মূখ্য নির্বাহীদের দৃষ্টিতে ২০১৯ সালের বীমাখাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালোই কেটেছে ২০১৯ সাল। বীমাখাতে আগামী দিনের একটা ভিত রচিত হয়েছে। সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাহস এবং শক্তি যোগাবে বছরটি। কিছু কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এ বছরেই। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যেমন মেলবন্ধন ঘটেছে তেমনি কিছু ঝুঁকি ও ব্যর্থতাও ছিলো। তারপরেও ব্যবসায়িক দিক দিয়ে সালটি বেশ ভালোই কেটেছে। ২০১৯ সালের এই অভিজ্ঞতার আলোকে ২০২০ সালে আরো এগিয়ে যাবে দেশের বীমাখাত- এমনটাই প্রত্যাশা মূখ্য নির্বাহীদের।

জামাল এম এ নাসের, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৯ সালেও আমরা ভালো ব্যবসা করেছি। তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে যখন আমরা রিপোর্ট দাখিল করব তখন প্রকৃত অবস্থা বলা যাবে। কিছু কিছু কোম্পানি বীমা দাবি পরিশোধ না করায় ব্যবসার মাঠে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে আমাদের কর্মীরা দক্ষ হওয়ায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই ব্যবসা সংগ্রহ করেছে। আশা করছি ২০২০ সালেও আমরা ভালো ব্যবসা করতে পারব।

আজিজুল ইসলাম তালুকদার, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

আমাদের ব্যবসা ২০১৯ সালে মোটামুটি ভালো হয়েছে। বলতে গেলে ২০১৮ সালের মতোই হয়েছে। তবে ২০১৯ সালের মোট হিসাব নিকাশ এখনো শেষ না হওয়ার কারণে পুরোপুরি তথ্য দেয়া যাচ্ছে না। তবে বলতে গেলে ব্যবসা ভালই হয়েছে। ২০২০ সালে আমাদের আরো ভালো ব্যবসা করার প্রত্যাশা রয়েছে।

একেএম শরীফুল ইসলাম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৯ সালটা ছিল আমাদের সংকট উত্তরণের বছর। এ বছর আমরা বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি পরিশোধ করেছি। এসবি ম্যাচুরিটির যে চাপ ছিল সেটা আমরা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। বছরটিতে আমাদের ব্যবসা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে নতুন নতুন ব্যবসাও আমাদের আসতে শুরু করেছে।

আমার মনে হয় বীমা খাতে ২০১৯ সালটা খারাপই গেছে। তবে আশা করছি ইনশাল্লাহ ২০২০ সালটা ভালো যাবে। এ বছরের জন্য আমাদের পরিকল্পনা অনেক ভালো। এগুলো কাজে লাগাতে পারলে আশা করি আমরা ভালো করব।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. শফিক শামিম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৯ সালে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- ২০১৮ সালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনার বীমা দাবি পরিশোধ করা। তবে আল্লাহর রহমতে আমরা খুব সফলভাবে সেটা পরিশোধ করেছি। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় এখন দু’জন বাকী আছে। তবে মার্চের আগে সেটাও পরিশোধ হয়ে যাবে। এরইমধ্যে ১২০ কোটি টাকার বেশি দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। এতো দ্রুত এতো টাকা পরিশোধ করা আমাদের একটি বড় সফলতা। আমি মনে করি বাংলাদেশে বীমা শিল্পের জন্যও এটি একটি বড় সফলতা। সবমিলিয়ে ২০১৯ সালে আমরা আগের বছরের তুলনায় ভালো করেছি।

নতুন বছর ২০২০ সালেও আমরা আরো ভালো করার প্রত্যাশা করছি। আমাদের এই ভালো করার মূল কারণ- আমরা নিয়ম মেনে চলি। তাছাড়া ১ আগস্ট থেকে ১৪.২৫ শতাংশ কমিশন দেয়ার যে নিয়ম করা হয়েছে সেটা আমাদের জন্য আরো ভালো হয়েছে। কমিশন একই হওয়া গ্রাহকরা আমাদের কাছে আসছে, আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে কমিশন ঠিক রাখতে এক কোম্পানির ব্যবসা আরেক কোম্পানি না নেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে আমরা নতুন ব্যবসায় যেতে পারছি না। আমরা মনে করি এর মেয়াদ শেষ হলে আমাদের ব্যবসা আরো বাড়বে এবং লোকজন আমাদের দিকে আসবে।

ফারজানা চৌধুরী, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স:

২০১৯ সাল আমাদের ভালোই কেটেছে। ৪১৫ কোটি টাকার বেশি প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ শতাংশের বেশি। গেলো বছর আমরা ১০ লাখের বেশি গ্রাহককে বীমা সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে নতুন গ্রাহক ছিল ৫৫ হাজারের বেশি। ২০১৯ সালে আমরা ১৬৮ কোটি টাকার বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করেছি। আমাদের বীমার আওতায় এসেছে দেশের ৩৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

আশা করছি ২০২০ সালও ভালো যাবে। গত কয়েক বছরে বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি পরিশোধ গ্রাহকদের মাঝে আস্থা তৈরি করছে। তাছাড়া এক কোম্পানির ব্যবসা আরেক কোম্পানি না নেয়ার বিষয়ে বিআইএ’র সিদ্ধান্ত আমাদের সবাইকে ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র খোঁজার সুযোগ তৈরি করেছে। কমপ্লায়েন্ট কমিটির কার্যক্রমসহ এ অবস্থা বছরখানিক চললে বীমা দাবি পরিশোধ বাড়বে এবং নতুন ব্যবসাও বৃদ্ধি পাবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এমএম মনিরুল আলম, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

আমি মনে করি ২০১৯ সালটি নিশ্চিতভাবে একটা ভালো বছর গেছে। সামাজিক বা রাজনৈতিক বা প্রাকৃতিক তেমন কোন দুর্যোগ ছিল না। এটা বীমা ব্যবসার জন্য একটি ভালো বছর ছিল। তবে ২০২০ সালে আরো অনেক ভালো ব্যবসা হবে, অনেক বেশি সফলতা আসবে।

গেলো বছর নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করায় আমরা অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এ কারণে বীমা কোম্পানিগুলোর মানসিক অবস্থা আরো শক্তিশালী হয়েছে। তাছাড়া ২০২০ সাল মুজিববর্ষ হওয়ায় আমরা মনে করি সরকার বীমা খাতে আরো নজর দিবে এবং যা বীমা খাতকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

এ কে এম সরোয়ার জাহান জামিল, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স: 

২০১৯ সালে তাদের কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কে বলেন বার্ষিক প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবসার লাভ লস ওইভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।তবে চলতি বছরের আগস্টের পর থেকে ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না।আগস্টের আগ পযন্ত মোটামুটি ব্যবসা ভালই ছিলো। তবে সব কিছুই বার্ষিক প্রতিবেদনের পর বলা যাবে।

এস এম নুরুজ্জামান, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, জেনিথ ইসলমী লাইফ ইন্স্যুরেন্স:

২০১৯ সালে আমাদের ব্যবসা ভালোই হয়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় বছরটিতে আমাদের গ্রুপ বীমা ব্যবসা ৭২.৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে আমরা প্রযুক্তির ওপর জোর দিচ্ছি।

২০২০ সালে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আইপিও (প্রাথমিক গণ প্রস্তাব)’তে নেয়ার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিদের্শনা মানার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।