যেসব সমস্যার বেড়াজালে আবদ্ধ জীবন বীমা গ্রাহক

এ কে এম এহসানুল হক:

সম্প্রতি লেখক দেশের দূর-দূরান্ত থেকে টেলি যোগাযোগের মাধ্যমে এবং ইন্স্যুরেন্স কনসালটেন্ট বিডি'র প্রতিনিধি হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা পরিভ্রমণকালে বীমা গ্রাহকরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং ব্যাখ্যা এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রথমত: বীমা গ্রাহকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা হলো বীমা পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও বীমা গ্রহীতার টাকা পরিশোধ না করা। তাদের অভিযোগ, বীমা কোম্পানি এ ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান না করে দীর্ঘ সুত্রিতার আশ্রয় নিচ্ছে এবং নানা প্রকার তালবাহানা দেখিয়ে বছরের পর বছর তাদের সঞ্চয়কৃত টাকা পরিশোধ করছে না। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, যা বীমা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বীমার টাকা পরিশোধ করা বীমা কোম্পানির জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা ছাড়াও এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। বীমা কোম্পানি কোনভাবেই এ দায়িত্ব এড়াতে বা অস্বীকার করতে পারে না। বীমা কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেয়া প্রয়োজন। বীমা আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং দোষী বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান বা লাঘব করা সম্ভব হতে পারে।

দ্বিতীয়ত: মৃত্যুদাবি পরিশোধের বেলায় অভিযোগ উঠেছে যে, কিছু কিছু বীমা কোম্পানি নানা প্রকার অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে বীমা গ্রহীতার বৈধ দাবি নাকচ/ প্রত্যাখ্যান করছে বা করার অপপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

বীমা কোম্পানির এ ধরণের দায়িত্ব জ্ঞানহীন মনোভাব বা মনোবৃত্তির পিছনে একটি কারণ হচ্ছে, বীমা প্রস্তাবকারীর প্রস্তাবপত্রে সন্দেহজনক বা ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ ((Breach of Utmost Good Faith/ Misrepresentation) । এ সকল ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানির তাৎক্ষণিক দায়িত্ব হচ্ছে (সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য) প্রস্তাবপত্র যথাযথভাবে পরীক্ষা বা যাচাই করা। ঝুঁকি গ্রহণ এবং প্রিমিয়াম সংগ্রহ করার পর এই অভিযোগ তুলে দাবি প্রত্যাখানের কোন সুযোগ বা অবকাশ নাই।

তৃতীয়ত: কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেডিকেল রিপোর্টে অনিয়মের অভিযোগ এনে কতিপয় বীমা কোম্পানি দাবি প্রত্যাখানের অপকৌশল বেছে নিয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, সাধারণত বীমা কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগকৃত চিকিৎসক দ্বারা বীমা প্রস্তাবকারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রিপোর্ট প্রস্তুত করে তা সরাসরি বীমা কোম্পানির নিকট জমা দিয়ে থাকে, যেখানে বীমা প্রস্তাবকারীর কোন ভূমিকা থাকার কথা নয়। এক্ষেত্রে বীমা প্রস্তাবকারীর মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে খেলার ((Tampering with Medical Report) অভিযোগ শুধু অবান্তরই নয় বরং অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

সমগ্র দেশে অসংখ্য ভূক্তভোগী গ্রাহকের পক্ষে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বা বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)'র কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা এক প্রকার অসাধ্য এবং অবাস্তব ব্যাপার।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।