লাইফ বীমার অর্ধেক প্রিমিয়ামই সংগ্রহ করেছে ৩ কোম্পানি

তাফহিমুল ইসলাম: দেশের লাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়ামের ৫০.১৭ শতাংশই সংগ্রহ করেছে ৩টি কোম্পানি। বাকি ৪৯.৮৩ শতাংশ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৩২টি কোম্পানি। 

অর্ধেকেরও বেশি প্রিমিয়াম সংগ্রহকারী ৩টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন মেটলাইফের ২৮.৯৮ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফের ১৩.৩৫ শতাংশ এবং ডেল্টা লাইফের ৭.৫৪ শতাংশ। ২০২১ সালের ব্যবসা সমাপনীর সাময়িক হিসাব পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে। 

বীমা বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে সরকারি বেসরকারি মিলে লাইফ বীমা খাতে মোট ৩৫টি কোম্পানি রয়েছে। তবে দক্ষ জনবল, যুগোপযোগী বীমা পণ্য ও পেশাদারিত্বের অভাব, বীমা বিষয়ে সাধারণ মানুষের অনাগ্রহ, বীমা দাবি পরিশোধ না করার অভিযোগ, অনিয়ম-দুর্নীতি, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ থাকায় অধিকাংশ কোম্পানি ভাল ব্যবসা করতে পারছে না। ফলে গ্রাহক সেবায় সুনাম আছে এমন কোম্পানিগুলোই বেশিরভাগ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করছে। 

তথ্য মতে, লাইফ বীমা খাতে ২০২১ সালে কোম্পানিগুলো মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১০ হাজার ২৮২ কোটি ১১ লাখ টাকা। তবে ৩৫টি লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে ২১টি কোম্পানি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১০০ কোটির নিচে। তার মধ্যে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহ রয়েছে মেটলাইফ। যা শতকরা হিসাবে এক-চতুর্থাংশের বেশি বা ২৮.৯৮ শতাংশ।

মেটলাইফ ২০২১ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৪৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ২ হাজার ৪৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ২০২১ সালে বীমা খাতে মোট ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহের ১৪.১২ শতাংশ এবং নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহের ৩৫.৩৭ শতাংশ মেটলাইফের।

মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহে দ্বিতীয় ও দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানের রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ২০২১ সালে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ১ হাজার ৩শ’ ৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যা লাইফ বীমা খাতের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহের ১৩.৬৫ শতাংশ।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২১ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৪০৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৯৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০২১ সালে লাইফ বীমা খাতের সংগৃহীত মোট ১ম বর্ষ প্রিমিয়ামের ১২.৪০ শতাংশ এবং নবায়ন সংগ্রহের ১৩.৯৬ শতাংশ ন্যাশনাল লাইফের।  

মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহের ৭.৫৪ শতাংশ ডেল্টা লাইফের। ২০২১ সালে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৭শ’ ৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ম বর্ষ ২৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং নবায়ন প্রিমিয়াম ৫২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালে লাইফ খাতের মোট ১ম বর্ষ প্রিমিয়ামের ৭.১৩ শতাংশ এবং মোট নাবায়ন প্রিমিয়ামের ৭.৫৭ শতাংশ ডেল্টা লাইফের।

২০২১ সালে লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৪৫.২৩ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে মেটলাইফের। কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬শ’ ৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ১২.৭৫ শতাংশ নিয়ে বিনিয়োগের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ। কোম্পানিটির মোটি বিনিয়োগ রয়েছে ৪ হাজার ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফের বিনিয়োগ রয়েছে ৩ হাজার ৭শ’ ৮০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যা মোট বিনিয়োগের ১০ শতাংশ। এই তিন কোম্পানির বিনিয়োগ মোট বিনিয়োগের প্রায় ৬৮ শতাংশ। বাকি ৩২ লাইফ বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ অবশিষ্ট ৩২ শতাংশ।

ন্যাশনাল লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন বলেন, একটি বীমা কোম্পানি প্রথম ১০-১২ বৎসর শুধু গ্রাহক থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে থাকে, উক্ত সময়ে গ্রাহককে প্রিমিয়াম ফেরত প্রদান করতে হয় না, ফলে কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের টাকার বড় অংশই কমিশন এবং ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসেবে খরচ করে ফেলে। মেয়াদ শেষে উক্ত কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা, পলিসি বোনাস সহ ফেরৎ প্রদান করতে হিমশিম খায়। সেকারণে বীমা গ্রাহকগণ চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানিগুলোর সম্পর্কে আস্থা রাখতে পারছে না। এছাড়া তৃতীয় প্রজন্মের কিছু কিছু কোম্পানি গ্রাহকদের পাওনাদি সময়মত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাদের পলিসি বোনাস আশানুরূপ নয়। এসব কারণে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানিগুলো আশানুরুপ ব্যবসা অর্জন করতে পারছে না।

কেন অর্ধেক আয় থেকে যাচ্ছে শীর্ষ দুই-চার কোম্পানির হাতে- এই বিষয়ে আস্থা লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী শামসুল ইসলাম কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসার গতানুগতিক যে ধারা সে ধারায় কোম্পানিগুলো ব্যবসা করে যাচ্ছে। নতুন কিছু যুক্ত করছে না। এতে করে সব কোম্পানি সেই ভালো ব্যবসা করতে পারছে না।