ক্ষুদ্রবীমায় অনলাইন সেবা চালু করতে হবে: শামসুল আলম

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রবীমার সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র বীমা ভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি। বিশেষ আয়োজনের এ পর্বে থাকছে ক্ষুদ্রবীমার ওপর মূখ্য নির্বাহীদের অভিমত। সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শামসুল আলম’র এই অভিমত নিয়েছেন আবদুর রহমান। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য অভিমতটি তুলে ধরা হলো:

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শামসুল আলম বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে বীমার আওতায় আনতেই মূলত ক্ষুদ্রবীমা চালু করা হয়েছে। শাফাত আহমেদ প্রথম ডেল্টা লাইফে ক্ষুদ্রবীমা চালু করেন। প্রথম দিকে মাসিক ভিত্তিতে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কিস্তি নেয়া হতো। বর্তমানে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় ক্ষুদ্রবীমার সর্বনিম্ন মাসিক কিস্তি হওয়া উচিত ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে দেশে ক্ষুদ্রবীমা ভালো সাড়া ফেলেছে। থার্ড জেনারেশনের বীমা কোম্পানিগুলোর অর্থের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছিল এই ক্ষুদ্রবীমা। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহক কমতে শুরু করে। কারণ, ক্ষুদ্রবীমা পলিসির মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পরও অনেক কোম্পানি গ্রাহককে ঠিকমতো পাওনা পরিশোধ করেনি। যারা পরিশোধ করেছে তাদের অনেকে কাঙ্খিত মুনাফা দিতে পারেনি। আবার দেখা গেছে, গ্রাহক কিস্তির টাকা জমা দিলেও এজেন্টরা তা কোম্পানিতে জমা দেয়নি। এসব কারণে বীমা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

শামসুল আলম আরো বলেন, ক্ষুদ্রবীমায় প্রথম দিকে গ্রাহককে লোন দেয়া হতো। কিন্তু যখন দেখা গেলো, গ্রাহক লোন নেয়ার পর আর কিস্তি ঠিকমতো পরিশোধ করছে না। পলিসি তামাদির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর এই সেবা বন্ধ করে দেয় কোম্পানিগুলো। তাছাড়া আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় কোম্পানিগুলো ক্ষুদ্রবীমায় ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। এতে বীমাকারিদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এসব কারণে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রবীমার বাজার কমে যাচ্ছে। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে বীমার আওতায় আনতে ক্ষুদ্রবীমার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে ক্ষুদ্রবীমার উন্নয়নের বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ক্ষুদ্রবীমায় অনলাইন সেবা চালু করতে হবে। অর্থাৎ কিস্তির টাকা জমা নেয়া থেকে শুরু করে সব ধরণের কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের আস্থা ফেরানো কঠিন। কিস্তির টাকা জমা দেয়ার সাথে সাথে যখন গ্রাহকের মোবাইলে মেসেজ যাবে বা ফিডব্যাক পাবে তখনই সে আশ্বস্ত হতে পারবে। এই খাতের উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষুদ্রবীমার জন্য আলাদা পদক্ষেপ নিতে হবে। এজেন্টদের কমিশন হার বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

মাঠকর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সানফ্লাওয়ার লাইফের এই সিইও আরো বলেন, সম্ভাবনাময় এই বীমা খাতে যোগ্যতাসম্পন্য অর্থাৎ দক্ষ ও শিক্ষিত জনগণকে নিয়োগ করতে হবে। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রবীমার সব ক্ষেত্রে মনিটরিং প্রয়োজন। আস্থার সংকটের কারণে বাংলাদেশের বীমা খাত পিছিয়ে আছে। এজন্য বীমা খাত নিয়ে পজিটিভ প্রচারণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ৪ শতাংশ উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, আমরা তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। বাংলাদেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান এক শতাংশের কম। তবে এই খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় সব কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বীমা। অন্যান্য দেশগুলো বীমা খাতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আমাদেরকেও সেভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রত্যান্ত অঞ্চলে বীমাকে ছুড়িয়ে দিতে হবে।

ক্ষুদ্রবীমার ওপর আন্তর্জাতিক কোন সেমিনার বা সম্মেলনে অংশ নেয়া হয়নি উল্লেখ করে সানফ্লাওয়ার লাইফের সিইও শামসুল আলম বলেন, দেশের বাইরে কোন প্রোগ্রামে যাওয়ার সুযোগ না হলেও ইন্টারনেটের সুবাদে তাদের উন্নত আইডিয়া ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা হয়। ক্ষুদ্রবীমার ওপর নিজের কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ বা একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পদ্মা লাইফে ক্ষুদ্রবীমা প্রকল্পে কাজ করায় ভাল ধারণা হয়েছে বলেও জানান শামসুল আলম।

ক্ষুদ্রবীমা নিয়ে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তারা গ্রাহককে ডাচ-বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিকাশের মাধ্যমে কিস্তির টাকা জমা দেয়ার সুবিধা দিচ্ছেন। যা বাংলাদেশে প্রথম। বর্তমানে একক বীমার গ্রাহকরা এ সুবিধা পেলেও আগামীতে ক্ষুদ্রবীমার গ্রাহকরাও পাবেন। কিস্তির টাকা জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা মোবাইলে মেসেজ পাচ্ছেন। যা তাদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে। ধীরে ধীরে বীমা ব্যাবসার পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।

প্রকাশের তারিখ- ১৩ জুলাই, ২০১৬