ফারইস্ট লাইফের জমি ক্রয়ের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে বিএফআইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’তে গত ২৪ জুন প্রকাশিত “সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকা” শীর্ষক সংবাদটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

চলতি বছরের জুলাই মাসে সংস্থাটি এ তদন্ত শুরু করে। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি মিরপুরের গোড়ান চটবাড়িতে জমি ক্রয়ের এই কার্যক্রমে মানিলন্ডারিং হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এ সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের জমি ক্রয়ে কোম্পানির তহবিল থেকে ২০০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না তা জানাতে বলা হয়েছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএকে ।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র ওই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জমি ক্রয়ে কোম্পানির তহবিল থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, মিরপুরের গোড়ান চটবাড়িতে ২০১৩ সালে সাড়ে ১৪ কোটি টাকায় ৭৬৩.৪৮ কাঠা জমি ক্রয় করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।

জমিটি ক্রয়ে প্রথমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এমপ্লোয়ীজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ এমপ্লোয়ীজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে ২টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি খোলা হয়। পরে সোসাইটিকে কোম্পানির গ্রাহকের তহবিল থেকে অবৈধভাবে ঋণ দেয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।

জমি কেনার পর ১৪ কোটি টাকার এ জমিতে বালু ফেলার খরচ দেখানো হয় ১৪২ কোটি টাকা। জমির দামের ১০ গুণের বেশি বালু ফেলার অবিশ্বাস্য খরচ দেখায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এখানেই শেষ নয়, জমির রেজিষ্ট্রেশন খরচ ২ কোটি টাকার জায়গায় বিবিধ খরচ দেখিয়েছে ৭৭ কোটি টাকা।

পরবর্তীতে কো-অপারেটিভের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের নামে সাফ কবলা রেজিষ্ট্রি নিয়ে আরও একশ’ কোটি টাকা কোম্পানি থেকে বের করে নিয়েছে। আর বিনিয়োগের নামে লাইফ ফান্ডের টাকা হাতিয়ে নিতে দফায় দফায় বোর্ড সভার মাইনটস বা রেজুলেশন জালিয়াতি, নগদে শত শত কোটি টাকা লেনদেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র অনুমতির তোয়াক্কা না করাসহ গুরুতর সব জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বীমা কোম্পানিটি।

ফারইস্টের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও বীমা কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ যোগসাজসে এই টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগটি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও অর্থমন্ত্রণালয়ে দায়ের করেন একজন শেয়ার হোল্ডার।

অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, জমি কেনার অভিনব কৌশল, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ঝামেলা এড়াতে জমি কিনতে রাতারাতি গঠন করা হয় সোসাইটি। আবার সেই সোসাইটির নামে কোম্পানির তহবিল থেকে ঋণ অনুমোদন করে কেনা হয় জমি।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরো তুলে ধরা হয়, জমি কেনা ও উন্নয়নের নামে ১৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও কৌশলে শত কোটি টাকা দাম বাড়িয়ে তহবিল আত্মাসাতের অভিযোগ তদন্ত করে আইডিআরএ। তবে অদৃশ্য কারণে দুর্নীতি ও অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি আইডিআরএ’র গঠিত তদন্ত দল।

বালু ফেলার অবিশ্বাস্য এই খরচকে ‘সামান্য বেশি’(!) বলে মন্তব্য করেছে আইডিআরএ’র তদন্ত দল। একই সাথে জমির উন্নয়ন দৃশ্যমান বলেও মন্তব্য করে আইডিআরএ’র তদন্ত দল। এছাড়া অভিযুক্তদের কোনো দোষও পায়নি বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত তদন্ত দল।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডিতে গত ২৪ জুন প্রকাশিত সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকাশীর্ষক সংবাদের বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন