বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার

আবদুর রহমান আবির: এসএসসি পাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং নিয়োগ-পূর্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিধান রেখে বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রবিধানমালা-২০২০ চূড়ান্ত করেছে সরকার। গতকাল বুধবার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র ওয়েবসাইটে প্রবিধানমালাটি প্রকাশ করা হয়েছে। অবিলম্বে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ এবং কার্যকর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রবিধানমালায় নতুন আবেদনকারীর যোগ্যতায় বলা হয়েছে, বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে এবং এর প্রমাণ হিসেবে তাকে দাখিল করতে হবে এসএসসি সার্টিফিকেট বা জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে, কোনো স্বীকৃত বোর্ডের অধীন মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। একইসঙ্গে তাকে নিয়োগ পূর্ব-পরীক্ষাতেও পাস করতে হবে।

অব্যাহতি প্রাপ্ত এজেন্টের যোগ্যতায় বলা হয়েছে, আবেদনকারী অন্যকোন বীমাকারী বা ব্রোকারের নিকট অব্যাহতি প্রদান করলে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন, সংশ্লিষ্ট বীমাকারী বা ব্রোকারের ছাড়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে আগের কর্মস্থলে আহরিত সকল পলিসি সম্পর্কে প্রত্যয়নপত্র এবং পলিসি সমূহের ভবিষ্যৎ সেবা সম্পর্কে এজেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত নিশ্চয়তাপত্র দাখিল করতে হবে।

এ ছাড়াও আবেদনকারীকে অন্যকোন বীমাকারী বা ব্রোকারের সাথে কর্মকালে সকল লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছে বলে উক্ত বীমাকারী বা ব্রোকারের প্রত্যয়নপত্র এবং আবেদনকারীর নামে কর্তৃপক্ষ থেকে ইস্যুকতৃ লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে। একইসঙ্গে আবেদনকারী অন্যকোন বীমাকারী বা ব্রোকারের অধীনে কাজ করেন না এবং তিনি বহিষ্কৃত বা বাতিলকৃত এজেন্টর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নন মর্মে মনোনীত কর্মকর্তাকে সন্তুষ্ট হতে হবে।

প্রবিধানমালা অনুসারে, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টের জন্য একটি বীমা এজেন্ট ‘কোড নং’ ইস্যু করবে মনোনীতক কর্মকর্তা। যাতে আগে থেকেই বীমাকারী বা ব্রোকারের নামের সংযোজন সংযুক্ত করবে এবং অন্য বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃক অব্যাহতি প্রাপ্ত এজেন্টের ক্ষেত্রে পূর্বের কোড নম্বর বহাল রেখে তার সাথে বীমাকারী বা ব্রোকারের কোডের সমন্বয়ে নতুন কোড ইস্যু করবে। এরফলে এজেন্টদের কর্মদক্ষতার হিসাব ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ হবে।

মনোনীতক কর্মকর্তা নিয়োগ প্রাপ্ত এজেন্টের সনাক্তকরণের জন্য একটি ‘আইডেনটিটি কার্ড (পরিচয়পত্র)’ ইস্যু করবে যেখানে বীমাকারী বা ব্রোকারের নামের মনোগ্রাম বা লোগো সংযুক্ত থাকবে। উক্ত কার্ডে এজেন্টের কোড নং থাকতে হবে। কোড নম্বরটি এজেন্টের সর্বত্র পরিচয় বহন করবে।

এ ছাড়াও মনোনীতক কর্মকর্তা নিয়োগ প্রাপ্ত ও নিবন্ধীকৃত বীমা এজেন্ট সংক্রান্ত তথ্য হার্ডকপির পাশাপাশি অনলাইনে কম্পিউটারে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সংরক্ষণ ও হালনাগাদ করবেন। যাতে করে প্রয়োজনে যে কোন সময় কর্তৃপক্ষ অনলাইন থেকে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

এজেন্ট লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং নবায়নের জন্য লাইফ ও নন-লাইফের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। লাইফ বীমার স্থায়ী এজেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে বীমাকারীর মাধ্যমে ১ বছর সময় শেষ হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে বাধ্যতামূলক ৭২ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ ও বীমাকারী কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র।

আবেদনকারীকে ১ বছরে কমপক্ষে ১১টি নতুন পলিসি সংগ্রহ করতে হবে। অথবা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহের বিপরীতে ২০ হাজার টাকা কমিশন আয় করতে হবে। এক্ষেত্রে বীমাকারীকে কমিশনের ওপর উৎস স্থলে কর কর্তনের সনদ দাখিল করতে হবে। একইসঙ্গে আবেদনকারীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে বীমাকারীর কোন অভিযোগ নেই মর্মে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করতে হবে।

এ ছাড়াও এজেন্ট লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণের ৩০ দিন পূর্বে নবায়ন ফিসহ বীমাকারীর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ১ম বর্ষ প্রিমিয়ামের দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়ামের সংরক্ষণের হার নূন্যতম ৬০ শতাংশ থাকতে হবে এবং প্রতি ২ বছর অন্তর ৩৬ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে নন-লাইফ বীমার এজেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ৭২ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃক ১ বছরের জন্য নিয়োগ ও নিবন্ধিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের নিকট লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

স্থায়ী এজেন্ট হতে হলে অস্থায়ী এজেন্ট হিসেবে কাজ করা অবস্থায় কমপক্ষে এক লাখ টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করতে হতে। এক্ষেত্রে বীমাকারী কর্তৃক উক্ত সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ওপর প্রদত্ত কমিশনের ওপর উৎস স্থলে কর কর্তনের সনদপত্র দাখিল করতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগেই নবায়নের আবেদন করতে হবে এবং প্রতি ২ বছর অন্তর ৩৬ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ জমা দিতে হবে।

তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রকৃতিস্থ, আদালতে দোষী সাব্যস্ত, বীমা পলিসি সংক্রান্ত কোন বিচারিক প্রক্রিয়ায় বা বীমা কোম্পানির অবসায়নে বা কোন কার্যের তদন্তকালে দোষী হলে, বীমাকারী বা বীমা গ্রহীতার স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং এই প্রবিধানে বর্ণিত আচরণবিধির লঙ্ঘনকারী বীমা এজেন্ট হতে পারবেন না।

এছাড়াও কোন লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা অফিস কর্মকর্তা বা কর্মচারী, একই বীমা শ্রেণীর এজেন্ট না হলে এবং নন-লাইফ এজেন্টের ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা তাদের পরিবারের কোন সদস্যও বীমা এজেন্ট হতে পারবেন না।

প্রবিধি ৭ এ বীমা এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নে পরিশোধযোগ্য ফি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বীমা এজেন্টের লাইসেন্সের জন্য ১ হাজার টাকা, লাইসেন্স নবায়নে ১ হাজার ৫শ' টাকা, প্রত্যেক ৩ মাসের মধ্যে বিলম্বের জন্য ১শ' টাকা ও তদুর্ধ্ব মাসের জন্য ৬শ' টাকা এবং প্রতিলিপি লাইসেন্সের জন্য ১শ' টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব ফি কর্তৃপক্ষ ফান্ড এর অনুকূলে ব্যাংক ড্রাফট বা পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রবিধানমালা-২০২০ এর প্রবিধি ১০ এ বলা হয়েছে, নিয়োগ ও নিবন্ধন প্রদানের পূর্বে বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি অথবা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত পরীক্ষায় পাস করতে হবে। উক্ত পরীক্ষার সকল কারিকুলাম অবশ্যই আইডিআরএ'র পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

এ ছাড়াও বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃক নিয়োগ ও নিবন্ধীকরণে পদ্ধতি, লাইসেন্সের জন্য আবেদনের পদ্ধতি, তদন্ত বা পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগকৃত তদন্তকারী কর্মকর্তা, বীমা এজেন্টের আচরণবিধি, নিয়োগ বাতিল, লাইসেন্স প্রতিলিপি সনদ প্রদান, বীমা এজেন্ট রেজিস্ট্রার, বীমা এজেন্টের বীমাকারী পরিবর্তন, বীমা এজেন্টের অবসর গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান তৈরি করা হয়েছে।