পদোন্নতি নয়, পদ ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছেন আইডিআরএ কর্মকর্তারা

আবদুর রহমান আবির: পদোন্নতি নয়, পদ ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র অস্থায়ী কর্মকর্তারা। এ লক্ষ্যে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খুব শিগগিরই পদায়ন বা আত্তীকরণ সম্ভব হচ্ছে না বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২২ আগস্ট কর্তৃপক্ষের ১৩৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২১’ অনুসারে, তিনটি পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করতে পারবে আইডিআরএ। নিয়োগ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরাসরি নিয়োগ, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ এবং প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিয়োগ। এ ক্ষেত্রে সরাসরি বা পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক বাছাই কমিটি গঠন করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও মূখপাত্র এস এম শাকিল আখতার ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’কে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের আত্তীকরণের অংশ হিসেবে এই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের ৬৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক এস এম শাকিল আখতার। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- কর্তৃপক্ষের পরিচালক মোহাম্মদ শফিউদ্দীন এবং নাজিয়া শিরিন। এ ছাড়াও কমিটির কাজে সহায়তা করছেন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, তানিয়া আফরিন এবং তাহমিনা আক্তার।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মপরিধি, কর্মদক্ষতা, কর্মঅভিজ্ঞতা প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে কমিটিকে। সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে তাদের সময় দেয়া হয়েছে ১৫ কর্মদিবস। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত পদ ব্যবহারের অনুমতি দেবে আইডিআরএ। তবে পদ ব্যবহারের অনুমতি পেলেও অস্থায়ী কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধাদির কোন পরিবর্তন হবে না।

তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালের ১৮ মার্চ বীমা আইন ১৯৩৮ রহিত করে বীমা আইন ২০১০ প্রণয়ন করে সরকার। একই সাথে বীমা অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ জারির মাধ্যমে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । তবে ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠন হলেও সাংগঠনিক কাঠামোর আদেশ জারি করা হয় ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের জনবল আইনী সু্যোগ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে আত্তীকরণ হলে কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে এবং কর্তৃপক্ষকে সচল রাখার স্বার্থে উচ্চ ডিগ্রিধারীদের নিয়োগের জন্য আহবান করা হয়। এরপর সাক্ষাৎকার নিয়ে অফিস সহায়কসহ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের অস্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ করা হয়।

পদ সৃষ্টির আদেশ প্রাপ্তির পূর্বে বীমা শিল্পের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে অস্থায়ীভাবে এসব জনবল নিয়োগ করে এবং বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে। এছাড়া বিলুপ্ত বীমা অধিদপ্তরের সেট্রাল রেটিং কমিটির জনবলও অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয় কর্তৃপক্ষে। বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ৫টি পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন মোট ৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সবশেষ গত ১২ এপ্রিল ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২১’ চূড়ান্ত করে সরকার। নতুন এই প্রবিধানমালায় কর্তৃপক্ষের ১৩টি পদে ১৫৫ জনকে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালক পদে কেবল উপ-সচিব ও যুগ্ম-সচিবদের নিয়োগ দেয়া যাবে। এরইমধ্যে ডাটা এন্ট্রি পদে নতুন করে ২০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। সব মিলিয়ে কর্তৃপক্ষের বর্তমান জনবল সংখ্যা ৮৩ বলে জানা গেছে।

কর্তৃপক্ষের একাধিক অস্থায়ী কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, বীমা খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী কর্মকর্তারাই বীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয় ও শাখা অফিস পরিদর্শন করে থাকেন। একইসঙ্গে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্বও করেন। এক্ষেত্রে নিম্ন পদে থেকে এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয় তাদের। দীর্ঘদিন ধরে তারা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও কর্মক্ষেত্রে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। খাতটির উন্নয়নের স্বার্থে তারা সরকারের প্রতি তাদের দ্রুত স্থায়ীকরণের আহবান জানিয়েছেন।