৯৬ ভাউচারের ৩৫টিই তৈরি জরিপ প্রতিবেদনের পরে  

মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু: খুলনা জুট টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষের ভয়াবহ ভাউচার জালিয়াতি করে বীমা দাবি দ্বিগুণ করার ঘটনার দেশের বীমাখাতের ইতিহাসের আলোচিত-সমালোচিত ও বির্তকিত ঘটনাগুলোর মধ্যে শীর্ষে। যা ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে তুলে ধরা হয়েছে। অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মিলেছে আরও বিস্ময়কর জালিয়াতির তথ্য।

প্রথম জরিপকারীদের জানুয়ারির মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা জরিপ শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ৩০ মার্চ ২০১৭। জরিপকালীন ৬/৭ মাসের মধ্যে প্রাপ্ত বিল-ভাউচারগুলোই খতিয়ে দেখা জরিপকারীদের এখতিয়ার। ফলে জরিপ শেষে ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখের পর কোন কিছুই জরিপকারীদের দেখবার কথা নয়, সুযোগও নেই। ফলে পরে দেয়া ভাউচারগুলোর দায়দায়িত্বও তাদের ওপর বর্তায় না।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র শুনানীতে বীমাগ্রহীতা ও দ্বিতীয় জরিপকারীরা অভিযোগ করেন যে, “প্রথম জরিপকারীরা ৯৬টি ভাউচার বাদ দিয়েই প্রতিবেদন দাখিল করায় ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি কম দেখিয়েছে।” ন্যূনতম খোঁজ খবর না নিয়েই তা ধ্রুব সত্য বলে মনে নেয় আইডিআরএ।

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধান বলছে,  দ্বিতীয় জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখিত ‘কথিত’ ৯৬টি ভাউচারের ৩৫টির তারিখ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরে। যা বুঝতে কাউকে বীমা বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই, একজন সাধারণ বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সাদা চোখে ধরে পড়ে। তাহলে কেন তা ধরতে পারল না দ্বিতীয় জরিপকারীরা?

অভিযোগ আছে, বীমা দাবির টাকা বাড়িয়ে ভাগাভাগি করতেই জুট টেক্সটাইল মিল এবং দ্বিতীয় জরিপকারীদ্বয় ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভে এসোসিয়েটস লিমিটেডে ও মিডল্যান্ড সার্ভে এন্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এসব ভূয়া বিল ভাউচার তৈরী করে।

জন্মের আগেই মৃত্যুতে বিশ্বাসী দ্বিতীয় জরিপকারী?

মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। আর মৃত্যু তখনই হবে, যদি জন্ম হয়। জন্ম আগে, মৃত্যু পরে। প্রকৃতির চিরায়িত নিয়মের তোয়াক্কা করে না খুলনার জুট টেক্সটাইল মিল ও দ্বিতীয় জরিপকারীদ্বয় ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভে এসোসিয়েটস লিমিটেডে ও মিডল্যান্ড সার্ভে এন্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি। মৃত্যু আগে, জন্ম পরে এই নীতিতেই চলছে উল্লেখিত তিনটি প্রতিষ্ঠান। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরণের ঘটনার প্রথম জন্ম দিয়ে দেশের বীমাখাতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে তারা। ধান বানতে শিবের গীত নয়, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বীমা দাবির টাকা দ্বিগুণ করে হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে ।

অপরাধের সাথে প্রমাণ রেখে যায় অপরাধীরা:

তড়িঘড়ি করে চুরি ডাকাতি কিংবা হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি অপরাধের সাথে কিছু না কিছু সূত্র রেখে যায় অপরাধীরা। আর সেই সূত্র বা ক্লু ধরেই তদন্ত এগিয়ে নেয় গোয়েন্দাসহ আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  খুঁজতে খুঁজতে মূল অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয় । ফলে ছোট্ট একটি তথ্য বা সূত্রই কাল হয়ে ওঠায় উম্মোচিত হয় বড় বড় আর্থিক কেলেংকারিসহ অপরাধের ঘটনা। বীমা দাবির বাড়তি প্রায় ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে জুট টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ ও তাদের সহযোগি দ্বিতীয় জরিপকারীরাও রেখে গেছে অনেকগুলো অপরাধের প্রমাণ। তাড়াহুড়া ভাউচারগুলো তৈরী করতে গিয়ে তারিখ ও মাসের হিসেবে গণ্ডগোল পাকিয়েছে- জালিয়াতির প্রমাণ রেখে গেছে অসংখ্য। জরিপ প্রতিবেদন দাখিলের ৭/৮মাস পরেরও ভাউচার দেখিয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে। যেমন;

জন্মের আগেই মৃত্যু ১: জুট মিলে অগ্নিকাণ্ডের আগেই বন্ধ হওয়া ঢাকাস্থ শফিক এন্টারপ্রাইজের নামে দেখানো বিলগুলো যে ভূয়া তা প্রথম পর্বের প্রতিবেদনে তুলে ধরে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। এতে ক্ষ্যান্ত না দিয়ে প্রতিটি বিলের চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে মিললো আরও বিস্ময়কর তথ্য। মেশিনারিজ মেরামতবাবদ কথিত ৯৬টি বিলের মধ্যে শফিক এন্টারপ্রাইজের নামে ৮টি ভাউচারে মোট ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিল দেখায় বীমাগ্রহীতা জুট মিল কর্তৃপক্ষ।

যার মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার ৪টি ভাউচারই প্রথম জরিপকারীদের জরিপ শেষে ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরের তারিখে ইস্যু করা। প্রথম জরিপকারীদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৭। অথচ ২৭/০৬/২০১৭ তারিখে ৪১ লাখ টাকার, ২২/০৫/২০১৭ তারিখে ১৩ লাখ টাকার,  ৯/০৪/২০১৭ এ প্রায় ৩৭ লাখ টাকার এবং ১৩২/২/২০১৭ তারিখে ৭০ লাখ টাকার ভাউচার দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় জরিপকারীদের প্রতিবেদনে। জরিপ চলাকালে যে ভাউচারের জন্মই হয়নি, তা কিভাবে আমলে নেয়া সম্ভব প্রথম জরিপকারীর? কোনো সুস্থ মস্তিকের পক্ষে এমন অনিয়ম কী মেনে নেয়া সম্ভব, না উচিৎ?

জন্মের আগেই মৃত্যু ২: বিতর্কিত ৯৬টি ভাউচারের মধ্যে ঢাকার অস্তিত্বহীন চিন্ময় এন্টারপ্রাইজের নামে দুটি ভাউচারে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বিল রয়েছে। এরমধ্যে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকার ভাউচারটি ইস্যুর তারিখ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের প্রায় একমাস পর অর্থাৎ ২৭/৪/২০১৭। তারিখের এই হেরফের বোঝার মতো এতটুকু কাণ্ডজ্ঞানও কি নেই দ্বিতীয় জরিপকারীদের? নিশ্চয় নেই, থাকলে তাদের প্রতিবেদনে ভূয়া বিল ভাউচার তুলে ধরার কথা না। তবে কি, বীমাগ্রহীতার সাথে গাটছাড়া বেঁধেই এই জালিয়াতি করেছে দ্বিতীয় জরিপকারীরা? বীমা আইনের কোনো ধারা বলে প্রতিবেদন দাখিলের এক মাস পরের বিল প্রথম জরিপদের আওতাভূক্ত হয় তা আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশতো বটেই, বীমার ইতিহাসে পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনার নজির নেই।

জন্মের আগেই মৃত্যু ৩: দু’একদিন পরে নয়, প্রথম জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার ৭ মাস পরের বিলও রয়েছে কথিত ৯৬ বিলের মধ্যে। ২৯/১০/২০১৭ তারিখে সাব্বির এন্টারপ্রাইজের নামে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকার ভাউচার দেখিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, তিন মাস পরে অর্থাৎ ২১/৬/২০১৭ তারিখে আছে ৫ লাখ টাকার আরও একটি ভাউচার। সবমিলিয়ে সাব্বির এন্টারপ্রাইজের নামে ২৮ লাখ টাকার চারটি বিলের তিনটিই দেয়া হয়েছে জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার পর। বীমা আইনের এমন অবৈধ কাজের বৈধতা দেয়া আছে বলে আমাদের জানা নেই।

জন্মের আগেই মৃত্যু ৪: প্রথম জরিপকারীদের প্রতিবেদন দাখিলের চার মাস পর অর্থাৎ ৩০/৭/২০১৭ তারিখে গ্লোরী ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪৩ লাখ টাকার বিল রয়েছে কথিত ৯৬ বিলে। একইভাবে ২৩/৪/২০১৭ তে ইস্যু করা হয় ৫২ লাখ টাকার আরেও একটি ভাউচার। গ্লোরী ইঞ্জিনিয়ারিং চারটি বিলের মধ্যে প্রায় কোটি টাকার দু’টি ভাউচারের জন্ম প্রথম জরিপকারীদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার কয়েক মাস পর। এসব যে কাগুজে ভাউচার তা বুঝতে আর  কি কিছু বাকী থাকে?

জন্মের আগেই মৃত্যু ৫: দীপু ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ১০টি বিলের মধ্যে ৫ টির তারিখ জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার পরের তারিখে। এরমধ্যে ২৮/৮/২০১৭ তারিখে ২৪ লাখ টাকার, ৩/৭/২০১৭ তারিখে সাড়ে ১৯ লাখ টাকার, ১৫/৫/২০১৭ তা প্রায় ৬ লাখ টাকার, ১৯/৪/২০১৭ তারিখে দেড় লাখ টাকার এবং ২৮ মার্চ ২০১৩ তারিখে প্রায় ১৬ লাখ টাকার বিল রয়েছে।

খুলনার দীপু ইঞ্জিনিয়ারিং সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় মাত্র বর্তমান তিনটি মেশিনের কাজ করছে জনা পাঁচেক শ্রমিক। বছর দুয়েক আগে পল্লীমঙ্গল সড়কে ডলফিন ভিডিও’র সামনে দীপু ইঞ্জিনিয়ারিং লেদ কারখানায় মাত্র দুটি মেশিন ছিল। ছোট্ট এই লেদ কারখানায় এত টাকার কাজের সুযোগ নেই বলে জানায় লেদ শ্রমিকসহ প্রতিবেশি দোকানীরা।

জন্মের আগেই মৃত্যু ৬: খুলনার আয়নাল ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কাস নামের প্রায় ১২ লাখ টাকার ভাউচারের তারিখ ২০/৯/২০১৭। আর প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ ৩০/৩/২০১৭।  ৬ মাসে পরের ভাউচারের মতো আড়াই মাস পরে ১৪ লাখ টাকার আরও একটি ভাউচার রয়েছে। আয়নাল ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্কাসের ৪৬ লাখ টাকার বিল ৫টি ভাউচারের মধ্যে ২৬ লাখ টাকার ভাউচারই জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার পরে। এখানেই শেষ নয় জরিপ কাজ শেষের পরের তারিখে দেখানো হয়েছে আরও একটি ভাউচার।

জন্মের আগেই মৃত্যু ৭ থেকে ১৪: প্রথম জরিপকারীদের প্রতিবেদন দাখিলের পাঁচ মাস পর ২৩/৮/২০১৭ তারিখে রনি ইঞ্জিনিয়ারিং এর নামে দেয়া হয় ২৫ লাখ টাকার বিল। এছাড়াও ১২/৬/২০১৭তে ৭ লাখ টাকার, ৫/৪/২০১৭ তে পৌনে ৫ লাখ টাকার এবং ২৮/৩/২০১৭ তের দেয়া হয় পৌনে ১০ লাখ টাকার ভাউচার। অর্থাৎ রনি ইঞ্জিনিয়ারিং এর নামে দেখানো ৬টি বিলের মধ্যে ৩টিই জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার পর একটি প্রতিবেদন জমার মাত্র একদিন আগের। এরপরও কি এসব বিল ভাউচার প্রথম জরিপকারীরা হিসাবে নেয়নি বলে অভিযোগ করে বীমাগ্রহীতা ও দ্বিতীয় জরিপকারীরা? 

পাঠকের ধৈর্য্যচ্যূতি না ঘটাতে সংক্ষেপে এখানে তুলে ধরা হলো। ঢাকার হাজী এন্টারপ্রাইজের নামে দেখানো ৯৬ লাখ টাকার চারটি বিলের মধ্যে একটির তারিখ ২৭/৫/২০১৭। ৪৭ লাখ টাকার এই ভাউচারটি চূড়ান্ত জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার দুই মাস পর। আর সাড়ে ২৬ লাখ টাকার একটি বিল দেয়া হয় ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনের পর ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগ দিয়ে অর্থাৎ ১৫/২/২০১৭।

এসএস ইন্টারন্যাশনালের নামে দু’টি ভাউচারের একটির তারিখ ৪/৫/২০১৭। প্রথম জরিপকারীদের প্রতিবেদন ৩০ মার্চ ২০১৭ দাখিলের পরে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার ভাউচারটি তাদের হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করার কথা কী?

মোল্লা টিম্বারের নামে দেয়া দু’টি বিলের একটির তারিখ ২১/৪/২০১৭। ১৬ লাখ টাকার দু’টি বিলের মধ্যে ৭ লাখ ৩১ হাজার টাকার ভাউচারটি নথিভুক্ত করার সময় চোখে পড়েনি দ্বিতীয় জরিপকারীদের। নাকি জেনে বুঝেই প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করেছে?

মা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ৬টি বিলের মধ্যে ২টির তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৭ তারিখের পর। এর মধ্যে একটি দেয়া হয় জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার ৫ মাস পর ২৩/৮/২০১৭। পৌনে ১০ লাখ টাকার ওই ভাউচার ছাড়াও আরেকটির তারিখ ৯/৪/২০১৭। আর প্রতিবেদন দাখিলের আগ দিয়ে ৯/৩/২০১৭ তারিখে দেয়া হয় আরও একটি ভাউচার।

খুরশিদ ইলেকট্রিক হাউজের ১২টি বিলের মধ্যেই ৪টি প্রথম জরিপ প্রতিবেদন দেয়ার পরের তারিখে ইস্যু করা।  এরমধ্যে একটির দেয়া হয় চার মাস পরে অর্থাৎ ১১/৭/২০১৭ তারিখে।  ৫/৬/২০১৭, ১৭/৫/২০১৭, ২৪/৪/২০১৭ তারিখের ৩টি ছাড়াও প্রতিবেদন দাখিলের কয়েকদিন আগে ৮ লাখ টাকার আরও একটি বিল-ভাউচার দেখানো হয়েছে দ্বিতীয় জরিপকারীদের প্রতিবেদনে।

ঢাকা মিল এন্ড মেশিনারিজ স্টোরের নামে দেখানো হয়েছে ৭ বিল। এরমধ্যে ১৪/৬/২০১৭ এবং ২৩/৪/২০১৭ তারিখে ২৮ লাখ টাকার দু’টি ভাউচার রয়েছে। আর জরিপ প্রতিবেদন লেখার আগ দিয়ে ১৫/৩/২০১৭ তারিখে ১৬ লাখ টাকার আরও একটি ভাউচার রয়েছে।

খুলনা দিঘলীর কলেজ রোডে ছোট দোকান এ আর ফাংশনের নামে ৬টি বিলের মধ্যে দুটি দেয়া হয়েছে ১৩ এপ্রিল ২০১৭ এবং ৩০ মার্চ ২০১৭। নির্ধারতি সময়ের পরে দেয়া সাড়ে ১৩ লাখ টাকার বিল-ভাউচারও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দ্বিতীয় জরিপকারীদ্বয় ইঞ্জিনিয়ার্স সার্ভে এসোসিয়েটস লিমিটেডে ও মিডল্যান্ড সার্ভে এন্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি। ন্যূনতম জবাবদিহীতা থাকলে উপরের ৩৫টি ভাউচার যে গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা বীমাগ্রহীতা জুট মিল কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিৎ ছিল না কী?

ভাগবাটোয়ার স্বার্থে কি গোপন সমঝোতা?

প্রথম জরিপকারীরা বলছে, বীমাগ্রহীতা কর্তৃক সরবরাহকৃত সব বিল ভাউচার হিসাব-নিকাষ করেই তারা ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় জরিপকারীদ্বয়ের অভিযোগ, ৯৬টি ভাউচার হিসাবে না নিয়েই প্রতিবেদন দাখিল করেছে আগের জরিপকারীরা। তাদের সুরে বীমাগ্রহীতার অভিযোগ, ‘প্রথম জরিপকারীরা এসব ভাউচার সম্পর্কে জানতে চায়নি এবং না নিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছে।’ প্রশ্ন হলো, আদৌও কী প্রথম জরিপকারীদের এসব বিল ভাউচার দিয়েছিল বীমাগৃহীতা? নিশ্চয় না, কারণ ৯৬টির মধ্যে ৩৫টি বিল ভাউচার তখন জন্মায়নি। আর যার জন্ম হয়নি তা কী কেউ হিসাবে যুক্ত করতে পারে? ধরা যাক, বাকী ৪১টি ভাউচার ছিল বীমাগ্রহীতার কাছে। তাহলে কেন তা জরিপের সময় দেখায়নি জুট টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষ? কারখানার মেশিন পত্র মেরামতের কোটি কোটি টাকার ভাউচার প্রদর্শন না করে লুকিয়ে রাখার মতো বোকা নিশ্চয় নয় বীমাগ্রহীতা?

ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র অনুসন্ধান বলছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার শুনানীতে জালিয়াতির প্রতিটি ভাউচারই সঠিক বলে প্রত্যায়ন করেছে দ্বিতীয় জরিপকারীরা। এতে ৩টি অপরাধ করেছে দ্বিতীয় জরিপকারীরা; প্রথমত অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে জাল ভাউচার তৈরীতে সহায়তা, দ্বিতীয়ত: জালিয়াতির পক্ষে সাফাই গাওয়া এবং তৃতীয়ত: চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরের তারিখে ইস্যুকৃত ভাউচারগুলো জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে সাড়ে ১১ কোটি টাকা বীমা দাবি বাড়িয়ে দেখানোর অপরাধ। গ্রাহকের হয়তো বীমা আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই কিন্তু বহু বছরের ‘অভিজ্ঞ’ দ্বিতীয় জরিপকারীরা বীমা আইন জানেন?  আইন জানলে কী, জুট টেক্সটাইল মিলের ঘটনায় কিভাবে এমন ভয়ংকর জালিয়াতির জরিপ প্রতিবেদন দিতে পারতো? নাকি বীমা আইন নয়, নিজেরদের মতো করে  জরিপ করে তারা?।

আর বিস্ময়কর সেই জালিয়াতির বৈধতা দিয়েছে খোদ বীমা উন্নয়ন ও নিয়্ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । এখানেই শেষ নয়, আইডিআরএ ন্যূনতম অনুসন্ধান না করেই, ভাউচার জালিয়াতদের করেছে পুরস্কৃত, আর লাইসেন্স বাতিলের মতো কঠিন শাস্তি ব্যবস্থা দিয়েছে বীমা কোম্পানি ও নিরাপরাধ প্রথম জরিপকারীদের বিরুদ্ধে। বীমাখাতের অভিভাবকের এমন পক্ষপাতিত্বমূলক বির্তকিত সিদ্ধান্তে নজিরবিহীন বলছেন বীমাখাত সংশ্লিষ্টরা।

(চলবে....)