বিভিন্ন প্রকার বীমা বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা

এ কে এম এহসানুল হক:

বীমা জাতীয় অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। দেশের অর্থনীতিকে সবল ও সচল রাখতে সাহায্য করে বীমা। বাংলাদেশের জিডিপি’তে বীমার অবদান ১ শতাংশের কম। যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম।

এর অন্যতম কারণ, বীমা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতার অভাব, বীমা কোম্পানির ওপর জনগণের আস্থার অভাব, বীমাখাতে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি ইত্যাদি।

বীমাখাতে বিশেষ করে সাধারণ বীমাখাতে প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করতে হলে বিভিন্ন প্রকার বীমাকে বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। বর্তমানে বাধ্যতামূলক বীমার সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি।

বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অর্থনীতির আকার ও প্রয়োজনের তুলনায় বীমা কোম্পানির সংখ্যা অত্যাধিক। সীমিত বীমা বাজারে বীমা কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে প্রিমিয়াম প্রবৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না।

বর্তমান অবস্থার উত্তরণের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকার বীমা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

সমস্ত সরকারি ও আধা-সরকারি সম্পত্তি যেমন- সামুদ্রিক বন্দর, বিমান বন্দর, রাষ্ট্রায়িত কল-কারখানা, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, বিল্ডিং ইত্যাদি বাধ্যতামূলকভাবে বীমা করতে হবে।

গ্রাহক বা ক্রেতার স্বার্থ রক্ষার্থে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের বীমা যেমন-

১) তৃতীয়পক্ষ দায় বীমা (Third Party Liability Insurance),

২) পেশাগত দায় বীমা (Professional Indemnity Insurance),

৩) উৎপাদিত পণ্য দায় বীমা (Product Liability Insurance),

৪) চিকিৎসকদের অসাধু আচরণ সংক্রান্ত দায় বীমা (Medical Malpractice Insurance) ইত্যাদি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

উপর্যুক্ত বীমাগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

তৃতীয়পক্ষ দায় বীমা:

এই বীমা তৃতীয়পক্ষের শারীরিক অনিষ্টতা, মৃত্যু, সম্পত্তির ক্ষতির দায় বহন করে। নানা কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

পেশাগত দায় বীমা:

এই বীমা পেশাজীবী যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী প্রভৃতির কাজে অবহেলা, অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির কারণে গ্রাহকের ক্ষতির দায় বহন করে থাকে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ:

ক) ডাক্তারের ভুল প্রেসকিপশনের কারণে রোগীর শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যু।

খ) আইনজীবীর ভুল পরামর্শে মক্কেলের আর্থিক ক্ষতি সাধন।

গ) প্রকৌশলীর ভুল নকশার কারণে ভবন ধসে পড়া বা ভবনে চিড় ধরা ইত্যাদি।

উৎপাদিত পণ্যের দায় বীমা:

এই বীমা সাধারণত উৎপাদিত পণ্যের গুণগত বা মানগত তারতম্য বা নিকৃষ্টতা এবং ত্রুটির কারণে ক্রেতার শারীরিক ক্ষতি, মৃত্যু এবং সম্পদের ক্ষতির দায় বহন করে।

দৃষ্টান্তসরূপ:

ভেজাল বা ক্রুটিপূর্ণ খাবার গ্রহণে ক্রেতার স্বাস্থের ক্ষতি বা মৃত্যু ইত্যাদি।

আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে। এতে সাধারণ বীমাখাতে প্রিমিয়াম প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

লেখক: এ কে এম এহসানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রায় চার দশক দুবাইয়ে অবস্থানকালে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিভিন্ন বীমা কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।

এ সময় তিনি লন্ডন থেকে ফেলো অফ দি চাটার্ড ইন্স্যুরেন্স ইন্সটিটিউট (এফসিআইআই), এসোসিয়েটস অফ দি ইন্সটিটিউট অফ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (এআইআরএম) এবং এসোসিয়েট অফ দি চাটার্ড ইন্সটিটিউট অফ আরবিট্রেটরস (এসিআইআরবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইন্স্যুরেন্সের ওপর এ পর্যন্ত লেখকের অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশে এবং বিদেশে সমাদৃত। পেশায় লেখক একজন চাটার্ড ইন্স্যুরার। বর্তমানে তিনি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত।

ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি'র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে বীমার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন এ কে এম এহসানুল হক।