মূখ্য নির্বাহী ছাড়াই চলছে সাউথ এশিয়া, সাড়ে ৩ বছরেও ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ

আবদুর রহমান আবির: আইন বলছে সর্বোচ্চ ৬ মাসের বেশি কোন বীমা কোম্পানি মূখ্য নির্বাহীর পদ শূন্য রাখতে পারবে না। কোন বীমা কোম্পানি এই আইন না মানলে সে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । আইনে এমন নির্দেশনা থাকার পরও সাড়ে ৩ বছর ধরে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগ দেয়নি সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি দীর্ঘদিন থেকে আইন লঙ্ঘন করে আসলেও সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ ।  

আইডিআরএ বলছে, ইতোমধ্যে বীমা কোম্পানিটিকে শোকজ করা হয়েছে এবং শুনানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সাড়ে তিন বছর পর কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে -এমন প্রশ্নের কোন জবাব পাওয়া যায়নি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।  তবে এ বিষয়ে সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।

বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি বীমা কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে আলাপ করে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি। আলাপকালে তারা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, কোন একটি কোম্পানি সাড়ে ৩ বছর ধরে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়নি -এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি কোন আস্থা থাকবে না। একইসাথে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইন না মানার এক ধরনের প্রবণতা সৃষ্টি করবে। যা বীমাখাতের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং আইনের সুশাসন বলে আর কিছু থাকবে না।

তারা আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিশেষ কোন সুবিধা লাভের আশায় কোন বীমা কোম্পানিকে আইন লঙ্ঘনের সুযোগ করে দিচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেননা বছরে পর বছর ধরে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ দেয়া হবে না, আর সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন কিছু বলবে না -এটা হতে পারে না।

সাড়ে তিন বছর পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলেও এটাকে অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া বলেও মন্তব্য করছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছে, এটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। তাদের মতে, এ সংক্রান্ত আইন অমান্য করায় আইডিআরএ যে পরিমাণ জরিমানা আরোপ করতে পারে তার অনেকগুণ বেশি আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী। তাই কয়েক বছর পর আইনগত ব্যবস্থা নিলেও তার প্রভাব পড়ে না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর। যা আইন না মানার প্রবণতা তৈরিতে সহায়তা করে।

অনুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্র অনুসারে, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বায়েজীদ মুজতবা সিদ্দিকী চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে ২০১৭ সালের ১ জুন কোম্পানিটি মূখ্য নির্বাহী শূন্য হয়। এই দিন থেকেই কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামসের হাসান মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। সামসের হাসান এ কোম্পানিতে যোগদান করেন এক মাস আগে  অর্থাৎ ওই বছরের ২ মে।

তবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭ সালের ১ জুন থেকে সামসের হাসানকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব দিলেও বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানায় ২৪ আগস্ট। অর্থাৎ প্রায় ৩ মাস পর। অথচ আইন অনুসারে কোন ব্যক্তিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব দিলে তা তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবগত করতে হয়।

সামসের হাসানকে চলতি দায়িত্ব পালনের অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ২৪ আগস্ট লেখা ওই চিঠিতে (সূত্র নং- এসএআই/এইচও-২০১৭/৩১৮) কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমাদের কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়ায় পদটি শূন্য হয়েছে। নিয়মিতভাবে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সামসের হাসানকে চলতি দায়িত্ব পালনের অনুমোদনের জন্য বিনয়ের সাথে অনুরোধ করছি।

এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে একটি চিঠি দেয়া হয় সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানকে। এই চিঠি দেয়া হয়, ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর (নথি নং- বীঃউঃনিঃকঃ/নন-লাইফ/২৩৪৬/২০১৩-২৩৩৪) । এতে বলা হয় ৩ মাস পর্যন্ত চলতি দায়িত্ব পালনে আইনগত বাধা নেই।

একইসাথে ওই চিঠিতে মূখ্য নির্বাহী পদে নিয়োগের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নিদের্শ দেয়া হয়। তবে এরপর আর কোন উদ্যোগ নেই আইডিআরএ’র। এমনকি ১ জুন থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সামসের হাসান নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবগত না করেই দায়িত্ব পালনের বিষয়েও কোন প্রশ্ন তোলেনি আইডিআরএ।

এছাড়া সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহীর বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে একটি অভিযোগও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অভিযোগটি দায়ের করেন ২০১৯ সালের ১২ জুন। সেখানে ৫টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। তবে সেই অভিযোগের বিষয়েও কোন ব্যবস্থা নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

এসব বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (আইন অনুবিভাগ এবং অতিরিক্ত দায়িত্বে নন-লাইফ অনুবিভাগ) মো. দলিল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনে তার ফোন ধরিয়ে দেন কর্তৃপক্ষের জুনিয়র অফিসার মোস্তফা আল মামুনকে। মামুন জানান, মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ না দেয়ায় কোম্পানিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাবও পাঠিয়েছে কোম্পানিটি। এখন শুনানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সামসের হাসানের সাথে। প্রশ্ন শোনার পর তিনি বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।