আইডিআরএ’র চাকরি প্রবিধানমালা চূড়ান্ত, শেষ হচ্ছে অস্থায়ীদের দিন

আবদুর রহমান আবির: পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদে কেবল উপ-সচিব ও যুগ্ম-সচিবদের নিয়োগের বিধান রেখে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র জন্য চাকরি প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত ১২ এপ্রিল ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২১’ নামে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

প্রবিধানমালাটি কর্তৃপক্ষের সকল সার্বক্ষণিক কর্মচারীর জন্য প্রযোজ্য হবে। সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হতে প্রেষণে নিয়োজিত অথবা চুক্তি বা খণ্ডকালীন ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এ বিধিমালা প্রযোজ্য হবে না। তবে এ বিধিমালার কোন কিছু প্রযোজ্য বলে কারো চাকরির শর্তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলে এটা প্রযোজ্য হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিধিমালার ফলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে আর কোন অস্থায়ী কর্মকর্তা রাখার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটিতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ারও একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দক্ষ কর্মচারীদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারে কর্তৃপক্ষ।

নতুন এই প্রবিধানমালা অনুসারে, তিনটি পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করতে পারবে আইডিআরএ। নিয়োগ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরাসরি নিয়োগ, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ এবং প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগ। সরাসরি বা পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক বাছাই কমিটি গঠন করতে পারবে।

প্রবিধানমালা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষে ১৩টি পদে কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। পদগুলো হলো- নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক, প্রোগ্রামার, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, স্টাফ অফিসার, নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটর, কর্মকর্তা, প্রোগ্রামার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের সহকারী, ডাটা এন্ট্রি বা কন্ট্রোল অপারেটর এবং ড্রাইভার।

কর্তৃপক্ষের এই ১৩ পদের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেবল সরকারের যুগ্ম সচিব এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরিচালক পদে অন্যূন ৫ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেবল সরকারের উপ-সচিব এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপ-পরিচালক পদে অন্যূন ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বাকী পদগুলোতে সরাসরি, পদোন্নতি ও প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে উপ-পরিচালক পদের বয়সসীমা ৪০ বছর এবং নিচের পদগুলোর ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রোগ্রামার, কম্পিউটার অপারেটর ও কন্ট্রোল অপারেটরের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার পার্সোনাল নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ কার্যকর হবে।

কর্তৃপক্ষে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে তিরস্কার, পদোন্নতি স্থগিত, জরিমানা ছাড়াও গুরু দণ্ডের ক্ষেত্রে নিম্ন পদ বা নিম্ন বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ, আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২১ -এ।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৮ মার্চ বীমা আইন ১৯৩৮ রহিত করে বীমা আইন ২০১০ প্রণয়ন করে সরকার। একই সাথে বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ জারির মাধ্যমে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হয় আইডিআরএ। তবে ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন হলেও সাংগঠনিক কাঠামোর আদেশ জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের জনবল আইনী সু্যোগ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে আত্তীকরণ হলে কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে এবং কর্তৃপক্ষকে সচল রাখার স্বার্থে অফিস সহায়কসহ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের অস্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়।

এছাড়া বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের সেট্রাল রেটিং কমিটির জনবলও অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয় কর্তৃপক্ষে। বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবহিতও করে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে অস্থায়ী ভিত্তিতে মোট ৫৭ জন কর্মকর্তা- কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে কর্তৃপক্ষে। আইডিআরএ গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সংস্থাটিতে একজনও স্থায়ী কর্মকর্তা নেই বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও মূখপাত্র এস এম শাকিল আখতার বলেন, কর্তৃপক্ষের কোন নিয়োগ বিধিমালা ছিল না বলে এতো দিন অস্থায়ী কর্মচারী দিয়েই চলছে। চাকরি বিধিমালা হওয়ায় এখন কর্তৃপক্ষে স্থায়ীভাবে কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে যারা এখানে কাজ করছেন, তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনামূলক ব্যবস্থা নেবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।