে। এ জন্য ই-নথি ও অনলাইনের অন্যান্য মাধ্যমে জরুরি কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বীমা কোম্পানিগুলোর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এরইমধ্যে বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির অফিসে রোটেশনের ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। বাড়ি থেকে যাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে তাদেরকে অফিসে না আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাঁচি-কাশি ও স্বর্দি-জ্বর নিয়েও অফিসে আসতে বারণ করা হয়েছে। অফিসগুলোতে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

গার্ডিয়ান লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মনিরুল আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের এই মহামারি পরিস্থিতে সরকার সব ধরণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে বীমা যেহেতু মানুষের বিপদের সময় পাশে দাঁড়ায় সেহেতু এই সময়ে আমাদের সব সেবা বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আমাদের গ্রাহকদের জরুরি সেবা দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের বিশেষ নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। সেই নির্দেশনা অনুসারে আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এম এম মনিরুল আলম বলেন, লাইফ বীমার স্বাভাবিক সেবার পাশাপাশি এই মুহুর্তে আমাদের হেলথ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের সেবাটা বেশি জরুরি। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সীমিত আকারে অফিস খোলা রাখা প্রয়োজন। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা অনলাইন মাধ্যমকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, করোনা আতংকে ব্যক্তিগত বীমা পলিসির ব্যবসা প্রায় বন্ধ। তবে করপোরেট পলিসিগুলো থেকে এখনো ভালো ব্যবসা আসছে।

সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. শফিক শামিম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমদানী-রপ্তানী প্রায় বন্ধ। ব্যাংকগুলোতে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হচ্ছে না। এমনকি আগের খোলা এলসি’ও অনেক বাতিল করা হচ্ছে। ফলে নৌ-বীমা ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধ। ওভারসিস মেডিক্লেইম ব্যবসার অবস্থাও একই। তবে সীমিত আকারে অগ্নি বীমার ব্যবসা চলছে।

মো. শফিক শামিম আরো বলেন, করোনা প্রতিরোধে এরইমধ্যে আমরা অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা কমিয়ে এনেছি। গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের রোটেশনের ভিত্তিতে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও আমাদের একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি হজ করে দেশে ফিরে আসায় তাকে আমরা হোম কোয়ারেন্টে পাঠিয়েছি। কর্মকর্তাদের স্বর্দি-জ্বর নিয়ে অফিসে আসতে বারণ করেছি। বাসা থেকে ফোন দিলেই তার ছুটি মঞ্জুর করা হচ্ছে। একইসঙ্গে অফিসে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইসলামী কমাশিয়াল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাস মানুষ এবং যন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। মানুষ তার স্বাভাবিক কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারছে না। নিজের বাড়ি বা অন্যত্র কোয়ারেন্টিনে আছেন। নিশ্চল নিথর হয়ে বসে আছে কল-কারখানার যন্ত্রপাতি। পৃথিবীর কর্মযজ্ঞ থেমে গেছে। থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। আমরা যারা নন-লাইফ বীমা শিল্পে কর্মরত আছি তাদের জন্য বড় দুঃসংবাদ হলো আমদানী-রপ্তানী প্রায় বন্ধ। তাই থমকে গেছে আমাদের বীমা ব্যবসা।

তিনি বলেন, ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কাজের গতি বদলিয়েছে। কোন কোন ব্যাংক বাড়ি থেকেই কাজ করতে বলেছে। আবার কোন কোন ব্যাংক শিফটিং এর মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বীমা শিল্পে কর্মরতরা ঝুঁকির মধ্যে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কাজের জন্য বিভিন্ন কল-কারখানা, অফিস, ব্যাংকে যাতায়াত করতে হয় যা জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদেরও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা দরকার।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের বীমা ব্যবসা থমকে গেছে। বীমা পলিসি বিক্রি করতে যেতে হয় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে, যেটা এই মুহুর্তে সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশ হচ্ছে সব অফিস বন্ধ রাখার। কিন্তু বিপদসঙ্কুল এই সময়ে আমাদের গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দেয়াটা আমাদের জন্য জরুরি। এখন আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। তাদের নির্দেশনা পেলে সে আলোকেই আমরা আমাদের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো।

এস এম নুরুজ্জামান আরো বলেন, দেশের অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব কতটা পড়বে এবং সেটা কাটিয়ে উঠতে আমাদের কতদিন লাগবে তা এই মুহুর্তে বোঝা যাচ্ছে না। বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর এই ধাক্কা বড় আকারেই আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারপরও আমরা আশাবাদি যে, খুব শিগগিরই এই অবস্থার অবসান ঘটবে। আবারো আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।