বীমা দাবি পাচ্ছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকরা

আবদুর রহমান আবির: বিনিয়োগের ১৪শ’ কোটি টাকার হদিস নেই। এর মধ্যে এফডিআর থেকেই নেই ১১শ’ ৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকে রাখা নগদ ৭০ কোটি টাকাসহ মোট বিনিয়োগের খাত থেকে নেই ১৮০ কোটি টাকা। এই টাকা কোন খাতে কীভাবে খরচ করা হয়েছে, কীভাবে এত পরিমাণ টাকা বিভিন্ন খাত থেকে কমে গেল তার কোনো তথ্য নেই আর্থিক প্রতিবেদনে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিলে এমন চিত্র ২০১৬ থেকে ২০১৮ এই তিন বছরে। 

এমন অবস্থায় গ্রাহকরা মেয়াদ শেষে পাচ্ছে না তাদের বীমা দাবির টাকা। বছর ধরে ঘুরেও টাকা তুলতে হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা। এরইমধ্যে নিয়ন্ত্রণক সংস্থার কাছে অভিযোগও করেছে শত শত গ্রাহক।

এমনই একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. শেখ রহিম উল্লাহ। থাকেন সৌদি আরবের মদীনায়। জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তার প্রবাসে। জন্মস্থান চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের আবু তোরাব গ্রামে। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার স্বামী-স্ত্রীর সংসার। বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝড়িয়ে যা আসে তাই দিয়ে চলে তার সংসার। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচও আসে সেখান থেকেই।

একটু ভালো থাকার আশায় ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি বীমা করেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। যার পলিসি নং ১২০০০০৩৬১৬-৫। পনের বছর মেয়াদী এই বীমায় শেখ রহিম উল্লাহ বছরে বারো হাজার টাকার বেশি কিস্তি পরিশোধ করেছেন।

দু’দফায় ৫৫ হাজার টাকা করে এসবি পেয়েছেন তিনি। তৃতীয় আরেকটি এসবি পাওয়ার কথা ছিল। তবে তা পাননি। তার দাবি অনুসারে বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কাছে তার পাওনা রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। 

শেখ রহিম উল্লাহর বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু বিদেশে থাকায় কাগজপত্র সে সময় জমা দিতে পারেননি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরে বীমার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সকল কাগজপত্রসহ কোম্পানিটিতে আবেদন করেন।

এরপর কেটে গেছে আরো ছয় মাস। কিন্তু এখনো বীমার টাকা পাননি শেখ রহিম উল্লাহ। কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কাজ হয়নি। এক ডিপার্টমেন্টকে ফোন করলে আরেক ডিপার্টমেন্টকে দেখিয়ে দেয়া। সবশেষ অভিযোগ করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু বীমার টাকা হাতে পাননি এখনো।

শুধু শেখ রহিম উল্লাহ নন। এমন আরো অনেক বীমা গ্রাহক রয়েছেন যারা ফারইস্ট ইসলামী লাইফে ভোগান্তির শিকার। নাসরিন বেগম, নূর হোসেন, তাসলিমা বেগম, আবদুল মান্নান চৌধুরী, নাসরিন আক্তার, আবুল কালাম আজাদ, মহিউদ্দিন হাওলাদার, জলিল প্যাদা, ওবায়দুল ইসলাম, ইস্রাফিল ভুঁইয়া, সহিদুর রহমান, নাহিদ আহমেদ, পেয়ার আহমেদ, সমশের আলী, সালমা বেগম এর উদাহরণ মাত্র।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব গ্রাহকের মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা দাবি, পেইড আপ দাবি, সমর্পনসহ মৃত্যুদাবির টাকাও পরিশোধ করছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এমনকি একই গ্রাহকের মৃত্যুদাবির ক্ষেত্রে তিনটি বীমা পলিসির বিষয়ে দাবি নাকোচসহ তিন ধরণের সিদ্ধান্তি নিয়েছে বীমা কোম্পানিটি।

ময়মনসিংহের মৃত বীমা গ্রাহকের স্বামী ও পলিসির নমিনি আবদুল মান্নান চৌধুরী জানান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে তার স্ত্রীর নামে মোট ৫টি পলিসি ছিল। এরমধ্যে দু’টির মেয়াদোত্তর দাবি পরিশোধ করেছে। বাকী ৩টি পলিসি ( নং ৮১০০০১২৫৮৭-২, ০৯৮১০১৩৬৫০-৮, ০৯৮১০১৪৬৯২-৯) চালু অবস্থায় তার স্ত্রী মারা যান। এরমধ্যে একটির মৃত্যুদাবি পরিশোধ, আরেকটিতে জমা টাকা ফেরত এবং তৃতীয়টি নাকোচ করেছে বীমা কোম্পানি।

আবদুল মান্নান বলেন, প্রথম দু’টি পলিসির টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করায় পরবর্তীতে স্ত্রীর নামে আরো তিনটি পলিসি গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে একটি পলিসি করা হয় আমার স্ত্রী যখন কিছুটা অসুস্থ। তবে তার মেডিকেল রিপোর্ট জমা দিয়েই বীমা করা হয়েছে। এমনকি নিয়মিত প্রিমিয়ামও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর কোম্পানিটি বলছে এই পলিসি গ্রহণযোগ্য নয়।

আবদুল মান্নান আরো বলেন, যখন পলিসি করা হলো তখন মেডিকেল রিপোর্ট দেখে তারা পলিসি ইস্যু করেছে। আবার প্রিমিয়ামও জমা নিয়েছে। তখন সব কিছু ঠিক থাকলে এখন কেন বীমা দাবি পরিশোধ করবে না! এ কারণে ফারইস্টের চেয়ারম্যান, আইডিআরএ চেয়ারম্যান, আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসকের কাছেও আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব পাওনা পরিশোধ করেনি।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভোগান্তির শিকার আরেক মৃত বীমা গ্রাহকের স্বামী ও পলিসির নমিনি মোহাম্মদ ইস্রাফিল ভুঁইয়া। তিনি জানান, বীমা কোম্পানিটিতে তার স্ত্রীর একটি বীমা পলিসি রয়েছে, যার নম্বর ১২৯০০০০৩৮১। বীমা অংক ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিয়মিতভাবে ৩ বছর প্রিমিয়াম দেয়ার পর ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর মারা যান তার স্ত্রী।

এরপর ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি সকল কাগজপত্রসহ বীমা দাবির আবেদন করেন ফারইষ্ট ইসলামী লাইফে। কিন্তু আবেদনের কয়েক মাস পরেও বীমার টাকা পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি। কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। এ অবস্থা চলতি বছরের ১৫ জুলাই আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করেন ঢাকার এই বাসিন্দা।

ইস্রাফিল ভুঁইয়া বলেন, সবশেষ গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ থেকে দু’জন কর্মকর্তা এসে অডিট করে গেছেন। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য তারা সংগ্রহ করেছেন। এরপর আর কোন খোঁজ-খবর জানায়নি বীমা কোম্পানি। ছোট ছোট ৩ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখন আশায় বুক বেধে আছি টাকার জন্য। কিন্তু কবে পাবো সেই টাকা কে জানে।

চট্টগ্রামের প্রবাসী বীমা গ্রাহক শেখ রহিম উল্লাহ আরো বলেন, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরেছি। করোনাকালে ঘরে বসে কেটে যাচ্ছে জীবন। এভাবে দীর্ঘ দিন বসে খেয়ে এখন শূন্য হস্ত। কিন্তু টাকার ভীষণ প্রয়োজন। আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কারো কাছে হাত পাততে পারছি না। বীমা কোম্পানিও আমাকে হয়রানি করছে। খুব কষ্টে আছি। এখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। কবে যে পাবো বীমার টাকা, কে জানে!

বরিশালের বাসিন্দা নাসরিন বেগম ও সৈয়দ নূর হোসেন। দু’টি বীমা পলিসি কিনেছিলেন ফারইষ্ট ইসলামী লাইফে। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বরে একটি (পলিসি নং ০৯০৪০০২০৭৭) এবং ডিসেম্বরে আরেকটি (পলিসি নং ০৯০৪০০২২৩৫)’র মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বীমার টাকা হাতে পাননি তারা।

তিন ছেলেকে নিয়ে নাসরিন বেগম ও সৈয়দ নূর হোসেনের সংসার। একসময় ঠিকাদারী ব্যবসা দিয়ে সংসার চললেও এখন তা বন্ধ। ছেলেদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এই সময়ে বীমার টাকা পেলে অনেক উপকার হতো বলে কোম্পানির সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।

সৈয়দ নূর হোসেন বলেন, বারবার ঘুরেও বীমার টাকা তুলতে পারছি না। বড় কষ্টে জমানো টাকা এখন ফেরত পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছি। দিচ্ছে-দিবে করেই পার করছে সময়। মেয়াদ উত্তীর্ণের প্রায় বছর হয়ে এলেও টাকা হাতে পাচ্ছি না। সময় মতো টাকা না পেলে তাহলে বীমা করে কি লাভ? প্রশ্ন নূর হোসেনের।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভোগান্তির শিকার বরিশালের আরেক বীমা (পলিসি নং ০৪০০০১০৮৬২) গ্রাহক ফারজানা ইয়াসমিন। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ৯ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বীমা দাবির টাকা পাচ্ছেন না। তিনি জানান, বীমা কোম্পানিটির দেবো দেবো করছে, কিন্তু দিচ্ছে না। তবে আগে এ ধরণের কোন সমস্যা হয়নি। এখন সমস্যা হচ্ছে। দেশসেরা বীমা কোম্পানি এখন লেনদেন ভালো করছে না। আমাদের টাকাই আমাদের দিচ্ছে না। নির্দিষ্ট কোন তারিখও উল্লেখ করছে না। শুধু ঘুরাচ্ছে।

একই এলাকার আরেক বীমা গ্রাহক জানিয়েছেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের কর্মকর্তারা বলছেন সিরিয়াল আসলে টাকা পাবেন। তবে এ জন্য সময় লাগবে অনেক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেও তিনি কোন সমাধান পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা খুবই অসহায়। টাকা নেয়ার সময় কোম্পানির লোকজন ঘুর ঘুর করে। আর মেয়াদ শেষ হলে তাদের পাওয়া যায় না। টাকা দেয়ার নামে তালবাহানা করে।

২০১৮ সালে মেয়াদ পূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত বীমার টাকা পানিন ভুক্তভোগী আরেক বীমা (পলিসি নং ০৯২১০০০১১০) গ্রাহক রুমা আক্তার। সাভারের এই বাসিন্দা জানান, ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সকল কাগজপত্র জমা নিয়েছে কোম্পানির সাভার সার্ভিস সেন্টার। তিন মাস পর জানানো হয় যে, আমার নির্বাহী রশিদ ও যাবতীয় ডকুমেন্ট আশুলিয়া জোনাল অফিসে পাঠানা হয়েছে। এরপর এক বছর আমাকে ঘুরিয়ে কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন আমার কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী এই বীমা গ্রাহক বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে হতাশ হয়ে আমি বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ’র কাছেও অভিযোগ করেছি। যখন আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে গেলাম তখন আমাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখার পর একজন বললেন আগে কোম্পানির কাছে যান তারা কি বলে তারপর আবার এখানে আইসেন। অথচ কোম্পানি কিছু না করার কারণেই আমি তাদের কাছে গেছি। কিন্তু তারাও এখন পর্যন্ত কিছু করল না।

তহবিল থেকে হাওয়া ১৪শকোটি টাকা!

সূত্র মতে, লাইফ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে বছরে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়াম থেকে পুনর্বীমার প্রিমিয়াম বাদ দিয়ে নেট প্রিমিয়াম হিসাব করা হয়। এর সাথে যোগ করা হয় বিনিয়োগ থেকে আয়।  এটাই  কোম্পানির মোট আয়। এরপর সেখান থেকে কমিশন, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বেতন, প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতের খরচ তথা ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া হয় বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ খরচ।  যা মূলত মোট ব্যয়।  মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকে তাকে বলা হয় চলতি বছরের লাইফ ফান্ড।  চলতি বছরের লাইফ ফান্ড যোগ হয় বিগত বছরের লাইফ ফান্ডের সাথে। চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের এই টাকাই বিনিয়োগ করা হয় বা স্থায়ী সম্পদ কেনা হয়।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সর্বশেষ ৪ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া আয় ব্যয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোম্পানিটি (২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে) প্রিমিয়াম সংগহ ও বিনিয়োগ থেকে মোট আয় করে ৪ হাজার ৪শ’ ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।  আর ব্যবস্থাপনা খাতে ও বীমা দাবি পরিশোধ বাবদ মোট ব্যয় করে ৩ হাজার ৭৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত থাকে ৬শ' ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।  যা  চলতি বছরের লাইফ ফান্ড। এই হিসেবে কোম্পানিটির বিনিয়োগ বা সম্পদ বাড়ার কথা। অথচ আলোচ্য সময়ে আয় ও বিনিয়োগ থেকে কমে গেছে ১৪শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এফডিআর কমে গেছে ১১৬৮ কোটি, ব্যাংকের নগদ টাকা কমে গেছে ৭০ কোটি, মোট বিনিয়োগ কমে গেছে ১৮০ কোটি।

বছরেই এফডিআর নেই ১১৬৮ কোটি টাকার

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানিটির এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ছিল ১৫৭২ কোটি টাকা। যা পরের বছর ১৫২ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১৪২০ কোটি টাকা। এরপর আরো ২৯২ কোটি টাকা কমে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১১২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে এই স্থায়ী আমানত আরো ৭২৪ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৪০৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০১৫ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ ফান্ড ছিল ৩১৩০ কোটি টাকা। যা পরের বছর ৮৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২১৭ কোটি টাকা। এরপর আরো ১২৮ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩৪৫ কোটি টাকা। তবে ২০১৮ সালে কোম্পানিটির এই লাইফ ফান্ড ৬ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ৩৩৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে লাইফ ফান্ড বেড়েছে ২০৯ কোটি টাকা। অথচ আয় ব্যয় বাদ দিয়ে ৩ বছরে চলতি বছরের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৩০৮ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ কমেছে ১৮০ কোটি টাকা

২০১৫ সালে কোম্পানিটির মোট বিনিয়োগ ছিল ২৬শ’ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।  পরের বছর ২০১৬ সালে তা ৭০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় ২৬শ’ ২৩ কোটি টাকা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা আবার ১২৭ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭শ’ ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।  তবে ২০১৮ সালে এসে তা আবার ২শ’ ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কমে গিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫শ’ ১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। আর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের ব্যবধানে মোট বিনিয়োগ কমে ১৮০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহর সাথে। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে বলেন, বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বিষয়টি একটি বড় ইস্যু। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। বিষয়টি আমরাও দেখছি। বীমা আইন ২০১০ এর ধারা- ২৯ অনুসারে প্রতিবছরই স্পেশাল অডিট করতে হয়। তবে এখনো অডিট শুরু হয়নি। খুব শিগগিরই অডিট হবে। অডিটের রিপোর্টের আলোকে আমরা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

তিনি আরো বলেন, বেশ কিছু বীমা গ্রাহকের অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। এর আগেও কিছু অভিযোগ এসেছিল, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যাগুলো আমরা ভালো করে পর্যালোচনা করেছি এবং তার ওপর শুনানিও হয়েছে। তবে এখনো কোন অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি। সবশেষ গতকালও আমরা কোম্পানিটিকে চিঠি পাঠিয়েছি। ৭দিনের মধ্যে কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। তাদের জবাব পেলে সেটা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।